ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দিবে বলে বাড়ির জায়গা লিখে নেয় স্থানীয় এক সাবেক মেম্বার। পরে সেই জায়গা দখল করতে গেলে বাঁধা দেওয়ায় বৃদ্ধাকে মারধর করে ওই মেম্বার। বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দেয় বৃদ্ধা।
জানা যায়, উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামের মৃত কিতাব আলীর স্ত্রী খাইরুন্নেছা (৬০) তার দশ শতাংশ জায়গায় বসবাস করে আসছেন। তার বাড়ির পাশেই সাবেক মেম্বার সুরুজ মিয়া বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গাটি নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আঁটতে থাকে। একপর্যায়ে বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দিবে বলে জানায় মেম্বার সুরুজ মিয়া। আর এই দিকে সরকারি ঘর পাবে বলে খুবই খুশি খাইরুন্নেছা। এই সুযোগে সুরুজ মেম্বার তার কাছে জমির কাগজ, এনআইডি ও ছবি দেওয়ার কথা বলে। তখন সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় বৃদ্ধা সুরুজকে জমির কাগজ, এনআইডি ও ছবি দিয়ে দেয়। কাগজ পেয়ে সুরুজ মেম্বার তাকে ঘর দিবে বলে প্রতারণা করে ঈশ্বরগঞ্জ সাবরেজিস্টার অফিসে নিয়ে খাইরুন্নেছার বাড়ির দশ শতাংশ জায়গা লিখে নেয়। লিখে নেওয়ার পর সুরুজ মিয়া খাইরুন্নেছাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সরকারি ঘর পরে দিবে বলে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন যেতেই সুরুজ মিয়া এলাকার মানুষের কাছে বলাবলি শুরু করে খাইরুন্নেছার বাড়ি তিনি ক্রয় করেছেন। প্রতারণার বিষয়টি খাইরুন্নেছা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করে। এবং জায়গাতে দখল দিতে বাঁধা দেয়।
এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ হলে সুরুজ মেম্বারকে ২ শতাংশ জায়গা নিয়ে বাকি ৮ শতাংশ জায়গা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তে সুরুজ মেম্বার মেনে না নেওয়ায় সালিশ পন্ড হয়ে যায়। আর এই দিকে প্রতারক সুরুজ মেম্বার জায়গা দখল করতে বিভিন্ন পায়তারা শুরু করে। এরই জের ধরে গত শুক্রবার সকালে সুরুজ মিয়া তার দলবল নিয়ে বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গায় গাছ লাগাতে আসে। এসময় বৃদ্ধা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা গাছ লাগাতে বাঁধা দিলে তাদেরকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর শুর করে। এক পর্যায়ে সুরুজ মেম্বার বৃদ্ধা খাইরুন্নেছাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার মাথার চুলের মুঠোয় ধরে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ভাইয়ের পাঁচ মেয়ে সন্তানদের মারধর করে মেম্বারের লোকজন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধা ভাতিজী শাহানা আক্তার বাদি হয়ে সোমবার রাতে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী খাইরুন্নেছা বলেন, সুরুজ মেম্বার আমাকে সরকারি ঘর দিবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমার বসতবাড়ির ১০ শতাংশ জায়গাটুকু লিখে নেয়। যখন আমাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয় তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি এটা কিসের টাকা তখন সে বলে আমি তোমার বাড়ির সব জায়গা লিখে নিয়েছি আর তোমার জন্য সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করতেছি। তখন আমি বুঝতে পারছি সুরুজ মেম্বার ঘর দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে। তাই আমি আমার জায়গা ছাড়ি নাই। আমার থাকার একমাত্র সম্বল এই বাড়ি এখানেই আমার মরণ হবে। আর এই জায়গাটা নিয়ে সুরুজ মেম্বার আমার সাথে প্রতারণা করেছে এবং আমাকে ও আমার ভাতিজিদেরকে মারধর করেছে আমি এর বিচার চাই।
এদিকে সুরুজ মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা আমাদের ক্রয়কৃত জমিতে গাছ লাগাতে গিয়েছিলাম। আর এমন সময় তারা এসে বাঁধা দেয়। এসময় দু'পক্ষের মাঝে একটু হাতাহাতি হয়ে যায়।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ পীরজাদা শেখ মোহাম্মদ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।