শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার একটি ছিনতাই মামলার চার আসামি ও তার পরিবারকে মারধর এবং ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে রাখার ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপিকে) তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও সদ্য বদলি হওয়া পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়ে গত ৭ জুন আদেশে স্বাক্ষর করেন শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান।
রোববার আদালত পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে ওই আদেশের কপি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুরের আদালত পরিদর্শক মেজবাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ মোবাইল ফোনে বলেন, জাজিরাতে আসামিদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করে চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে আমলি আদালত থেকে একটি আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই আদেশের নথি বৃহস্পতিবার আমাদের কাছে পৌঁছায়। শুক্র-শনিবার বন্ধ থাকায় তা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠাতে পারিনি। আজ সকালে পাঠিয়েছি। ওই আদেশে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা করেন শাহিন আলম। ওই মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদার কান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে তিন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হন। জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল শেখ ও আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জে সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদার বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারীসহ ১০/১২ জন। সাদ্দাম তাদের জামিনের কাগজ দেখানো মাত্র ছিড়ে ফেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল। পরে সাদ্দাম ও বকুলকে লাথি, কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড়, লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে প্লাস দিয়ে হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হয়। এমন নির্যাতন চলে রাত ১টা থেকে পরের দিন ৩১ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত। পরে তার আত্মীয় স্বজনরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে পাঁচটি চেকে ৭২ লাখ টাকা দিলে নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় তারা।
গত ৬ জুন ভুক্তভোগীর বড় ভাই আবু জাফর ঠান্ডু জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার সাইফুল হকের সাক্ষরিত এক আদেশে পদ্মা থানার ওসিকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ আলম হাওলাদার জানান, গত ২৯ মে রাতে ওই চার জনকে গ্রেপ্তার করার পর ১ জুন দুপুরে তাদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা। ৪ জুন ওই চার আসামির জামিন ও রিমান্ড শুনানির দিন ছিল। ওই দিন তিনি এই চারজনকে গ্রেপ্তারের পর শারীরিক নির্যাতনের বিষয় আদালতের নজরে আনেন। আদালত তাদের চিকিৎসা দিয়ে মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শরীয়তপুর সিভিল সার্জনকে আদেশ দেন। পরে মেডিকেল প্রতিবেদনে আসামিদের নির্যাতনের সত্যতা পেয়ে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান আদালতে নথিভুক্ত করেন। এরপর তিনি ৭ জুন এ বিষয়ে আদেশ দেন।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ৪ জুন সিনিয়র আদালত থেকে চার আসামিকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখি তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও ফোলা। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ জুন মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে পাঠিয়ে দেই।