দেশের ১০ জেলায়
বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৬ লাখ মানুষ। মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে দুর্গত অনেক
এলাকায়। গত দুই দিনে ৪ জেলায় মারা গেছেন অন্তত ৮ জন। তবে কতজন নিখোঁজ হয়েছেন তা এখনোও
জানা যায়নি। তলিয়ে গেছে কয়েক লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি।
বৃহস্পতিবার
(২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম জানান,
আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কেবিনেট সভা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর
নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।
মৃতরা হলেন, নাঙ্গলকোট
পৌরসভার দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা শহরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫),
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪) এবং লাকসামে
পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়দের বরাত
দিয়ে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী জানান, বুধবার
রাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি সেতুর নিচে তলিয়ে যান নাঙ্গলকোটের দাউদপুর এলাকার
কেরামত আলী। প্রবল স্রোতে হারিয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিছুক্ষণ
পর ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে
নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বুধবার
(২১ আগস্ট) বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি
(১৫) নামে কুমিল্লা নগরের এক কিশোর মারা যায়। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক
যোবায়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বুধবার সকালে
চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক প্রবাসী
মারা যান। চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বিষয়টি
নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত সোমবার
বিকেলে সোহরাব হোসেন নামে এক আইনজীবী বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। কুমিল্লা
নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির
পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তিনি মারা যান। কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
টানা কয়েক দিনের
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া পানিতে
ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার
(২২ আগস্ট) তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- রামু উপজেলার সাচিং মারমা (২৬) ও আমজাদ হোছন
(২২)।
এদিকে ঈদগাঁও,
চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও
দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ।
রামু উপজেলার
গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া,
মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার
একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রামুতে ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের
মৃত্যু হয়েছে।
ঈঁদগাও উপজেলার
ইসলামাবাদ, পোকখালী ও ইসলামপুর এলাকার মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে মাছের
ঘের, গবাদিপশুর খামার।
কক্সবাজার জেলা
প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল
প্লাবিত হয়েছে। সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম ও শুকনো খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা
নারীর মৃত্যু হয়েছে।