৫ বছর পর আবার ওয়ানডে ফরম্যাটে এশিয়া কাপ। সেবার আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আসরে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। এই আসরে সর্বশেষ ৫ আয়োজনের মধ্যে তিনটিতেই ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। তাই অন্যতম ফেভারিট তকমা নিয়েই আজ মাঠে নামবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে। সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কারও আজ প্রথম ম্যাচ। দুই দলই বেশকিছু সমস্যায় জর্জরিত। ইনজুরি, অসুস্থতায় উভয় দলের কয়েকজন অপরিহার্য ক্রিকেটার নেই। এরপরও আজ জয়ের জন্যই মাঠে নামবে উভয় দল। কারণ গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচে পরাজয় সুপার ফোরে ওঠার রাস্তাটাকে কঠিন করে দেবে।
বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে ক্যান্ডির পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। ১০ বছর পর এই ভেন্যুতে ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে একমাত্র ওয়ানডে খেলতে নেমে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা। এবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার লক্ষ্যেই নামবে বাংলাদেশ। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে এই ম্যাচ দিয়েই দ্বিতীয় দফায় যাত্রা শুরু করছেন সাকিব আল হাসান।
এশিয়া কাপে সর্বশেষ গত বছর টি২০ ফরম্যাটের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা। সেদিক থেকে এবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পাচ্ছে তারা। অপরদিকে সর্বশেষ ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ যেহেতু ওয়ানডে ফরম্যাটে হয়েছে, সেদিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমান রানার্সআপ হিসেবেই নামবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার চেয়ে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে পাশাপাশি অবস্থান দুই দলের। টাইগারদের অবস্থান ৭ নম্বরে আর শ্রীলঙ্কা আছে ৮ নম্বরে। এ কারণে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস থাকছে। কয়েক বছর ধরে দুই দলের মধ্যে বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হয়েছে। সেই উত্তেজনা দুই দলের ক্রিকেটার থেকে বাইরে ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এ ম্যাচকে ঘিরেও থাকছে উত্তেজনা এবং উন্মাদনা।
তবে বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা অধীর হয়ে অপেক্ষায় আছেন এবার এশিয়া কাপে দল কেমন করে তা দেখার জন্য। কারণ দলে অনেকগুলো পরিবর্তন এসেছে। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে থাকা তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন এবং এশিয়া কাপেও খেলবেন না তিনি। অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলে ঠাঁই পাননি। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরী। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে দল লিটন কুমার দাসের অসুস্থতায়। জ্বর ভালো না হওয়ায় তিনি ছিটকে গেছেন এশিয়া কাপ থেকে। শেষ মুহূর্তে তাই সাড়ে ৯ মাস পর দলে যোগ হয়েছেন এনামুল হক বিজয়। এই দলটিতে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা ৫ ক্রিকেটার আছেন। সবমিলিয়ে দলটিকে নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বাংলাদেশ দলের হয়ে আজ কারা ওপেনিং করবেন এটিই বড় প্রশ্ন। দুই বাঁহাতি তানজিদ হাসান তামিম ও নাঈম শেখ আগে থেকেই আছেন দলে। এখন বিজয় যুক্ত হয়েছেন। সঙ্গে আরেকটি চিন্তা রয়েছে ৭ নম্বর পজিশন নিয়ে। সেখানে আফিফ হোসেন ধ্রুব, শেখ মেহেদি হাসান কিংবা শামীম হোসেন পাটোয়ারীর মধ্যে যেকোন একজন খেলবেন। আবার এমনও হতে পারে সাতে মেহেদি হাসান মিরাজ খেলবেন এবং আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে নামবে বাংলাদেশ। পাল্লেকেলেতে সাধারণত ব্যাটিং উইকেট থাকে। ৩-৬ নম্বর পজিশন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের জন্য নির্ধারিত। বোলিংয়ে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও শরীফুল ইসলাম থাকবেন।
মুস্তাফিজুর রহমান হাঁটুর সমস্যায় নাও খেলতে পারেন। তবে কম্বিনেশন বেশ শক্তই থাকছে দলের, শুধু কমেছে অভিজ্ঞতা। একই সমস্যায় রয়েছে লঙ্কানরা। তাদের অন্যতম সেরা লেগস্পিন অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ৩ পেসার লাহিরু কুমারা, দিলশান মাদুশঙ্কা ও দুশমন্ত চামিরা দলে নেই ইনজুরির কারণে। তাদেরকে ছাড়া কিছুটা দুর্বল হয়েছে লঙ্কানদের বোলিং আক্রমণ। তবে কাসুন রাজিথা, মাথিশা পাথিরানা, প্রমোদ মাদুশান, বিনুরা ফার্নান্দোকে নিয়ে পেস আক্রমণটা এখনো যথেষ্ট আকর্ষণীয় রয়েছে। এছাড়া স্পিন বিভাগে দুনিথ ভেল্লালাগে, মাহিশ থিকশানা ও লেগস্পিন অলরাউন্ডার দুশান হেমন্ত বাংলাদেশী ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পারে। ব্যাটিংয়েও সমস্যা আছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে আভিস্কা ফার্নান্দো নেই এবং দলে থাকলেও এখন পর্যন্ত ফিটনেস ফিরে পাননি কুসাল পেরেরা।
তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে বেশ চাপেই থাকবে লঙ্কানরা। ৫১ বার ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়ে মাত্র ৯ বার জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, ৪০ বার জিতেছে লঙ্কানরা। আর এশিয়া কাপেও ১৩ বারের মোকাবিলায় ২ জয় বাংলাদেশের, ১১ জয় লঙ্কানদের। তাই এগিয়েই আছে স্বাগতিকরা। তবে গত ৫ বছরে ১০ মোকাবিলায় ৪ জয় বাংলাদেশের, ৬টি শ্রীলঙ্কার। এটাই বড় অনুপ্রেরণা টাইগারদের।