কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় এবারও
অনুষ্ঠিত হবে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত। এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম জামাত। এবারও নিরাপত্তাব্যবস্থাকে
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হচ্ছে সব আয়োজন। শোলাকিয়ায় ঈদগাহে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের
প্রস্তুতি।
জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এবারের ঈদের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। আর নারীদের জন্য সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু দিয়ে বাইক চলা শুরু সকাল ৬টায়, মানতে হবে ৬টি নিয়ম
ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এবারও
নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন ঈদগাহ মাঠ।
এ আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না তারা। তাই সবকিছু খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরেজমিন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়াল রং করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার হয়েছে ওজুখানা ও টয়লেট। বিদ্যুতের লাইন টানা ও সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে শোভাবর্ধনের কাজও চলছে মাঠ ও শহরজুড়ে। সব মিলিয়ে ঈদের জামাত ঘিরে শোলাকিয়ায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু দিয়ে আড়াই ঘণ্টায় ৩ হাজার মোটরসাইকেল পার
জানা গেছে, নামাজের সময় প্রায় ১৪০০ পুলিশ,
পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, শতাধিক র্যাব সদস্য ছাড়াও আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)
ও আনসার সদস্যরা মাঠ ও মাঠের বাইরে মোতায়েন
থাকবেন। সাদা পোশাকে নজরদারি করবেস বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড,
তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি থাকবে, পুরো মাঠ
বেশ কয়েকবার মাইন ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে, ঢাকা থেকে বম্ব ডিসপোজাল টিম আসবে।
এ ছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের
ড্রোন ক্যামেরা। নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিরক্ত না হয়ে সবাইকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান
জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ
বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে এরই মধ্যে শহর ও মাঠকে সুন্দর করে সাজানো, মাঠকে নামাজের উপযোগী
করে তোলা, মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার
ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এক কথায় শোলাকিয়ায় আগত মুসল্লিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা
দেওয়া হবে পৌরসভার পক্ষ থেকে।
রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে ছোড়া
হয় বন্দুকের ছয়টি ফাঁকা গুলি। নামাজের পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং
এক মিনিট আগে একটি গুলি ছুঁড়ে নামাজ শুরুর সঙ্কেত দেওয়া হয়।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের
জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া
নামেই পরিচিত।