ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে শান্তি ফিরছেই না। ফের নতুন সংঘর্ষে উত্তাল রাজ্যটি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যটিতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বাবা ও ছেলেও আছেন। এ ছাড়া রাজ্যের বিষ্ণুপুর-চুরাচাদপুরে সীমান্ত এলাকায় হামলায় ১৬ জন আহত হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
এ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী ওই এলাকায় চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে একজন বিদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রাজ্যের রাজধানী ইম্ফালের দক্ষিণ ও পশ্চিম জেলায় কারফিউ জারি অব্যাহত থাকছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার ভোরে বিষ্ণুপুরের কোয়াটা জেলার গ্রামে নিরস্ত্র গ্রামবাসীর ওপর হামলায় এক বাবা ও ছেলে নিহত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা একটি শরণার্থী শিবিরে থাকতেন কিন্তু গত শুক্রবার তারা তাদের বাড়ি পাহারা দিতে আসছিলেন। গুলি করার পর তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়েও কোপানো হয়েছে।
আরও পড়ুন>> ভারতের হরিয়ানায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, নিহত ২
এই হামলার পরেই প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হয়। সশস্ত্র ব্যক্তিরা কোয়াটার পাশের দুই গ্রামে গুলি ছুড়ে, মর্টার শেল ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে দুইজন নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এ ছাড়া তেরাখংসাংবিতে হামলায় আরও একজন নিহত হন। আহত হয় তিনজন যাদের মধ্যে পুলিশের একজন কম্যান্ডও ছিলেন। পূর্ব ইম্ফালের সানাসাবি ও থামনাপোকপি গ্রাম অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হামলা চালিয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
একই জেলার লানগলে অজ্ঞাত জনতা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইম্ফালে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় হিন্দু মেইতেই জনগোষ্ঠীর। এদের অনেকেই বৈষ্ণব। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ তারাই। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করেন যেসব নাগা এবং কুকি উপজাতির মানুষ, তাদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান। এরকম ৩৩ টি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস রাজ্যের ৯০ শতাংশ পাহাড়ি অঞ্চলে।
গত কয়েক বছর ধরেই মেইতেইরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে তাদের তপশিলি উপজাতি (এসটি) হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করার জন্য। ভারতে যে সব সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে সমান সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে - তাদেরকে এসটি শ্রেণীভুক্ত করে তাদের জন্য সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আসন সংরক্ষণ করা হয়।
এরপর মে মাসে মণিপুর হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য উপজাতিগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় যে মেইতেইদেরকে এসটি মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। এর পরেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।