আজ ৮ অক্টোবর রবিবার ভারত উপমহাদেশের রাগ সঙ্গীতের কিংবদন্তি উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১৬১তম জন্মবার্ষিকী।
১৮৬২সালের উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তৎকালীন ত্রিপুরা প্রদেশের শিবপুর গ্রামে যা বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে বাবা সবদর হোসেন খাঁ এবং মা সুন্দরী বেগমের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। মায়ের নাম সুন্দরী বেগম। শিশুতোষ বয়স থেকেই সুরের প্রতি তার এক অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি হয়। সুরের প্রতি তার এতটাই মোহ ছিল এই সুরের জ্ঞান অর্জনে তিনি মাত্র দশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। কিশোর বয়সে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কলকাতার প্রখ্যাত সংগীত সাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের শিষ্যত্বে ৭ বছর সরগম সাধন করে যন্ত্রসংগীত সাধনায় নিযুক্ত হন। মূলত এরপর থেকেই তিনি ভারতে বসবাস শুরু করেন তিনি।
১৯৫৬ সালে ওস্তদ আলাউদ্দিন খাঁ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রাণকেন্দ্র পুরাতন জেল রোডের পাশে ৫০ শতক ভূমিতে গড়ে তুলেছিলেন সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর বেশী দিন এখানে থাকেনি। তিনি চলে যান ভারতের মাইহারে। এরপর তিনি নিজ জন্মভূমিতে আর ফিরে আসেননি। দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছরের পুরানো এই প্রতিষ্ঠানের সরকারী ভাবে কোন উন্নয়ন ও সম্প্রসারনের ছোঁয়া লাগেনি। এই সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানটি মূলত জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুরে এখনো রয়েছে তার মা-বাবার কবর। কবরটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়েছিল। তাদের কবরের সঙ্গে রয়েছে আলাউদ্দিন খাঁর এক বোনের কবরও। তাদের মৃত্যুর প্রায় দেড়শ বছর পর কবরটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। তার নামে গড়ে উঠেছে শিবপুর ওস্তাদ আলাউদ্দি খাঁ কলেজ। সেই কলেজে তার ইতিহাস সম্বলিত ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ নিজ অর্থে একটি পুকুর খনন করে এক পাড়ে একটি মসজিদ তৈরি করে গিয়েছিলেন। মসজিদটিও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে। তবে প্রখ্যাত এই ব্যক্তির স্মৃতিকে ধরে রাখতে তার জন্মভিটায় জাদুঘর এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইনস্টিটিউট করার দাবি স্থানীয়দের।
রাগসঙ্গীতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া এই সঙ্গীতজ্ঞ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি সংসদের সভাপতি রানা শামীম রতন বলেন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ মারা যাওয়ার পর এই স্থানটির করুণ পরিণতি ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় ম্যুরাল তৈরি ও কবরটি সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। আমার দাবি এখানে তার নামে স্মৃতি কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হোক। তার যাবতীয় জিনিস ভারতে সংরক্ষিত আছে। আমরা চাই সেইসব জিনিস ফিরিয়ে এনে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হোক।