মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ
নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়ের ফলে সুনীল অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা পরিচালনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন
হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সমুদ্রের প্রচলিত ও অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ নিয়ে
গবেষণা পরিচালনা করছে।
রোববার
রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘সুনীল অর্থনীতির সুফল অর্জনে সাসটেইনেবল
কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প’ শীর্ষক সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির
বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, সুনীল অর্থনীতির সুফল কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশও বিশ্বে তাক লাগাবে। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণসহ এ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশও বিপ্লব ঘটাবে। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ যেমন বিশ্বে প্রথম, সুনীল অর্থনীতি ব্যবহারেও দেশটি কাক্সিক্ষত অবস্থানে থাকবে।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
মন্ত্রী আরো
বলেন, সুনীল অর্থনীতি পরিকল্পনা বাস্তবায় ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণে ব্যাপক কাজ
করছি। ইতোমধ্যে এ সম্পদ আহরণ ও যথাযথ ব্যবহারে ‘সাসটেইবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের
আওতায় ব্যাপক হারে গবেষণা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সুনীল অর্থনীতির সুফল,
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশও বিশ্বে বিপ্লব ঘটাবে।
মন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধা সংবলিত গবেষণাগার স্থাপন করেছে।
মৎস্যবিজ্ঞানী ও গবেষকরা সুনীল অর্থনীতির যধাযথ ব্যবহার এবং সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ তথা ওয়েস্টার, কাঁকড়া, গ্রিন মাসেলস ও সিউইড নিয়ে গবেষণায় সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া সরকার বিলপ্ত হয়ে পড়া ৩২ প্রকার মাছ সফলতার সঙ্গে উৎপাদন করেছে। এসব দেশীয় মাছ চাহিদা অনুয়ায়ী ব্যাপক উৎপাদিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মানুষের পাশে দাঁড়ানোই হোক রাজনীতির ব্রত: শ ম রেজাউল করিম
তিনি বলেন,
উল্লিখিত প্রকল্পে কক্সবাজার চকোরিয়াভিত্তিক স্মার্ট চিংড়ি সিটি স্থাপনের লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান
প্রণয়ন করা হচ্ছে।
গোলটেবিল বৈঠকে
সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ
আহরণ এবং এ সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি।
প্রকল্প বাস্তায়ন
ও প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করেন ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের’ উপ-প্রকল্প পরিচালক মনিষ মণ্ডল।
মনিষ মণ্ডল তার উপস্থাপনায় বলেন, প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ২২টি সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করা হয়েছে। উপকূলীয় ৪৫টি উপজেলায় চিহিৃত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হতে ক্যাচ অ্যান্ড ইফোর্ট উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আর্টিস্যানাল মৎস্য নৌযানে ৮২৫০টি জিএসএম ডিভাইস সংযোজন করা হয়েছে। ১৫০০টি এআইএস সংযোজন চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এছাড়া এমসিএস নিশ্চিতকরণে মৎস্যজীবী ডাটাবেইজ হালনাগাদ করে ১৫ লাখ মৎস্যজীবীকে আইডি কার্ড এবং ১০ হাজার স্মার্ট আইডি কার্ড প্রদান করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টেনে নিতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী
তিনি আরো বলেন,
প্রকল্পের আওতায় ‘মেরিন ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ৩০০টি চিংড়ি ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের
আওতায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৭৮২৬ জন খামারিকে ৯৯.৭০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।
৫২৪৯৩টি মৎস্যজীবী পরিবার সমন্বয়ে ৪৫টি মৎস্যজীবী গ্রাম সংগঠিত করা হয়েছে। গ্রামপ্রতি
৩৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ১৭টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পুনর্বাসন
ও একটি বাগদা চিংড়ির ব্রুড ম্যানেজমেন্ট সেন্টার নির্মাণ করা হবে। কক্সবাজার চকোরিয়া
উপজেলায় সরকারি চিংড়ি এস্টেটে সর্বোচ্চ সহনশীল ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ৩৫১.২৫ কোটি টাকা
ব্যয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় চকোরিয়াভিত্তিক
স্মার্ট চিংড়ি সিটি স্থাপনের লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এছাড়া বৈঠকে
মূল আলোচনা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম,
পরিকল্পনা ও জরিপ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
(পরিকল্পনা ও জরিপ) সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর।
মঞ্চে অতিথি
হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।
বৈঠকে যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, বিটিভির সিনিয়র সাংবাদিক
জাহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া গোলটেবিল
বৈঠকে বিভিন্ন পত্রিকা টেলিভিশনের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকরা
সুনীল অর্থনীতির যথাযথ ব্যবহার, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং গবেষণা বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের
দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান।