কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:
দেশের স্বনামধন্য ঔষধ কোম্পানি জেসন গ্রুপের
চেয়ারম্যান, আহছানিয়া মিশনের দীর্ঘদিনের কর্মকর্তা, দানবীর ও সমাজ বিনির্মাণে আলোকবর্তিকা
মুহাম্মদ সেলিম উল্লাহ ১৯৩৭ সালের ৭ এপ্রিল বর্তমান ভারতের কলকাতায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম
পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ তিন পুরুষ পর্যন্ত ছিলেন সে সময়ের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী।
কলকাতায় লেখাপড়া শেষে লন্ডন ও আমেরিকায় যান উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে। এরপর পিতার ব্যবসার
সুবাদে স্বাধীনতার বহু পূর্বেই তিনি পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ ঢাকায় আসেন এবং ঢাকার মোহাম্মদপুর
লাল মসজিদের পশ্চিমে কৃষ্ণচূড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
সত্ত্বর এর দশকে তিনি সাতক্ষীরার নলতায় ওলিকুল শিরোমণি মুর্শিদ মাওলা হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)’র সন্ধান পান এবং পীরকেবলার মুরিদ হয়ে তার আদর্শের ছাঁয়াতলে আসেন। তারপর থেকেই তিনি ঐ পরশ পাথরের ছোঁয়ায় চলতে থাকেন মানবত্বের সেই আলোকচ্ছটার পথে। আহ্ছানউল্লার আদর্শের পরশে সেই মুহাম্মদ সেলিমউল্লাহ আজ আলোকবর্তিকা মানবে পরিণত।
আরও পড়ুন: ঝিনাইগাতীতে কলাগাছে কৃষকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের
সহকারী পরিচালক, শিক্ষা সংস্কারক ও সাহিত্যিক খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) বহুমুখী
কর্মময় একজন মানুষ ছিলেন। তবে তিনি মুলত শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে, শিক্ষা নীতি
প্রণয়ন করে, দেশে-বিদেশে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে, শিক্ষার বিস্তার ও
শিক্ষার আলো ছড়িয়ে তিনি যেমন নিজে আলোকিত-সুরভীত- সুশোভিত হয়েছেন, তেমনি এই শিক্ষা
ব্যবস্থার জ্যোতির্ময় আলোয় এই সমাজ ও দেশকে তিনি আলোকিত করেছেন। যে সুরভিত সৌরভ
ও আলোকচ্ছটা এ বিশ্বের বুকে অনন্তকাল বহমান।
মুর্শিদ মাওলার সেই জ্যোতির্ময় আলোকিত
পথে হেঁটেছেন তার আদর্শের পেয়ারে মানুষ মু: সেলিমউল্লাহ। তিনিও একইভাবে এ সমাজের মানুষের
জন্য কাজ করেছেন। ঢাকা থেকে শুরু করে সাতক্ষীরার এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুস্থদের জন্য,
অসহায়ের জন্য, গৃহহারা মানুষের জন্য, অসুস্থ নিরুপায়ের জন্য, বস্ত্রহীনের জন্য এবং
হাজারও অভুক্তের জন্য তিনি হয়েছেন পথের দিশা এবং নিরবে-নিভৃতে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন
অনায়াসে। আহছানিয়া মিশনের দায়িত্বে থেকে তিনি নিরলস সেবা করে চলেছেন প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ।
যা এখনো চলমান।
পরিশেষে মুর্শিদ মাওলার উত্তরসূরি বা আদর্শের
ধারক হিসাবে সেই দেখানো আলোকময় পথ অর্থাৎ শিক্ষা ব্যবস্থার পথ ধরেই এগিয়েছেন মহামানব
মু: সেলিমউল্লাহ। খানবাহাদুর আহছানউল্লা (র.)’র আদর্শে- মানব
গঠন, সমাজ গঠন সর্বোপরি দেশগঠনে যাতে অনন্তকাল বাতিঘর হিসাবে কাজ করতে পারে সেজন্য
তিনি পরিশেষে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আত্মনিয়োগ করেন বলেও জানা যায়। তার ইচ্ছার প্রতিফলন
হিসাবে ইতিপূর্বেই আহ্ছানিয়া সেলিমউল্লাহ ক্যাডেট স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
আত্মপ্রকাশ হয়েছে। যার সূদুরপ্রসারী ভাবনা ও কার্যক্রম পীরকেবলার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন
পদ্ধতি পরিলক্ষিত ও বাস্তবায়িত হবে বলেও জানান তিনি। মহামানব সেলিমউল্লাহ’র এ পথচলাকে সাধুবাদ
জানিয়ে সেটি বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সুগঠিত একদল পরিচালনা
পরিষদের কর্মীবৃন্দ, উপদেষ্টা মণ্ডলী ও শিক্ষকবৃন্দ।
তার শেষ ইচ্ছার প্রতিফলন শেষ না হতেই সমাজ
বিনির্মাণে ও মানব কল্যাণে আলোকবর্তিকা মানব মু: সেলিমউল্লাহ’র কর্মময় জীবনের
ইতি হল। শনিবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি বেসরকারি
হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা
মাজারের পাশে সোমবার বাদ জোহর তাকে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে মিশন
সদস্যবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার
মানুষ শোক জানায়।