সখের বসে বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেছিলেন বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা । আর বছর পাঁচেক যেতেই মুকুল ধরে সেই গাছে। এর পরে ভালো ফলন পেয়ে বিক্রি শুরু করেন তিনি। তবে সখের বাগানই তাকে বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখায়। এরপর ৬ একর জমিতে প্রভৃতি আমের চারা রোপন করেন স্বপ্নবাজ খামারী। এখন বছরে তার আম বিক্রি হয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে সফল খামারী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।
দেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউপির মুসুল্লিয়াবাদ গ্রামের বাসীন্দা জাহাঙ্গীর মুসুল্লী। তিনি লবনাক্ত জমিতে দেশী-বিদেশি জাতের আম বাগান করে সাড়া ফেলেছেন গোটা এলাকায়। ২০০৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাবলীগ জামাতে গিয়ে পরিচয় হয় এক আম বাগান মালিকের সাথে। দীর্ঘ আলাপচারিতায় ওই মালিকের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠায় তিনি নিজ বাড়িতে আমের চারা রোপণের ইচ্ছা পোষণ করেন। আর সেখান থেকেই চারা সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনায় রোপন করেন প্রভৃতি আমের গাছ। এরপরে ২০১০ সালে তার গাছে প্রথম আমের ফলন হলে পাল্টে যায় ধর্মভীরু জাহাঙ্গীরের পথচলা। ভালো দামে আম বিক্রি শুরু হলে নতুন করে ৬ একর জমিতে আম চাষ শুরু করেন তিনি। ২০১৫ সালে বাণিজ্যিক সেই খামার থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি করেন। বর্তমানে তার বাগানে ফজলি, হিমসাগর, আম্রপালি, বাড়িফোর, লোকনা, ব্যানানা, কাটিমন, হাড়িভাঙ্গা, কিউজাই, সূর্যডিম, ফোরকেজি, বোম্বাই, মিশ্রিকান্ড, গোপালভোগসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ রয়েছে। আর এসব গাছে এখন ঝুলে আছে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সারি সারি আমের থোকা। তার বাগানে প্রবেশ করলেই পাকা আমের সুগন্ধ যেন জিভে জল এন দেয়ার মত। আর সম্পূর্ণ বিষমুক্ত এ বাগানের ফল কিনতে ক্রেতাদের চাহিদাও রয়েছে বেশ ভালো। ফলে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি উৎপাদিত এসব আম রপ্তানি করা হচ্ছে বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
এই চাষির বাগানে কেবল আমই নয়, পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, লিচু, লেবু, কাঁঠাল, কলাগাছও রোপন করেছেন তিনি। একই সাথে ৭৫টি ভেড়া ও ১২টি গরুও পালন করেন এই খামারে। যা পালনে বছরে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন হয় তার।
সফল চাষী জাহাঙ্গীর মুসুল্লী বলেন, এবছর তার বাগানের ৫’শ গাছ থেকে ৩’শ মন আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তিনি। আবহাওয়া অনকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে তেমন ধকল পোহাতে হয়নি তার। তিনি বলেন, সখের বসে আমের চারা রোপন করলেও এখন তিনি বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করছেন। দুটি বাগান থেকে এখন বছরে তার আয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। তাই উপকূলীয় এলাকায় অনাবাদী জমিতে কৃষকদের আম চাষে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, কলাপাড়া উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেন চাষিরা। আর বাগানের সংখ্যা রয়েছে ৩ শত। তবে সব চেয়ে বড় খামারি কুয়াকাটার জাহাঙ্গীর মুসুল্লী। তার সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ থেকে আম চাষে উদ্যোগী হতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সার, বীজ, চারা দেয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এবছর এই উপজেলায় কৃষকরা প্রায় দুই কোটি টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন। কারণ ফলন খুবই ভালো হয়েছে।