টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ
খান হত্যা মামলার নির্ধারিত পঞ্চম দফায় প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের বিচারিক কার্যক্রম
চলছে। রবিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক
মো. ইসমাঈলের আদালতে ২০তম সাক্ষী বেবি বেগমের অসমাপ্ত জেরার মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম
শুরু হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক
প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২০তম সাক্ষী বেবি
বেগমের সাক্ষীর মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া আজ ১০ জন সাক্ষীকে আদালতে
উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এরআগে, বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া
১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাঈলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ
শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ২৮-২৯ সেপ্টেম্বর এ দুই দিনে ছেনুয়ারা বেগম, আলী আহমদ,
হাম জালাল, ফরিদুল মোস্তফা, সালেহ আহমদ ও বেবি বেগম সাক্ষী ছিলেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত
চতুর্থ দফায় এ মামলায় ২০ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। এরআগে, ২০, ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর
তিন দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর
দিন ধার্য করেছিলেন।
তৃতীয় ধাপের প্রথম দিন সাক্ষ্য দেন আব্দুল
হামিদ, মোহাম্মদ ফিরোজ ও শওকত আলী নামে তিন জন। দ্বিতীয় দিন সাক্ষ্য দেন মারিশবনিয়া
মসজিদের ইমাম হাফেজ জহিরুল ইসলাম ও ডা. রণবীর দেবনাথ। তাদেরকে ১৫ জন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা
জেরা করেন।
এর আগে দ্বিতীয় ধাপের চার দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ
শেষ হয় গত ৮ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় ধাপের চতুর্থ দিনে সাক্ষ্য দেন ৬ নম্বর সাক্ষী শামলাপুর
বায়তুর নুর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ
মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো.
রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে
ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত
নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে
পাঠায় পুলিশ। এই দু'জন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়,
একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার
বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ
৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা
তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার
দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫
কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯
সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন- বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী,
কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন,
আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের
(এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের
বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো.
নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।