সিলেট থেকে মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন:
সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার মানুষ গ্যাস সংকটে ভুগছেন। এ সকল এলাকার গ্রাহকদের অভিযোগ ভোর, সকাল কিংবা দুপুরবেলা গ্যাস সংকট দেখা দেয়। রান্না-বান্নার কাজ শুরু করতে যাওয়া মাত্র গ্যাসের লুকোচুরি শুরু হয়ে যায়। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে তাদের ভাষ্য। তবে এ অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
গত একমাস ধরে সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভোর থেকে সকাল এগারোটা পর্যন্ত আবার কোথাও সকাল এগারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত এই সমস্যা স্থায়ী থাকছে। বিকেলে পর অবশ্য যথারীতি পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় যারা ভোর কিংবা দুপুরবেলা রান্নাঘরে যান, তাদের রান্নার কাজ করতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে এ সমস্যায় বেশি পড়তে হচ্ছে দরগা মহল্লা ঝর্ণারপার, দর্শনদেউড়ী এলাকার বাসিন্দাদের।
দর্শনদেউড়ী এলাকার গৃহিনী সাদিয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন, পরিবারের প্রয়োজনে ভোর থেকে তাদের রান্নার কাজ করতে হয়। কিন্তু তখন গ্যাসের চুলায় আগুন পাওয়া যায়না, কখনো পাওয়া গেলেও জ্বলছে নিভু নিভু করে। এতে রান্না করা কঠিন হয়ে পড়ে। ঝরনার পার পায়রা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রনি আক্তার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এই সমস্যায় ভুগছি। কবে যে মুক্তি পাবো জানি না। গ্যাস সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন শুধু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাসের চাপ এতটাই কম থাকে যে সামান্য পরিমাণ চা বানাতেও ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়। একই এলাকার সৈয়দা সালামা সুলতানা ও সালমা বেগম জানান, একই সমস্যায় ভুগছেন তারা। তবে সবসময় নয়। মাঝে মধ্যে দুপুরের দিকে রান্নার ব্যস্ত সময়ে প্রয়োজনীয় গ্যাস পাওয়া যায়না। ওই এলাকার সাব্বির আহমদ ও জুবের আহমদ অভিযোগ করে বলেন, বিষয়টি কয়েক দফায় কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, কিন্তু গুরুত্ব দেয়া হচ্ছেনা। ফলে সমস্যা দিনদিন প্রকট হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে জালালাবাদ গ্যাসের প্রকৌশলী মো. মনজুর আহমদ চৌধুরী জানান, ‘এ ধরণের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এটা গ্যাসের সমস্যা নয়, পাইপ লাইনের সমস্যা। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী যদি নির্দিষ্টভাবে সীমানা উল্লেখ করে আবেদন করেন, তাহলে আমরা সমাধান করে দেবো।’
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট গ্যাস মজুতের পরিমাণ ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এরমধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ ৩০ টিসিএফ। এখন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫৩ টিসিএফ। অবশিষ্ট আছে ১১ দশমিক ৫২ টিসিএফ। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এখন প্রতি বছর গড়ে এক টিসিএফ করে গ্যাস উত্তোলন হয়ে থাকে। অর্থাৎ অবশিষ্ট মজুদে আর ১০ বছর মতো চলবে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে প্রতি বছরই গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা কমে আসবে। এতে করে শেষের বছরগুলাতে সংকট আরও প্রকট হবে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে আসলে আনুপাতিক হারে আমদানি বাড়াতে হবে।
জানা গেছে বাপেক্স-এর ৮টি গ্যাস ক্ষেত্রের মোট মজুত ১ দশমিক ৪৬ টিসিএফ থেকে ৪৭৩ বিসিএফ তোলা হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে ৯৮৭ বিসিএফ। বাপেক্সের সিলেট অঞ্চলের খনিগুলোর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২৯ বিসিএফ মজুতের ১৬২ তোলা হয়েছে মজুত রয়েছে ১৬৬ বিসিএফ। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির মোট মজুত ১২ দশমিক ২৫২ টিসিএফ, এরমধ্যে তোলা হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬৮ টিসিএফ। বাকি রয়েছে ৩ দশমিক ৪৮৪ টিসিএফ। সিলেটের খনিগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জে দুই দশমিক ৭৮৭ টিসিএফ মধ্যে ২ দশমিক ৫৮৮ টিসিএফ তোলা হয়েছে। বাকি রয়েছে ১৯২ বিসিএফ।
শেভরন বাংলাদেশের তিন ক্ষেত্রের মোট মজুত ৯ দশমিক ৭৪২ টিসিএফ। উত্তোলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৪৫৩ টিসিএফ। বাকি রয়েছে ৩ দশমিক ২৮৯ টিসিএফ। শেভরনের বিবিয়ানাতে এখনও ২ টিসিএফ এর একটু বেশি, মৌলভীবাজারে ১৫৮ বিসিএফ এবং জালালাবাদে এক দশমিক ২৬ টিসিএফ মজুত অবশিষ্ট রয়েছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মোট মজুতের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩৩ টিসিএফ এরমধ্যে এক ১ দশমিক ৭৮৪ টিসিএফ তোলা হয়েছে। এখানের ৫টি খনিতে এখনও মজুত রয়েছে ৫ দশমিক ২৪৯ টিসিএফ। এখানের পাঁচটি খনি হচ্ছে কৈলাসটিলা, সিলেট, রশিদপুর, ছাতক এবং বিয়ানীবাজার।