বগুড়ায় চলতি মৌসুমে প্রায় তিন কোটি টাকার
৬২ মেট্রিকটন মধু উৎপাদন হয়েছে। তবে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল আড়াই কোটি টাকা মূলের
৬০ মেট্রিকটন মধু উৎপাদনের। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বগুড়া
বেসরকারিভাবে এই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি
রবি মৌসুমে সরিষা থেকে প্রায় এক কোটি টাকার ৩০ মেট্রিকটন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ
করেছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন
(বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারিভাবে মধু
উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও কয়েক বছর তা বন্ধ আছে। এরপরেও বিসিক বগুড়া নানাভাবে মধু উৎপাদন
ও বাজারজাতকরণে উদ্যোক্তদের সহযোগিতা করে আসছে।
এরমধ্যে অন্যতম হলো সরিষা থেকে সংগৃহীত
মধু। এছাড়া লিচু ও কালোজিরা থেকেও মধু সংগ্রহ করবেন মৌমাছি প্রতিপালনকারী উদ্যোক্তরা।
বিসিক সূত্রে আরও জানা গেছে, সরিষা ফুলে
উৎপাদিত মধুর কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, লিচুর মধু ৫০০ এবং কালোজিরা থেকে উৎপাদিত মধু
বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি মধুর গড় দাম ৪শ’ টাকা ধরলে বগুড়ায়
এ মৌসুমে উৎপাদিত মধুর মূল্য দাঁড়ায় দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া
সূত্র বলছে, গত বছর রবি শস্য চাষ মৌসুমে সরিষার ফুল থেকে সাড়ে ১৭ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন
হয়। আর চলতি মৌসুমে প্রায় এক কোটি টাকার ৩০ মেট্রিকটন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে
কৃষি বিভাগ।
মোট ১৪২ জন উদ্যোক্ততা বগুড়ার মাঠে থাকা
সরিষার জমি থেকে মধু সংগ্রহে তাদের প্রতিপালিত মৌমাছি নিয়ে কাজ করছেন।
মধু উৎপাদনকারী উদ্যোক্তরা বলছেন, সরিষা
চাষ মৌসুমে প্রতিটি বাক্স থেকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে
আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জ্বল থাকতে হয়। আগাম ও নাবী সরিষা চাষের ফলে প্রায় তিন মাস শুধু সরিষার
ফুল থেকে সর্বাধিক পরিমাণ মধু সংগ্রহ হয়। সরিষার পর বরই, আম, লিচুর ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ
হয়।
শীতকালে কালোজিরা, জ্যৈষ্ঠ মাসে তিল ও
বাদাম ফুল থেকে শেষ মধু সংগ্রহ করা হয়। ৫০টি মৌবাক্স থেকে প্রায় ১১০ কেজি মধু সংগ্রহ
হয়। মধু সংগ্রহ করতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। বছরের প্রায় ছ’মাস মধু সংগ্রহ
করা গেলেও আষাঢ় থেকে অগ্রহায়ণ এই ছ’মাস মৌমাছিকে বিকল্প খাবার দিতে হয়।
দুই ভাগ চিনি ও এক ভাগ পানি মিশিয়ে সিরাপ
তৈরি করে মৌমাছির বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। ‘ফাউল ব্রুড’ রোগ মৌমাছির
একটি মারাত্মক ব্যাধি। এছাড়াও আরও কিছু সংক্রামক রোগ ও উপদ্রবের কারণে মৌচাক নষ্ট হয়ে
যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার
উপ-সহকারি পরিচালক ফরিদুর রহমান বলেন, সরিষার জমি থেকে মধু সংগ্রহ করতে জেলায় ১৪২ জন
উদ্যোক্তা কাজ করছেন। গত বছর সাড়ে ১৭ মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ হলেও এবার ৩০ মেট্রিকটন
মধু সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহের ফলে
ফলনও বাড়ে।
বিসিক জেলা কার্যালয় বগুড়ার উপ-মহাব্যবস্থাপক
একেএম মাহফুজুর রহমান বলেন, মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিসিক বগুড়া জেলা কার্যালয় নানাভাবে
উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে বাজারজাতকরণে বিসিক’র খাঁটি মানের
নিশ্চিয়তা ও বিভিন্ন মেলাতে স্টল বরাদ্দে ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও মধু চাষে মৌমাছি
প্রতিপালন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে মধু উৎপাদনে
সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ আছে। তবে খুব দ্রুতই নতুন প্রকল্পের
মাধ্যমে আবারও সরকারিভাবে মধু উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।