সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জালিয়াতি করে শিক্ষকদের সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) থেকে ঋণ তুলে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে যার পরিমাণ সাড়ে ৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এ ঘটনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে উপজেলার দক্ষিণ রাজিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আতাউর রহমানের নামে ৭০ হাজার, কালির খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রহিমা বেগমের নামে ২ লাখ ৫৯ হাজার, দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বপ্না রানী নামে ২ লাখ ৬৪ হাজার, পূর্ব বজরা হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার বেগম এর নামে ৭০ হাজার এবং নতুন দুলাল ভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসুদা বেগমের নামে ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এ ঘটনায় তারা হিসাবরক্ষণ ও শিক্ষা অফিসকে দায়ী করছেন।
শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, জিপিএফ তহবিল থেকে ঋণ নিতে প্রথমে আবেদনপত্র পূরণ করে উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। তার সীল ও স্বাক্ষরের পড়েই সেই আবেদনপত্র হিসাবরক্ষণ অফিসে যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যায়। পরে তা হিসাব রক্ষন অফিসে এলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের ব্যাংক হিসেবে ঋণের টাকা জমা হয়।
আতাউর আরো বলেন- এ বিষয়ে আমি কোনদিন শিক্ষা অফিসে যায়নি কোনো আবেদন করিনি। আমার হিসাব নম্বরে কোন টাকা আসেনি। বেতন থেকে কিস্তি বাবদ কোন টাকা কাটা হয়নি। কিন্তু কিভাবে আমার জিপিএফ ফান্ড থেকে লোন করা হলো? এখন আমার ফান্ডে ৭০ হাজার টাকা নেই। গত বছরের ১ ডিসেম্বর কে বা কারা লোন দেখিয়ে সেই টাকা উত্তোলন করেছেন।
শিক্ষক রহিমা বেগম বলেন, আমার কোলে শিশু বাচ্চা সে কারণে অফিসে যাই না আমি। কিভাবে আমার লোন হলো এখন কি হবে আমার টাকার? আমরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আত্মসাতের ঘটনাটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্য আত্মসাতের ঘটনা নিয়ে যখন আলোচনা উঠে ঠিক সেই মুহুর্তে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ১৩ ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং এক অফিস আদেশে দপ্তরের যাবতীয় আর্থিক অন্যান্য কার্যক্রম হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেন। (যার স্মারক নং-উশিঅ/সুন্দর/৫৪৪)
অপরদিকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে ভুক্তভোগি ০৫ জন শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করলে উক্ত দরখাস্তের বরাত দিয়ে বিভাগীয় উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, রংপুর বরাবর আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক শিক্ষকের জিপিএফ হিসাবের বিপরীতে ঋণ উত্তোলন পূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ করে। (যার স্মারক নং-উশঅ/সুন্দর/গাই/২০২২/৫৭৭)।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ. কে. এম. হারুন-উর-রশিদ বলেন- এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন আমার দৃষ্টি এড়িয়ে এ কাজগুলো করেছেন আমার অফিসের মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক। শিক্ষকদের অভিযোগ পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি। তারাই ব্যবস্থা নেবে।
উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমাদের কোন দায় নেই। সব দায়দায়িত্ব উপজেলা শিক্ষা অফিসের’।
এ বিষয়ে অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, অভিযোগ হওয়ার পুর্বেই কেন অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিককে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে শিক্ষা অফিসার অফিস আদেশে তাকে কর্মবিরতিতে রাখা হয়। এ থেকে অনেকেই ধারণা করছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিজেকে আত্মসাতের ঘটনা আড়াল করার জন্য এ নির্দেশ দিয়েছেন।