সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেছেন, একসময় চাক্তাই-খাতুনগজ্ঞে পানি ডুবন্ত থাকতো৷ এখন পানি জমলেও সেটা বেশিসময় থাকেনা। খালের কাজের সুফল মানুষ পাচ্ছে।
জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অযোগ্য বলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) এই প্রকল্পের কাজে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর কাজ চলমান, ভূমি অধিগ্রহণ ও বাকী টাকা পেলে প্রকল্পের সুফল জনগন ভোগ করবে। কিন্ত চসিকের নিজের রুটিন ওয়ার্ক কাজ চলমান না থাকাতে অনেক এলাকায় জলজট সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে সিডিএ সম্মেলনে কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এসময় সিডিএ বোর্ড মেম্বার, প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, সিনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
টানা ভারি বর্ষণে নগরের বেশিরভাগ এলাকা ডুবে গেলেও মা ও শিশু হাসপাতালে আগের মতো পানি ছিল না মাস্টারপ্ল্যান চলমান রয়েছে।
এ সময় তিনি চসিক মেয়র ও চসিস পরিচ্ছন্ন বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেন। কেউ বলে ৯.৫ লক্ষ কিউবিক মাটি উত্তোলন করেছে, অন্যদিকে চসিক মেয়র বলেন ২০ কোটি কিউবিক মাটি তুলতে হবে। তাদের দেওয়ার এসব বক্তব্যকে মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, সিডিএ জলাবদ্ধতার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই এসবের সব দায় সিডিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতার কাজ করতে না পারায় সিডিএকে প্রকল্প দেওয়া হয়।
সিডিএ শুধু একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চসিক মেয়র সাহেব ভুল তথ্য দিয়ে সিডিএকে দোষারোপ করছেন।
সিডিএ বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের যোগ্য না চসিক মেয়রের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিডিএর বক্তব্য জানতে চাইলে দোভাষ বলেন, সিডিএ যোগ্য না হলে সরকার প্রকল্প দিয়েছে কেন? বরং তারা যোগ্য নয় বলে ওই সময়ে সিডিএকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমারা কোনো সংস্থা বিরুদ্ধে না বা কোনো সংস্থাকে দোষারোপ করছি না। আমরা শুধু কি কাজ তা জানাচ্ছি। স্লুইসগেট বসানোর কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে এবার পানি উঠেনি। যদিও সেখানে অস্থায়ী গেইট বসানো হয়ছে।
চসিকের নিয়ম অনুযায়ী নালা-নর্দমা পরিস্কার করা। কিন্ত নগরের সব নালাগুলো ময়লা পরিস্কার না করাতে জ্যাম হয়ে আছে। তখন পানি চলাচল বিঘ্ন ঘটায়, এসব পানি রাস্তায় চলে আসছে। নগরে কোন ডাস্টবিন নেই, যেসব ডাস্টবিন থাকলেও ময়লাগুলো নালাতে যাচ্ছে। নাগরিকদেও সচেতন হওয়া জরুরী। নালা ও খালে বিভিন্ন ময়লা ফেলার কারণে ভারী বৃষ্টিতে পানি জমাট তৈরি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি হয়। আমাদের প্রকল্পে রয়েছে ৩৬টি খাল। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরে প্রায় ৫৭টি খাল রয়েছে। ৩৬টি খালের সম্প্রসারণ চলছে কিন্তু বাকি ২১টি খালে সম্প্রসারণ করা হয়নি। যা আমাদের প্রকল্পের আওতাভুক্ত না। যার জন্য জলাবদ্ধতা হতে পারে। সেনাবাহিনীর বাস্তবায়নাধীন ৩৬টি খালের মধ্যে ২৬টি খালের কাজ প্রায় শেষ। বাকি ১১টি খালের কাজ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে। ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলে আমরা কাজ শেষ করতে পারবো।
তিনি বলেন, নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে হলে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া নগরের ছোট বড় প্রায় ১৬০০ নালা রয়েছে। এসব নালা গুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, খালের বিল্ডিং করাতে কাজেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। গৃহস্থালির সকল ময়লা নালা ও খালে ফেলা বন্ধ করতে হবে। আমরা খালের কাদা অপসারন ও মাটি খনন করার কারনে বর্তমানে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে না। তবে সেগুলো পরিস্কার রাখতে, সবাইতে সচেতন হতে হবে। আগে বৃষ্টি প্রবর্তক মোড়ে পানি জমে থাকতো, এখন সেটা কিছু সময়ের মধ্য পানি ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের উত্তোলিত মাটি নগরের বিভিন্ন জায়গায় নিচু জায়গা ভরাট করেছি। কল্পলোক আবাসিক, সেনাবাহিনীর পাশে আরেফিন নগর, ব্যক্তিগত অনুরোধে অনেক জায়গায় খালের উত্তোলিত মাটি দিয়েছি। ১১৮ কিমি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করেছি। রেগুলেটর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে সুফল আসবে। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন ও বাকী টাকা হাত পেলে কাজের আরো অগ্রগতি হবে।
উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ চলছে। গত ছয় বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। আগামী বছরের জুনে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ আবার বাড়ানো হবে।
নগরের বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে বলিরহাট পর্যন্ত নতুন খাল খননে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। ২০১৪ সালের জুনে অনুমোদন হলেও এই প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি।
জলাবদ্ধতা দূর করতে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছিল সিডিএ। ২০১৭ সালের আগস্টে এর অনুমোদন দেওয়া হয় একনেকে। কাজ শুরু হয় পরের বছরে। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৮ কোটি টাকা। এই টাকায় ৩৬টি খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে, নির্মাণ করা হয়েছে রিটেইনিং ওয়াল, নতুন নালা, সেতু ও কালভার্ট। এছাড়া স্লুইচ গেইট কাজও চালু করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরের কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত নগরের ২৩ খালের মুখে জলকপাটের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের ১২টি খালের মুখে জলকপাট নির্মাণ করার কথা ছিল।