দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া
চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টার
তীব্র নিন্দা জানিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে শেখ রাসেল ক্রীড়া
চক্র লিমিটেড। আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয়
স্টেডিয়ামের ঢাকা মহানগর ফুটবল কমিটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবের নেতারা
এই দাবি জানান। তিনি বলেন,আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ চাই। আমাদের দাবি পূরণে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসহ আরও যেখানে যাওয়া দরকার সব জায়গায় যাব।
লিখিত বক্তব্যে ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ
ইসমত জামিল আকন্দ লাবলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে তার অতি
আদরের ছোট ভাই শহীদ শেখ রাসেলের নামে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন শেখ রাসেল
ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে ক্রীড়া প্রেমিক সায়েম সোবহান আনভীরকে দায়িত্ব
দেন। এরপর এই ক্লাবটিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে সংগঠনটির পরিধি ও ব্যাপ্তি
দ্রুততার সঙ্গে বেড়েছে। ক্লাবটির পরিচিতি হয়েছে দেশ সেরা ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে। শেখ
রাসেল ক্রীড়া চক্র যখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক ওই অবস্থায় সংগঠনের অগ্রযাত্রাকে
বাধাগ্রস্ত ও স্তব্ধ করার হীন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একটি কুচক্রী মহল শেখ রাসেল ক্রীড়া
চক্রের চেয়ারম্যানকে হত্যার মাধ্যমে সংগঠনের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার চক্রান্ত শুরু
করেছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, রাজধানীর
ভাটারা থানা পুলিশ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরকে
হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সন্দেহভাজন আসামী সাইফুল ইসলাম সাদ (২৩) নামে এক যুবককে গত ৫
নভেম্বর শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাউতুল কোরআন মাদরাসা ও
এতিমখানায় গ্রেপ্তার হওয়া সাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। আমরা পুলিশের কাছ থেকে জানতে
পেরেছি গত শুক্রবার (৫ নভেম্বর) পব জুমার নামাজ চলাকালে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের
চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার প্রস্তুতি ছিল সাদের। আমরা আরও জানতে পেরেছি চট্টগ্রাম-১২
আসনের (পটিয়া) সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং তার ছেলে নাজমুল
করিম চৌধুরী ওরফে শারুনের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডের ঘৃণ্য পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন
সাদ। এর আগে দুধের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যার ষড়যন্ত্র করে বলে পুলিশকে
জানিয়েছে সাদ। তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়।’ আমরা পুলিশের
বরাতে আরও জানতে পেরেছি, ‘হুইপের শামসুল হকের সঙ্গে সাদের ঘনিষ্ঠ
কিছু ছবি পাওয়া গেছে। সাদ পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, হুইপের ছেলে শারুন
তাকে (সাদ) বলেছে জুমার নামাজের সময় এক মিনিটও দেরি না করে সায়েম সোবহান আনভীরকে সরাসরি
গুলি করে দিতে। বাইরে তাদের গাড়ি অপেক্ষমান থাকবে। মসজিদ থেকে দ্রুত পালিয়ে যাতে সাদ
ওই গাড়িতে উঠে পালিয়ে যেতে পারে। এজন্য সাদকে নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন শারুন।’ তিনি (শারুন)
আরও বলেছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ‘সারা জীবন আর
কিছু করতে হবে না,- এভাবে বড় ধরনের পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর ব্যর্থ হলে
তাকে (সাদ) প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। থানা-পুলিশ ম্যানেজ করারও আশ্বাস দেওয়া হয় সাদকে।পুলিশকে
সাদ আরও বলেছে, সে চট্টগ্রামের পটিয়া সেন্ট্রাল হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় হুইপ
সামশুলের ক্যাডার হান্নান ও মান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয়। গত দুর্গাপূজার ছুটিতে গত ১০
অক্টোবর পটিয়ায় গিয়ে ২৩ অক্টোবর ঢাকায় ফিরে আসেন। পটিয়ায় যাওয়ার পর সাদের সঙ্গে শারুনের
সাক্ষাত করিয়ে দেন হুইপ আশ্রিত মাস্তান হিসেবে পরিচিত জনৈক হান্নান ও মান্নান। সাক্ষাতের
সময় শারুন একটি পিস্তল দেন সাদকে। ওই পিস্তল দিয়ে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যানকে
গুলি করে হত্যা করার জন্য সাদকে নির্দেশ দেন শারুন। সামশুল হক ও শারুনের নির্দেশনায়
এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সাদ পরিচয় গোপন করে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যানের
বাসায় দিন মজুরের কাজ নিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে আসার পর গত দু’টি জুমার নামাজে
সঙ্গে পিস্তল রাখেন সাদ। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সফল হতে পারেনি।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রায় তিন
মাস ধরে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যানকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছিল। অন্তত
৪ বার ছদ্মবেশে সায়েম সোবহান আনভীরের বাসভবন এমডি হাউসে প্রবেশ করে সাদ। কয়েকবার ব্যর্থ
হয়ে শেষ পর্যন্ত মাদরাসা শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশ নিয়ে ভর্তি হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়
অবস্থিত সাউতুল কোরআন মাদরাসা ও এতিমখানায়। কারণ সে মাদরাসা থেকে প্রতিদিন বসুন্ধরা
এমডির বাসায় পবিত্র কোরআন খতমের জন্য শিক্ষার্থীরা যান। সেই দলের সঙ্গে মিশে জুমার
নামাজ পড়ার সময় বসুন্ধরা এমডিকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করেন সাদ। ওই
মাদ্রাসা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
লিখিত বক্তব্যে ইসমত জামিল আকন্দ আরও বলেন,
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমেডের চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর ভাটারা
থানায় বসুন্ধরা গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) শেখ মিজানুর রহমানের বাদী
হয়ে একটি এজাহার দিয়েছেন। এজহারে সাদ ছাড়াও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে হুইপ সামশুল
হক চৌধুরী ও তার ছেলে শারুন চৌধুরীকে আসামি করার আবেদন করেছেন বাদী। এজাহারে বলা হয়,
পূর্বশত্রুতার জের ধরে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমেটের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যার পরিকল্পনা
করেন। এর আগেও কয়েক দফা এ ধরনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল চক্রটি।
ক্লাব চেয়ারম্যানের পরিবারের ক্রীড়ার ক্ষেত্রে
ঐতিহ্যবাহী পরিবার উল্লেখ করে ইসমত জামিল আকন্দ লাবলু বলেন, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র
লিমিটেডের পক্ষ থেকে আমরা পরিষ্কার ভাষায় এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের তীব্রনিন্দা
ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ভয়ানক ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নেপথ্য থাকা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার
করে আইনের আওতায় আনতে হবে।