নাজনীন শিকদার, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
মুসলিম ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শেষ মুহূর্তে ঢাকার দোহার উপজেলায় জমে উঠেছে ঈদ বাজার। ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট শপিংমলগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। ঈদের কেনাকাটায় দোহারের প্রায় সব অভিজাত বিপণীবিতান ও ফুটপাতের দোকানগুলোতেও মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে শপিংমলগুলো সাজানো হয়েছে রঙিন আলোকসজ্জা দিয়ে।
এবারের ঈদকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মার্কেটগুলো। বেচাকেনা ভালো হলেও ক্রেতাদের অভিযোগ এবার ঈদের পোষাকের মূল্য দ্বিগুণ। আর তা কিনতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। শনিবার ও রোববার সরেজমিনে দোহারের জয়পাড়া বাজারের কাপড় ও জুতার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ক্রেতা ঈদের কেনাকাটা করছেন।
শিশু, নারী, তরুণ ও তরুণীরা ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পোশাক দেখছেন। বিপণিবিতানগুলোতে নারী ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল বেশি। পছন্দের জামা, কাপড়, শাড়ি, জুতা ও প্রসাধনী সামগ্রী কিনে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন সবাই। এবার ঈদবাজারে নারী ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক বাহারি থ্রি-পিসে। থ্রি-পিসগুলোর নামও দেওয়া হয়েছে বাহারি রকমের। নায়রাকাট, গারারা, সারারা, পরমা পোশাক, কামদানি ফুলকাড়ি, চুণ্ডিসুতি, জয়পুরীসুতি, রাজমহল, কাতান থ্রি-পিস, কাতান শাড়ি, জেসান, টাইমলেস, বেনারসি, ভিক্টোরিয়া, গ্যালাক্সি, বুটিকস, কারচুপি, লেহেঙ্গা, পার্টিগাউন, স্যামুসিল্ক, জর্জেট টুপার্ট নামের থ্রি-পিসগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঢাকাইয়া জামদানি, ভারতীয় জামদানি, রাজশাহী সিল্ক, রাজগুরু, শান্তিপুরী কাতান ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িও বিক্রি হচ্ছে বেশ।
শিশু ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা গেছে জিন্সের হাফপ্যান্ট, জামা ও ফতোয়ার প্রতি। পুরুষ ক্রেতারা কিনছেন জিন্সের প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট ও পাজামা-পাঞ্জাবি। এদিকে প্রয়োজনীয় প্রসাধনী কিনতে কসমেটিকসের দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন নারীরা।
ঈদে পোষাকের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে নারিশার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, বেলা ১১টায় বাড়ি থেকে বোনকে সাথে নিয়ে কাপড় কেনার উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। এরমধ্যে ১০টি দোকান ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও ব্যাটে বলে মিলছে না বলে তিনি জানান।
মো. শফিক এসেছেন ছেলে মেয়ের জামা কিনতে। এদিক সেদিক ঘুরে বাজেটের সাথে মেলাতে পারছেন না তিনি।
এ সময় তিনি দৈনিক আজকের দর্পণকে বলেন, বড় লোকদের অনেক আছে। আর যারা হাত পেতে জিনিস নেয় তাদের কোনো সমস্যাই নেই। আর মধ্যবিত্তের কান্না কেউ দেখে না।
জয়পাড়া বাজারে কেনাকাটা করতে আসা আঞ্জুমান বলেন, তিনি এবার পছন্দমতো একটি থ্রি-পিস কিনেছেন। পাশাপাশি তার তিন মেয়ের জন্যও থ্রি-পিস কিনেছেন। থ্রি-পিস পড়ে সহজেই চলাফেরা করা যায়। তাই থ্রি-পিসেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে জয়পাড়া বাজারের মেসার্স আল-আমিন বস্ত্রালয়ে কেনাকাটা করতে আসা জেরিন শিকদার বলেন, এবারের ঈদবাজারে প্রায় সব দোকানেই পছন্দসই পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ঘুরে ঘুরে দেখে মনমতো পোশাক কেনার চেষ্টা করছি।
নারিশা পশ্চিমচর বাজারের ললনা উইমেন্স ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী কামরুন নাহার কানন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে বাহারি ধরনে পোশাক দোকানে তোলা হয়েছে। বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছে।
এছাড়াও ফুটপাতে বসা হরেক রকম ঈদ পণ্য নিয়ে বসা দোকানিদের দোকানেও বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানিয়ছেন ব্যবসায়ী আবুল কালাম। তিনি বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তারই আমাদের এখানে কেনাকাটা করতে আসে। রোজার শুরুতে বেচাকেনা অনেক কম ছিল। এখন বেচাকেনা বেড়েছে। আশা করছি ঈদের আগে একয়দিনও বিক্রি ভালো হবে।
জয়পাড়া লন্ডন প্লাজায় গিয়ে কথা হয় ক্রেতা জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সবার জন্যই কেনাকাটা করেছি। কাপড়ের মান ভালো তবে অন্য বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি।
লন্ডন প্লাজায় মো. সাইফুল ইসলামের কাপড়ের দোকানে কথা হয় ক্রেতা শেখ মোস্তফার সঙ্গে। তিনি বলেন, গেল বছরের তুলনায় এ বছর দাম কিছুটা বেশি হলেও বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়েসহ পরিবারের সবার জন্যই কেনাকাটা করেছি।
ব্লু-ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী আরিফ হোসেন বলেন, রমজানের প্রথমদিকে বেচা কেনায় বেশ ভাটা ছিল। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ক্রেতাদের সমাগম দেখা যাচ্ছে বেশি।
বেগম আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের বিল্লাল বস্ত্রালয়ের মালিক ইস্তোফা বলেন, এবার ঈদের বেচাকেনা খুব ভালো। বিশেষ করে নারীদের পোশাক হিসেবে থ্রি-পিসই সর্বোচ্চ বিক্রি হচ্ছে। তবে শাড়িও বিক্রি হচ্ছে ভালোই। বর্তমানে দুই হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে থ্রি-পিস, আড়াই হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ বছরের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় ‘নায়রাকাট’। এর ডিজাইনটি ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে।
এছাড়া পালামগঞ্জ বাজারের শরিফ বস্ত্রালয়ের মালিক মোক্তার হোসেন মইফল বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বেচাকেনা বেশ ভালো হচ্ছে। তবে তীব্র গরমের কারণে ক্রেতা সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
এদিকে ব্র্যান্ডের আউটলেট আমব্রেলা, রঙ, ইয়োডো, দর্জিবাড়ি, মেলাসহ অন্যান্য আধুনিক ডিজাইনের পোশাকগুলো ঈদ ফ্যাশনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এদিকে ক্রেতাদের সুবিধার্থে যানজট এড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে জয়পাড়ার চতুর্দিকে প্রবেশমুখে ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল দৈনিক আজকের দর্পণকে বলেন, দোহারবাসী যাতে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারে সেজন্য সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যত্রতত্র যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।