আজঃ মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

সেনা বিদ্রোহে নয়, পরিকল্পিত খুন

প্রকাশিত:সোমবার ১৫ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:সোমবার ১৫ আগস্ট ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

এম. ইনায়েতুর রহিম

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অতিপ্রত্যুষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নির্মম-বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে দেশবাসী হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিবাদ হলেও কার্যকর কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি- এটা সত্য ও বাস্তবতা। ২৬ সেপ্টেম্বর '৭৫ দখলদার রাষ্ট্রপতি মোশতাক আহমেদ 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, ১৯৭৫' জারি করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ ১৫ আগস্টে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তির পথ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে খুনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সবাইকে বিদেশের কূটনৈতিক মিশনে চাকরি প্রদান করে পুরস্কৃত করেন। আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের পুরস্কৃত করার এমন নজিরও বিশ্বে বিরল।

বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ও পৃষ্ঠপোষকতা পায় দীর্ঘ সময় ধরে অর্থাৎ জিয়া-এরশাদ ও বেগম জিয়ার শাসনামল পর্যন্ত। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে ২ অক্টোবর, ১৯৯৬ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের হত্যা সংক্রান্তে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে মোট ২০ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ঢাকার দায়রা জজ আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৩০২/৩৪ এবং ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এক আসামি মিসেস জোবাইদা রশিদ চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করে মামলা থেকে অব্যাহতি পান। রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকার বিজ্ঞ দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ৮ নভেম্বর ১৯৯৮ রায় ও আদেশে ১৯ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সবাইকে 'মৃত্যুদণ্ড' প্রদান করেন। অন্য চারজন খালাস পান।

আইন অনুযায়ী 'মৃত্যুদণ্ড' আদেশ অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে রেফারেন্স পাঠানো হয়। হাইকোর্টে নানান নাটকীয়তার পর হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়। বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক এ বি এম খায়রুল হক সব দণ্ডিতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. রুহুল আমিন ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন এবং পাঁচজনকে খালাস প্রদান করেন। ফলে ডেথ রেফারেন্সটি তৃতীয় বেঞ্চে গড়ায়। তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি ফজলুল করিম ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং তিনজনকে খালাস প্রদান করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত পাঁচজন আপিল বিভাগে 'লিভ পিটিশন' দাখিল করে। আপিল বিভাগ দণ্ডিতদের উত্থাপিত পাঁচটি আইনি প্রশ্ন নিষ্পত্তির জন্য লিভ মঞ্জুর করেন।

দণ্ডিতদের অন্যতম একটি আইনগত প্রশ্ন ছিল- 'যেহেতু সেনা বিদ্রোহের ফলে রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়েছিলেন, সুতরাং এটা সাধারণ বা প্রচলিত কোনো খুন নয়; এবং সে কারণে প্রচলিত আদালতে এ খুনের বিচার ছিল এখতিয়ারবহির্ভূত, যা সমগ্র বিচার কার্যক্রমকে কলুষিত (vitiate) করেছে।' অপর আরও একটি ছিল- 'রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক উত্থাপিত সাক্ষ্যসমূহ প্রমাণ করে না যে, তর্কিত হত্যাকে সংঘটিত করার জন্য আপিলকারীরা কোনো 'অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র' (criminal conspiracy) করেছিল, বরং সামরিক বিদ্রোহ হয়েছিল মুজিব সরকারের পরিবর্তনের জন্য। সুতরাং দণ্ডবিধির ১২০বি ধারা অনুযায়ী দণ্ডিতরা কোনো অপরাধ করেনি।'

আপিলকারীদের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, উত্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে প্রকাশ পায় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার-পরিজনদের হত্যাকাণ্ড এবং ক্ষমতার পটপরিবর্তন ছিল কিছুসংখ্যক সেনা অফিসারের বিদ্রোহের ফল, সে কারণে এই বিচারকাজটি ১৯৫২ সালের সেনা আইনের বিধান অনুযায়ী 'কোর্ট মার্শালে' অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত ছিল; কেননা, ঘটনার উৎপত্তি ছিল ঢাকা সেনানিবাসে। সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ও ন্যাশনাল ইউনিটের অফিসার ও জওয়ানরা ঢাকা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রপতি, যিনি সশস্ত্র বাহিনীরও সর্বাধিনায়ক ছিলেন, তাকে হত্যা করেছিল; যেমনিভাবে ১৯৮১ সালের ২৯ মে দিবাগত রাতে সেনাসদস্যরা চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে এসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন সেই সার্কিট হাউসে তাকে হত্যা করে। উভয় হত্যাকাণ্ড যেহেতু একইভাবে সংঘটিত হয়েছিল, সেহেতু আসামিরা ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে আদৌ জড়িত থেকে থাকলে তাদের বিচার 'কোর্ট মার্শালে' হওয়া উচিত ছিল; যেমনটি হয়েছিল জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে।

আপিলকারীদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা আরও যুক্তি দেখান যে, ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতের ঘটনায় কোনো অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার কিংবা সেনা আইনের অধীন নয়, এমন অপর কোনো ব্যক্তি যোগ দিয়ে থাকলেও সেনা আইনের ৩১ ধারার পরিসীমার মধ্যে সেটাও হবে বিদ্রোহ এবং তদানুযায়ী তাদেরও সেনা আইনের অধীনে কোর্ট মার্শালে বিচার করা উচিত ছিল। যেহেতু ১৪ আগস্ট রাতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটির উৎপত্তি হয়েছিল, সেহেতু স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, ঘটনাটি ছিল একটা সহজ-সরল সেনা বিদ্রোহ এবং তদুপরি দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা কিংবা ১২০খ ধারার আওতাধীনে সংক্রান্ত কোনো চুক্তি বা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র বা পূর্ব পরিকল্পিত বা পূর্ব আয়োজিত পরিকল্পনার অস্তিত্ব ছিল না।

উপরন্তু রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়ায় তার হত্যাকান্ডের বিচার কোর্ট মার্শালে হওয়া উচিত ছিল। যুক্তির সমর্থনে বিজ্ঞ আইনজীবীরা জামিল হক বনাম বাংলাদেশ, ৩৪ ডিএলআর (এডি), পৃষ্ঠা-১২৫ মামলাটি অর্থাৎ জিয়াউর রহমানের হত্যার বিষয়ে কোর্ট মার্শালে বিচার বিষয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, আপিলকারীরা সর্বোচ্চ আদালতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (বাতিল) আইন চ্যালেঞ্জ করলেও বিচারিক আদালতের এখতিয়ার নিয়ে বিচার চলাকালে কখনও কোনো আপত্তি বা প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। সুতরাং বর্তমান পর্যায়ে এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন অসৎ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হত্যাকাণ্ডটি যেহেতু পূর্বপরিকল্পিত, সেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে প্রচলিত আদালতে বিচার সম্পন্ন করায় আইনগতভাবে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি; এবং সেনা আইন, নৌবাহিনী অধ্যাদেশ ১৯৬১ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৫৪৯-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি। তাদের আরও যুক্তি ছিল যে, সেনা আইনের ধারা ৫৯(২) ও ৮(২) ধারা একত্রে পাঠ করলে দেখা যাবে যে, সংঘটিত ঘটনাটি একটি 'সিভিল অপরাধ', যা সেনা আইনের ধারা ৯৪ অনুযায়ী বিচারের এখতিয়ার ফৌজদারি আদালতের রয়েছে।

আপিল বিভাগ উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীদের যুক্তি, সেনা আইন, নৌবাহিনী অধ্যাদেশ ও ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি ও উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণাদি পর্যালোচনাক্রমে আপিলকারীদের কর্তৃক প্রচলিত ফৌজদারি আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার বৈধতা সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তি নাকচ করেন অন্যতম এই কারণে যে, বিচারিক আদালতের এখতিয়ার নিয়ে আসামি পক্ষে বিচার চলাকালীন কখনই কোনো আপত্তি বা প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়নি; এমনকি আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী পরীক্ষার সময়েও এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য ছিল না; সুতরাং এ পর্যায়ে এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। আপিল বিভাগ অভিমত প্রদান করে যে, সেনা আইনের ৩১ ধারায় 'বিদ্রোহে'র শাস্তির বিধান উল্লেখ থাকলেও ওই আইনে বিদ্রোহের কোনো সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি, সেক্ষেত্রে নৌবাহিনীর অধ্যাদেশ, ১৯৬১-এর ৩৫ ধারায় 'বিদ্রোহে'র যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেনা আইনের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।

'বিদ্রোহ' তখনই হবে, যখন সশস্ত্র বাহিনীর আইনের অধীন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কিংবা মিলিত ব্যক্তিদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর আইনের অধীন অন্তত দু'জন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে- ক. বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের অথবা সেই বাহিনীসমূহের সঙ্গে সহযোগিতাকারী যে কোনো বাহিনীর কিংবা উক্ত বাহিনীসমূহের যে কোনো একটির যে কোনো অংশের আইনসম্মত কর্তৃপক্ষকে উৎখাত করে বা প্রতিহত করে; খ. অবাধ্যতার দ্বারা যদি বাহিনীর শৃঙ্খলা ধ্বংস করা হয় কিংবা কোনো কর্তব্য বা দায়িত্ব (সার্ভিস) এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অথবা শত্রুর বিরুদ্ধে কার্যক্রমের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অমান্য করে; কিংবা গ. সশস্ত্র বাহিনীতে অথবা সেই বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতাকারী যে কোনো বাহিনীতে কিংবা সশস্ত্র বাহিনীসমূহের যে কোনো বাহিনীর যে কোনো অংশে যে কোনো কর্তব্য বা দায়িত্ব সম্পাদনে বাধা সৃষ্টি করে। সাক্ষ্য-প্রমাণাদি বিশ্নেষণে আপিল বিভাগ সুস্পষ্ট অভিমত দেন যে, আলোচ্য মামলার ক্ষেত্রে সামরিক বিদ্রোহের উপরোক্ত উপাদানসমূহ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত অর্থাৎ আপিলকারী ও অন্যান্য আসামি যৌথভাবে সেনা কর্তৃপক্ষের অবাধ্য হয়েছে বা উৎখাতের চেষ্টা করেছে বা কর্মে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বা কর্তব্যে অবহেলা করেছে বা আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এমন উপাদান পরিলক্ষিত হয়নি।

আপিল বিভাগ আরও অভিমত দিয়েছে যে, 'সেনা আইনের পঞ্চম অধ্যায়ে হত্যা' অপরাধের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। দণ্ডবিধির ৩০০ ধারায় হত্যার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যখন সেনা আইন অনুসারে কোনো বিদ্রোহের অপরাধ সংঘটিত হয় তখন এটা শুধু 'কোর্ট মার্শাল' দ্বারা বিচার্য। সেনা আইনের ৫৯(১) ধারায় বলা আছে যে, উপধারা (২) এর বিধানাবলি সাপেক্ষে সেনা আইনের অধীন কোনো ব্যক্তি যদি কোথাও 'সিভিল অপরাধ' সংঘটিত করে, তাহলে সে সেনা আইনের অধীনে অপরাধের জন্য দোষী বলে গণ্য হবে; এবং সেনা আইনের ৮(২) ধারায় প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী 'সিভিল অপরাধ' বলতে এমন অপরাধকে বোঝায়, যা বাংলাদেশে সংঘটিত হলে ফৌজদারি আদালত কর্তৃক বিচার্য। এই আইনের ৮(৭) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থিত অথবা সরকারের অনুমতিক্রমে অন্য কোথাও প্রতিষ্ঠিত সাধারণ ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আদালতকে ফৌজদারি আদালত বলা হয়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে কোনো বিরোধ বা বিতর্কের অবকাশ নেই যে, আপিলকারীদের কার্যকলাপ 'সিভিল অপরাধে'র মতো দুস্কর্মের মধ্যে পড়ছে।

ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে গঠিত একটি ফৌজদারি আদালতে আপিলকারীদের বিচারের ব্যাপারে কোনো আইনগত বাধা ছিল না। অবশ্য সেনা আইনের ৫৯(২) ধারায় উল্লেখ আছে যে, সেনা আইনের আওতাধীন কোনো ব্যক্তি যদি সেনা আইনের বহির্ভূত কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে (ভিকটিম) তাহলে সে সেনা আইনের অধীনে বিচারযোগ্য হবে না যদি না সে ক. 'সক্রিয় কর্মে' থাকাকালীন অবস্থায় অথবা খ. বাংলাদেশের বাহিরে কোনো জায়গায় অথবা গ. সীমান্তবর্তী কর্মস্থলে এই অপরাধ করে। অর্থাৎ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি (ভিকটিম) যদি সেনা আইন দ্বারা বাধ্য না হন এবং অপরাধ সংঘটনের সময় অপরাধীরা যদি 'সক্রিয় কর্মে' থেকে সেনা আইন দ্বারা বাধ্য না হন। সেনা আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী 'সক্রিয় কর্মে' বলতে সেই সময়কে বোঝায়, যে সময়ে এই রকম ব্যক্তি সামরিক অভিযানে অথবা শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযানে নিয়োজিত কোনো বাহিনীতে সংযুক্ত থাকে, অথবা শত্রু দ্বারা দখলকৃত একটি বাহিনীর একটি অংশ হয় ...। আলোচ্য মামলায় আপিলকারীদের কেউ সেনা আইনের ৮(১) ধারায় সংজ্ঞায়িত 'সক্রিয় কর্মে' নিয়োজিত ছিল না; এবং যেহেতু, ধারায় উল্লিখিত তিনটি বিকল্প শর্তের কোনোটাই পূরণ হয়নি সেহেতু, ৫৯ ধারায় (২) উপ-ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিগণের বিচার সেনা আইনের অধীনে হতে পারে না।

উপরন্তু, আপিলকারী ও অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়নি যে, 'সক্রিয় কর্মে' থাকাকালীন অবস্থায় তারা হত্যা-অপরাধ করেছে এবং আপিলকারীরাও দাবি করেনি যে, তাদের 'সক্রিয় কর্মে' থাকাকালীন অবস্থায় ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। রেকর্ডভুক্ত এমন উপকরণও নেই, যা থেকে প্রমাণ হয় যে আপিলকারীরা শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযানে নিয়োজিত থাকাকালে কিংবা সামরিক অভিযানে নিয়োজিত থাকাকালে অথবা শত্রু কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে বা আংশিকভাবে অধিকৃত কোনো দেশ বা স্থান অভিমুখে অগ্রসরমান থাকাকালে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল। আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে যে, বিচারিক আদালত সেনা আইনের ধারা ৯৪ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৫৪৯-এর বিধান অনুযায়ী সংশ্নিষ্ট সেনা কর্তৃপক্ষকে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচারের বিষয়টি অবহিত করলে সেনা সদর দপ্তর থেকে আদালতে জানানো হয় যে, সেনা আইনের ৯৪ ধারা অনুযায়ী প্রচলিত ফৌজদারি আদালতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার কার্যক্রমে কোনো বাধা নেই। সুতরাং আপিলকারীদের বিচার প্রচলিত ফৌজদারি আদালতে অনুষ্ঠানে কোনো পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়নি এবং আদালত সম্পূর্ণ এখতিয়ার সম্পন্ন ছিল।

আপিল বিভাগ আরও অভিমত দেন যে, বর্তমান মামলায় উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ হতে এমন কিছু প্রমাণ হয় না যে, সেনাবাহিনীর যথাযথ কর্তৃপক্ষ আপিলকারী ও অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ লঙ্ঘন বা অবাধ্যতা বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল, যার জন্য 'কোর্ট মার্শাল' হতে পারত। আপিলকারীদের বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দ কর্তৃক নির্ভরকৃত 'জামিল হক বনাম বাংলাদেশ সরকার' মামলার বিষয়ে আপিল বিভাগ অভিমত দেন যে, ওই মামলায় রিট আবেদনকারীদের ১৯৮১ সালের ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে সংঘটিত বিদ্রোহের অপরাধের জন্য সেনা আইনের অধীনে কোর্ট মার্শালে বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ওই বিদ্রোহের পরিণতিতে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রাণ হারিয়েছিলেন। অভিযুক্তরা সেনা আইনের অধীনে গঠিত 'কোর্ট মার্শালে'র সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশনটি রক্ষণীয় নয় মর্মে খারিজ করে, যা আপিল বিভাগ বহাল রাখে। সুতরাং বর্তমান মামলাটির প্রকৃত ঘটনা ও সমগ্রিক পরিস্থিতি বিচারে উল্লিখিত মামলাটির কোনো যোগসূত্র নেই।

আপিলকারীদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যায় 'অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (criminal conspiracy)-এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে যুক্তির বিপরীতে আপিল বিভাগ অভিমত দিয়েছে যে, "ষড়যন্ত্র অপরাধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে একটা বেআইনি কাজ করতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির 'মতৈক্য'। মতৈক্য অনুসারে বেআইনি কাজটি করা হতেও পারে নাও হতে পারে, তথাপি 'মতৈক্যটাই' হলো অপরাধ এবং তা শাস্তিযোগ্য। কোনো বেআইনি কাজ কিংবা বেআইনি নয় এমন কাজ বেআইনি পন্থায় করা বা করার কারণ ঘটানোর জন্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তির স্রেফ একমত হওয়াটাই হলো 'অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র'। ষড়যন্ত্রে সহযোগিতাকারীকে অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির সঙ্গে অপরাধকর্মে শারীরিকভাবে বা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই, ষড়যন্ত্র অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং তাতে সে যে কোনো পর্যায়ে লিপ্ত থাকলে সেটাই যথেষ্ট। 'ষড়যন্ত্র' যেহেতু গোপনে সংঘটিত হয়, সেহেতু এর প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য থাকে না। ষড়যন্ত্র প্রমাণে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।....।

আপিলকারীরা সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত/অব্যাহতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর প্যারেডে সাদা পোশাকে উপস্থিত ছিল, যা থাকার কথা নয়। নাইট প্যারেডে অংশ নিয়েছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য পূরণ ও বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে এই নাইট প্যারেডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আপিলকারীরা এবং অন্য আসামিরা রক্ষীবাহিনী সদর দপ্তর, বিডিআর সদর দপ্তর, রেডিও স্টেশন, মিন্টো রোড এবং ৩২ নম্বর রোডের প্রধান প্রধান জায়গাগুলোতে কমান্ডিং অফিসারের অধীনে জওয়ান মোতায়েন করেছে। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তর এবং বিডিআর সদর দপ্তরে এমনভাবে সেনা মোতায়েন করেছে, যেন সহযোগিতা চাইলেও রাষ্ট্রপতির সুরক্ষার জন্য এই আধাসামরিক বাহিনীগুলো এগিয়ে আসতে না পারে। রেডিও স্টেশনে সেনা মোতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল যেন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী, রাজনৈতিক কর্মী বা অন্যান্য উৎস থেকে কোনো সাহায্য চাইতে না পারে, সে কাজে বাধা দেওয়া। মিন্টো রোডে সেনা মোতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল মন্ত্রীরাও যেন রাষ্ট্রপতিকে বাঁচানোর জন্য জনসাধারণ বা অন্য কোনো বাহিনীর কাছ থেকে সহযোগিতা চাইতে না পারে।'

আপিল বিভাগের মতে, উপরোক্ত ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে আপিলকারীরা 'অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে'র অপরাধ সংঘটিত করেছে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে, সেনা বিদ্রোহ সংঘটিত করার জন্য নয়।

লেখকঃ বিচারপতি


আরও খবর



‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে বিএনপি আমাদের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়’

প্রকাশিত:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২৪ মার্চ 20২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে আমাদের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায় বিএনপি। রোববার (২৪ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এমন কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতারা আসলে এখন ব্যর্থতার জন্য নিজেরাই ক্লান্ত। তাদের কর্মীরা হতাশ। নেতাদের কারও সঙ্গে কারও কথার মিল দেখি না। মঈন খান বললেন, গণতন্ত্র উদ্ধারে ভারতকে সহযোগিতা করার জন্য। আবার রিজভী তার চাদর ফেলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ভারত বিরোধীতা করছে। তারা আসলে বর্জনের নামে আমাদের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়। আর এটা কী সম্ভব?

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের যে অবস্থা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে লেনদেন, যে আদান-প্রদান হয়ে থাকে, তার মধ্যে এমন বর্জনের প্রস্তাব বাস্তব সম্মত কি না!

একেক জন একেক কথা বললে কোনো জায়গা থেকে নির্দেশিত হয়ে বলছেন, এমন কথা বলার নির্দেশ থাকে না। লন্ডন থেকে নাকি অন্য কোনো জায়গা থেকে আদিষ্ট হয়ে বলছেন কি না; তা বলবো কী করে, যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, এখন আমীর খসরু বলেন একটা, রিজভী বলেন আরেকটা, আবার মঈন খান বলেন ভিন্ন কথা।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো চিন্তা আছে কি না; জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকার এ ধরনের চিন্তাভাবনা কেন করবে? এর কোনো যুক্তি নেই, বাস্তবতা নেই। নির্বাচন যখন হওয়ার তখন হবে সংবিধান অনুসারে। আমাদের সংবিধানে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলতে কিছু নেই।

ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাইকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই যার যার কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন প্রত্যাশা করছি।

নিউজ ট্যাগ: ওবায়দুল কাদের

আরও খবর



অন্যকে বাঁচাতে জীবন দেওয়া নাজিউল ছিলেন মায়ের একমাত্র সন্তান

প্রকাশিত:বুধবার ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জেলা প্রতিনিধি

Image

অপরিচিত এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে জীবন দেওয়া সেই কলেজছাত্র তার মায়ের একমাত্র ভরসা ছিলেন। অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যাওয়া যুবকের নাম জোবায়ের রহমান নাজিউল (১৮)।

সোমবার (১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাইবান্ধা শহরর মাঝিপাড়া এলাকার রেললাইনে সন্তানসহ দাঁড়িয়ে থাকা গৃহবধূ রাজিয়া বেগমেকে বাঁচাতে গিয়ে নাজিউলের মৃত্যু হয়।

জোবায়ের রহমান নাজিউল গাইবান্ধা সাঘাটা উপজেলার ভরখালী গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ও জেবা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলেন। ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তার বাবা-মা। জোবায়ের রহমান নাজিউলের এমন ত্যাগে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ এলাকাবাসী শোকে কাতর হয়ে পড়ছেন।

নাজিউলের মা জেবা বেগম অচেনা মানুষ দেখেই চিৎকার করে আহজারী করছেন। আর বলছেন, আমার কলিজার টুকরাকে এনে দাও। আমার ধনকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতাম। আমার একমাত্র ভরসা ছিল আমার ছেলে। ভালো করে লেখাপড়া করবে, সেজন্য শহরে ভালো স্কুলে ভর্তি করালাম। মাসে মাসে এখন আমি কার কাছে টাকা পাঠাব। এখন আমি কাকে নিয়ে বেঁচে থাকব।

নাজিউলের এই ত্যাগে মৃত রাজিয়া বেগমের কোলে থাকা শিশুটি বেঁচে গেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অনেকেই এই তাকে মানবিক কিশোর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, নিহত গৃহবধূ রাজিয়া বেগমের স্বামী আনোয়ার হোসেন মাদকাসক্ত ও কর্মহীন। মোবাইল ফোনে প্রেম করে সুনামগঞ্জের রাজিয়াকে বিয়ে করে আনোয়ার। পেশা হিসেবে আনোয়ার হোসেন অন্যের রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতেন। আবার কিছু সময় দিনমজুরের কাজ করেন। তবে বেশিরভাগ সময়ে কাজ না করে আনোয়ার হোসেন প্রায়ই বাড়িতে বসে থাকতেন। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। শিশু সন্তানের খাবার ঠিকমতো দিতে পারত না। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো। 

ঘটনার আগের রাতে স্বামীকে কাজ করতে বলায় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। সোমবার রাজিয়া বেগম সকালে তার শিশুকে কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে কলেজছাত্র জোবায়ের মিয়া ওই গৃহবধূকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মারা যান। ওই গৃহবধূর কোলে থাকা ওই শিশু আবির হোসেনসহ তিনজনকে প্রথমে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত গৃহবধূ ও কলেজছাত্র জোবায়েরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওযার পথে তারা মারা যান। তবে মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে আহত দেড় বছরের শিশু আবির হোসেন বর্তমানে শঙ্কা মুক্ত রয়েছে। পরিবারের লোকজন তার দেখভাল করছেন।

স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত রাজিয়া শিশু সন্তানের গায়ে হাত তুলত। এ নিয়ে ঘটনার আগের রাতে তাকে গালিগালাজ করি। এরপর রাতেই আমার স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সকালে আমি কাজে যাই। পরে সাড়ে ১১টার দিকে শুনতে পাই আমার স্ত্রী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা গেছে। আমি এই ছোট শিশুকে নিয়ে তার মা ছাড়া কিভাবে বেঁচে থাকব।

নাজিউলের সহপাঠী জিয়াম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, জোবায়ের রহমান নাজিউল নিজের জীবন দিয়ে যে কাজটি করেছে তা ভোলার মতো না। অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে তার স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন। কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও তরতাজা জীবন দুটো বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিতে হলো।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এ এস এম রুহুল আমিন জানান, দেড় বছরে শিশু আবির হোসেন মাথায় ও পেটে কিছুটা আঘাত পেয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসায় শিশু আবির হোসেন শঙ্কামুক্ত রয়েছে।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, এ ঘটনায় সদর খানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর গৃহবধূর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


আরও খবর



রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ৪ মামলা

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
বান্দরবান প্রতিনিধি

Image

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে রুমা থানায় তিনটি এবং থানচি থানায় একটি মামলা হয়।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে মামলাগুলো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ঘটে যাওয়া সোনালী ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় রুমা থানায় ৫০-৬০ জন নাম না জানা ব্যক্তিকে আসামি করে তিনটি মামলা হয়েছে। এছাড়া, গত বুধবার দুপুরে থানচি কৃষি ব্যাংকে টাকা লুটের ঘটনায় থানচি থানায় ৩০-৪০ জনকে নাম না জানা আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।

থানচি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, আজ শুক্রবার রুমা কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার হ্লা শৈ থোয়াই মারমা বাদী হয়ে ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে মামলা করতে থানায় আসতে বলা হয়েছে।

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী জানান, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় নাম না জানা আসামিদের বিরুদ্ধে রুমায় তিনটি ও থানচিতে একটি মামলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংক ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার ১৫ ঘণ্টা পর থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি হয়।


আরও খবর



আজ দেশের আকাশে দেখা যাবে সূর্যের খুব কাছে আসা বিরল ধুমকেতু

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

Image

প্রায় ৭১ বছর পর আজ রোববার (২১ এপ্রিল) সূর্যের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করবে ধূমকেতু ১২পি/পনসব্রুকস। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে এটি দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকেও।

এ উপলক্ষ্যে রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর পদ্মা নদীর ধার টি বাঁধ এলাকায় ডেভিল ধূমকেতু এবং বৃহস্পতিগ্রহ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার এবং বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন যৌথভাবে এর আয়োজক।

আয়োজকরা জানান, বিগত ৭১ বছর পর আজ রোববার (২১ এপ্রিল) ডেভিল ধূমকেতুটি সূর্যের সবচাইতে কাছে অবস্থান করবে। রোববার সূর্যস্তের সময় থেকে ঘণ্টাখানেক ধূমকেতুটি আকাশে অবস্থান করবে। দিগন্তের খুব কাছে থাকাতে নানা কারণে ধূমকেতুটি দেখাবার সম্ভাবনা খুব কম। তারপরও আয়োজকরা প্রস্তুত থাকবে ধূমকেতুটি দেখবার জন্য। মেঘমুক্ত আকাশ হলে এটি দেখতে পাবার সম্ভাবনা প্রবল হতে পারে। এছাড়াও আকাশে বৃহস্পতি গ্রহ এবং চাঁদ একই সঙ্গে দৃশ্যমান থাকবে। ধূমকেতুটি যতক্ষণ সম্ভব দেখার চেষ্টা করার পর আয়োজকরা টেলিস্কোপে বৃহস্পতিগ্রহ এবং চাঁদ দেখবে।

আয়োজনকরা আরও জানান, রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর টি বাঁধ পদ্মার পাড়ে এ আয়োজন করা হয়েছে। আগ্রহী সবার জন্য ডেভিল ধূমকেতু-বৃহস্পতিগ্রহ এবং চাঁদ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি উন্মুক্ত থাকবে।

আয়োজক কমিটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্ব চলচ্চিত্রকার আহসান কবির লিটন জানান, রাজশাহী অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার এবং বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন এর উদ্যোগে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে ক্যাম্পটি পরিচালনার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যে কেউ এখানে এসে এই ক্যাম্পে অংশ নিতে পারবেন। তবে আকাশে মেঘ থাকলে দৃষ্টি সীমা বাধাগ্রস্থ হবে। তখন ধূমকেতু সহ গ্রহ উপগ্রহগুলো না ও দেখা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, সূর্যের কাছাকাছি ধূমকেতুটি দেখতে কিছুটা শিংয়ের মতো হয়। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ডেভিল কমেট বা শিংওয়ালা ধূমকেতু


আরও খবর
ফের ফেসবুকে বিভ্রাট

মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪




গরম কমাতে কী কী করেছেন, জানালেন চিফ হিট অফিসার

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

গরমের তীব্রতা বাড়ায় শনিবার থেকে সারা দেশে চলছে তিন দিনের হিট অ্যালার্টের সতর্কতা। সোমবার সেটি আরও ৭২ ঘণ্টার জন্য বাড়ানো হয়েছে। তীব্র গরমে রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠছে, কী করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন?

এক বছর আগে দায়িত্ব নেওয়া বুশরা দেশের একটি টিভি চ্যানেলের মুখোমুখি হয়ে নিজের কাজ ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সবাইকে একসাথে নিয়ে হিট মোকাবিলা করবো, এটাই আমার কাজ। তবে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করছি না, আমাকে সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে প্রায় ৩০ মিলিয়নের বেশি মানুষের বসবাস, শহর খুব দ্রুত বড়ো হচ্ছে। পরিস্থিতিও খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, হিট নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে এখানে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন।

অনুন্নত এলাকায় গরমের প্রকোপ বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর আমরা শহরের অনুন্নত অন্তত ১৫টি এলাকায় সবুজায়ন প্রোগ্রাম করেছি। যেখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদেরকে সবুজায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের আমরা বুঝিয়েছি, নিজে ও পরিবারের সদস্যদের কীভাবে তীব্র গরম থেকে বাঁচাতে পারবো।

গত বছর হিট মওসুমে নিয়োগ হওয়ায় তখন বেশি কাজ করতে পারেননি জানিয়ে বুশরা বলেন, কাজ শুরু করলে রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। আস্তে আস্তে এই পরিবর্তনের ফল পাওয়া যাবে। তবে পরিকল্পনা তিনি নিজে বাস্তবায়ন করতে না পারায় সময় বেশি লাগছে বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ পেলেও টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করতে বেশি সময় লেগে যায়। এছাড়া আমলাতন্ত্রও কাজের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে জানান বুশরা।

চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন তীব্র গরম থেকে বাঁচতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি চাইলেও একরাতে সব পরিবর্তন করে দিতে পারবো না। গরমে বেশি বেশি পানি পান ও শরীরের প্রতি নজর রাখতে হবে। যেহেতু এমন গরম আগে বাংলাদেশে ইতিহাসে হয়নি, তাই এই পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে আগের অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

মানুষকে সচেতন করতে একটি সহজ ভাষায় ছবি সম্বলিত বুকলেট প্রকাশের কাজ চলছে বলে জানান এই চিফ হিট অফিসার। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হবে, এমন প্রত্যাশা করা উচিত হবে না। আমি মনে করি, সব আলোচনাই ইতিবাচক। সমালোচনার দিকে নজর না দিয়ে কাজ করেই সময় পার করছেন বলেও জানান বুশরা আফরিন।

নিউজ ট্যাগ: বুশরা আফরিন

আরও খবর
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচন ৫ জুন

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪