আজঃ বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এখনও অপরিহার্য

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
শ ম রেজাউল করিম

Image

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মুক্তির মহানায়ক, স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের অমর কবি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। তিনি বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। সংকটে তিনি পরিত্রাণদাত্রী। সংগ্রামে তিনি অবিচল আস্থার মূর্ত প্রতীক। রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্র পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে অসাধারণ নেতৃত্ব তাকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার নেতৃত্বের প্রশংসা এখন সর্বজনবিদিত। বিশ্ব নেতৃত্ব আজ শেখ হাসিনাকে বলছেন বিশ্বের দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা। তাদের চোখে শেখ হাসিনা উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান আর বেস্ট ক্রাইসিস ম্যানেজার। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি একজন মানবিক রাষ্ট্রনায়কও বটে।

একটি রাষ্ট্র কত দূর এগিয়ে যাবে, কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, সেটা কী রাজনীতিতে, কী সমাজনীতিতে, কী অর্থনীতিতে, সেটা নির্ভর করে একজন রাষ্ট্র নায়কের নেতৃত্বের ওপর। শোষণ ও বঞ্চনার অবসান এবং অর্থনৈতিক মুক্তির অভিপ্রায়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের দূরদর্শী ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা । তিনি উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেছিল।

ওই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার স্বপ্ন রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করা হয়েছিল। এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, কারণ ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ পেয়েছে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের মর্যাদা। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ জাতিসংঘ অনুমোদন করেছে। এ সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের। শুধু এখানেই থেমে যাননি ভিশনারী লিডার শেখ হাসিনা। ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ২০২৫ সালে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নতসমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং ২১০০ সালের মধ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অদম্য প্রত্যয়ী নেতা শেখ হাসিনা। এ রকম দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক বিশ্বে বিরল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। জাতির পিতা যখন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিমগ্ন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলার সুযোগ পাননি। পিতার সেই অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। কিন্তু জাতির জনকের কন্যার পথচলা মোটেই সুখকর ছিল না। জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ছয় বছর ছোট বোন শেখ রেহানা, স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া, পুত্র জয় ও কন্যা পুতুলকে নিয়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। বাবা-মা, ছোট ভাই শেখ কামাল-শেখ জামাল, আদরের ছোট্ট রাসেল আর আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণা আর অবর্ণনীয় কষ্ট বুকে চেপে একরকম বন্দি প্রবাস জীবনে থেকেও তিনি ভেবেছেন বাংলার মানুষের কল্যাণের কথা, তাদের অধিকারের কথা।

১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হৃত গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার বজ্র শপথে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। সে বছর বিখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও জনগণের জন্য দেশে ফিরতে ব্যাকুল ছিলেন। শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, যেসব কাজ অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বলে আমি বিবেচনা করি তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি বাংলাদেশের জনগণের প্রীতি ও ভালোবাসা ছিল অপরিমিত। আমাকে (আওয়ামী লীগের) সভানেত্রী নির্বাচিত করে পরোক্ষভাবে তাঁকেই সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি তাঁর অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারব।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলার জনগণের মুক্তিদূত শেখ হাসিনা তৎকালীন সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু, জনকের খুনিদের আস্ফালন ও সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল ঢাকার আকাশ বাতাস। শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। লাখো জনতার ভালোবাসা আর সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন বলেছিলেন, সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।

দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। ৭৫ এর পর সামরিক শাসক আর স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের দাম্ভিকতা ও আস্ফালনে কলঙ্কিত হয়েছিল বাংলার আকাশ-বাতাস। এ সময় বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলার সব ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ক্ষমতা ও নেতৃত্বের কোন্দলে বহুভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ছাত্রনেতারা হুলিয়া মাথায় নিয়ে পলাতক, জনগণকে মিথ্যার বেসাতি দিয়ে বিভ্রান্তির নাগপাশে আবদ্ধ করে রেখেছে সেনাশাসকেরা। একাধিক সামরিক ক্যু আর নির্বাচনের নামে প্রহসন চলে দেশে।

১৯৮২ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সফল নেতৃত্বের একক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলন-সংগ্রাম, ছোট-বড় দলের সঙ্গে জোট গঠন, বৃহত্তম বাইশ দলের প্লাটফর্ম, রাজনীতির কৌশলে অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে যান তিনি। আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে সুসংবদ্ধ করার কাজটিও সমানতালে করে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দলটি যেখানে বড় বড় নেতার নেতৃত্বে বহুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, সে জায়গা থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, সুসংগঠিত করা খুব সহজ কাজ ছিল না। ১৯৯০-এ এরশাদের পতন হলেও পরের বছর নির্বাচনে গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকার বিরোধীদলহীন প্রহসনের নির্বাচন করে। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেন এবং ১৯৯৬ সালে ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয়ী হন। প্রায় ২১ বছর রাজপথে থাকা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বে পথ হারানো বাংলাদেশ অবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি ঐক্যজোট ও নাজিউরের জাতীয় পার্টির সমন্বয়ে চারদলীয় জোট সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আস। চারদলীয় জোট ছিল মূলত স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্লাটফর্ম। ফলে শেখ হাসিনাকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে অনেক সতর্ক ও হিসাব-নিকেশ এগোতে হয়। চার দলের অপশাসনের তাণ্ডবে দেশের মানুষ দিশেহারা, কর্মী-সমর্থকেরা ঘরছাড়া হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে থাকেন।

এর মধ্যেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার জনসভায় তৎকালীন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা করে তাঁকে হত্যা চেষ্টা হয়। তবে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাকে তিনি পরোয়া করেননি। সব হুমকি-ভীতি উপেক্ষা করে চারদলীয় জোট সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এরই মধ্যে এক/এগারোর সরকার প্রতিষ্ঠা পায় এবং শেখ হাসিনাকে আবার সংগ্রামের ধারা আবার পাল্টাতে হয়। যাঁর পিতা গণতন্ত্রের অগ্রনায়ক, জনগণের মুক্তির দিশারী, সাম্যের পথিকৃৎ, সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষাকারী, তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পিছপা হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। গ্রেফতার হোন শেখ হাসিনা। গ্রেফতার হলেও দমে যাননি শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশ মতো সরকারবিরোধী আন্দোলন চলে। কিন্তু কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আন্দোলনের তীব্রতা ও আন্তর্জাতিক চাপে তৎকালীন সরকার বাধ্য হয় শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে। চিকিৎসার জন্য তিনি ইংল্যান্ড যান। সে সময় সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দেবে না, দেশে ফিরলেই তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হবে এমন শঙ্কায়ও শেখ হাসিনা ভয় পাননি বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি। তিনি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এর আগেও যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, এবারও চিকিৎসা নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। তিনি ফিরে আসার কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাতো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছোট-বড় সব শক্তি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রধান শক্তিগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন তিনি।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে ২৩০টি লাভ করে। শেখ হাসিনার অকুতোভয় সংগ্রামী নেতৃত্বের কারণেই সেদিন গণতন্ত্রের এ বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল। এরপর তাঁর নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। শেখ হাসিনা সরকার গঠনে বারবার দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে তিনি আওয়ামী লীগের সরকার নাম না দিয়ে নাম দেন জাতীয় ঐকমত্যের সরকার। এরপর ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে গঠন করেন মহাজোট সরকার

দীর্ঘ চার দশক ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এবং প্রায় ১৯ বছর সরকারের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে। এ সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও চালু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ, মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত করা, বিদ্যুতের উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা ও প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ঘর প্রদান, দুস্থ ও অসহায়দের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা, দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের এরকম অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন রীতিমতো বিস্ময়কর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বড় বড় সংস্থা থেকে তিনি পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি। শান্তির প্রচার, অনুসন্ধান ও সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কো থেকে পেয়েছেন হুপে-বোয়ানি শান্তি পুরস্কার। অর্জন করেছেন মেডেল অব ডিস্টিনকশনহেড অব স্টেট পদক। বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে পেয়েছেন মাদার তেরেইজা পুরস্কার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী ভূমিকার জন্য বিশ্বের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ অর্জন করেছেন। খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতি তাঁকে এনে দিয়েছে দ্য সিরিস মেডেল। মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভূষিত হয়েছেন মাদার অব হিউম্যানিটি সম্মানে। অর্জন করেছেন জাতিসংঘের আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার। নারী রাজনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করেছে রিজিওনাল লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ডে। নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারে অবদানের স্বীকৃতি পিস ট্রি অ্যাওয়ার্ড, শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি সাউথ-সাউথ পুরস্কার, নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউএন উইমেন প্রদত্ত এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার ও প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অর্জনের মুকুটে এক একটি জ্বলজ্বলে পালক। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখে তিনি হয়ে উঠেছেন স্টেট ম্যান। বিশ্ব নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে বলেছেন স্টার অব ইস্ট। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক তাঁকে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার প্রদান করে মুকুট মণি অভিধায় ভূষিত করেছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের সোচ্চার কণ্ঠস্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিবিসি বলেছে The voice of the Vulnerable। এ সবই দূরদর্শী নেতা ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি। এখানেই একজন শেখ হাসিনা অনন্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

বাংলাদেশে এখনও শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। তিনি জাতির পিতার রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, নেতৃত্বের সৌকর্যে, দল ও দেশ পরিচালনায় আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও পরিপক্বতায় তার ধারে কাছে কেউ নেই। ন্যায়-নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি অবিচল। তিনি সততার মূর্ত প্রতীক, সংগ্রামে তিনি আপসহীন, অধিকার আদায়ে তিনি বজ্রকণ্ঠ, দেশপ্রেমে তিনি অনন্য। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাঙালি জাতির জন্য আশীর্বাদ। তাঁর বিকল্প তিনি নিজেই। তিনি ফিরে না এলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতো না। তিনি ফিরে না এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতির পিতার হত্যার বিচার হতো না, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হতো না। তিনি ফিরে না এলে নিকষ কালো অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আলোর পথে ফিরে আসত না। তিনি ফিরে না এলে এ দেশ পরিচিত হতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মডেল দেশ হিসেবে। তিনি ফিরে না এলে একসময় সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতো না। তিনি ফিরে না এলে জাতির পিতার হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্তি করা সম্ভব হতো না। যুদ্ধাপরাধীদের ভ্রুকুটি আর আস্ফালনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ, সেটি বন্ধ করা যেতো না। তাই এ দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য, এ জাতির কল্যাণের জন্য, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গৌরবজ্জ্বল পথচলার জন্য মানচিত্রের জন্য উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে এবং বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় তিনি এখনও অপরিহার্য। এমনকি বিশ্ব ফোরামেও তার নেতৃত্ব অপরিহার্য।

লেখক: শ ম রেজাউল করিম এমপি, মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।


আরও খবর



ইসরায়েলে হামলার নিন্দা জানালেন বাইডেন

প্রকাশিত:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

ইসরায়েলের মাটিতে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইরান। শনিবার (১৩ এপ্রিল) গভীর রাতে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়। তবে ইরানের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের পর ইরানের হামলার বিষয়ে এক বিবৃতি জারি করেছেন বাইডেন। এতে তিনি ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

বাইডেন বলেছেন, প্রায় সব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে আগেই সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া ইসরায়েলের নিরাপত্তার ব্যাপরেও তিনি অঙ্গীকার প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বা অবকাঠামোতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবে যে কোনো ধরনের হুমকির ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকবো।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তারা।

ইরানের হামলা শুরু হওয়ার পরই তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলজুড়ে সতর্ক সংকেত বাজানো হয়। তবে এঘটনায় এখনো নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই আহত হয়েছেন।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানীতে ইরানি কনস্যুলেটে হামলায় ইরানের দুই জেনারেলসহ ১৩ জন নিহত হন। কেউ দায়ভার স্বীকার না করলেও এ হামলা ইসরায়েল চালিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনার পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয় তেহরান।


আরও খবর



সিরাজগঞ্জে ঈদকে সামনে রেখে কর্মমুখর তাঁতপল্লী

প্রকাশিত:রবিবার ৩১ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ৩১ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

Image

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে কর্মমুখর হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীগুলো। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁত শ্রমিকরা। অন্যান্য সময় কিছুটা মন্দাভাব থাকলেও এখন যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন রং এবং সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন না তারা।

রবিবার (৩১ মার্চ) সকালে সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার বাউইতরা এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে  জামদানি, সামার, জলছাপ, কাতান তৈরি করছেন তাঁতীরা। এই সব শাড়ী জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিনই খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে ভিড় করছেন তাঁত কাঁরখানাগুলোতে।

তাঁত ব্যবসায়ি আব্দুল গফুর জানান, বছরের অন্য সময় তেমন কাজ না থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে আমাদের কাজ অনেক বেড়ে গেছে। এবার অর্ডারও বেশি কাজও বেশি।

তাঁত শ্রমিক মোতালেব হোসেনসহ আরো কয়েকজন শ্রমিক জানান, কয়েকদিন হল আমাদের কাজ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসতে শুরু করেছে। আশা করছি এবার আমাদের কাজে বেশ লাভবান হতে পারবো। আমরা রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

বেলকুচি উপজেলা হস্ত ও পাওয়ারলুম এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বৈদ্যনাথ রায় জানান, এবার আমাদের ঈদের প্রস্তুতি বেশ ভালো। তবে রং ও সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আশানুরূপ লাভ পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। তারপরও আমরা আশাবাদী এবার ঈদে ভালো ব্যবসা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁতশিল্পের উপর ১৪ হাজার ৮৭০ টি পরিবার নির্ভরশীল।


আরও খবর



আন্তজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের হোতা গ্রেফতার

প্রকাশিত:শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
মশিউর রহমান রাহাত, পিরোজপুর

Image

পিরোজপুর থেকে চুরি যাওয়া মোটর সাইকেল উদ্ধারসহ আন্তজেলা পেশাদার মোটরসাইকেল চোর চক্রের অন্যতম হোতা নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

আজ শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংএ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ১৯মার্চ পিরোজপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডর সুন্দরবন কুরিয়ার সংলগ্ন সাংবাদিক জিয়াউল হক এর বাড়ির সামনে থেকে একটি কালো রংয়ের একটি মোটরসাইকেল অজ্ঞাতনামা চোর চুরি করে নিয়ে যায়। চুরি যাওয়ার পর মোটরসাইকেলটির মালিক মোঃ মাইনুর ইসলাম বাদি হয়ে পিরোজপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এর পরেই মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করার জন্য পিরোজপুর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযানে নামে। গোয়েন্দা পুলিশ পিরোজপুর শহরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা জেলার সাভার থানা এলাকা থেকে চোরচক্রের সদস্য বাদশা ফরাজিকে গ্রেফতার করে। পরে বাদশা ফরাজির দেয়া তথ্যানুসারে গতকাল ১২ এপ্রিল শুক্রবার নারায়নগঞ্জ, রুপগঞ্জ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা পেশাদার মোটরসাইকেল চোরচক্রের অন্যতম হোতা ও বহু মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামী মোঃ সেলিম খান (৪৪) কে গ্রেপ্তার করে। সেলিম নারায়ণগঞ্জ এর রুপগঞ্জ এলাকার গাফফার খানের ছেলে। পরবর্তীতে সেলিমকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাইঙ্গাইল জেলার সদর থানা এলাকার রাবনা বাইপাস এলাকা থেকে চোরাই যাওয়া কালো রংয়ের Apache 4V 160cc মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।

আসামী সেলিমকে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, মাগুরা, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল সহ বিভিন্ন জেলা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে থাকে। মোটরসাইকেল চুরি করে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রয়লব্দ টাকা দিয়ে মাদক ক্রয় বিক্রয় ও পাচার করে থাকে। ইতোমধ্যে তাদের দুই সদস্য আশুলিয়া থানা ও টাইঙ্গাইল সদর থানায় বিপুল পরিমানে মাদক সহ গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে আছে।

এ ব্যাপারে পিরোজপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোস্তাফিজুর রহমান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) বলেন,  আসামীর নিকট থেকে আমরা পুরো চক্রের সদস্যদের তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের পিরোজপুর ডিবি টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আসামী সেলিম খান এর নামে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানায় একটি চুরির মামলা, সিরাজগঞ্জ জেলার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানায় একটি মাদক মামলা, ঢাকা জেলার ধামরায় থানায় একটি মাদক মামলার তথ্য পাওয়া যায়।

নিউজ ট্যাগ: পিরোজপুর

আরও খবর



পাকিস্তানে জানা গেল ঈদের সম্ভাব্য তারিখ

প্রকাশিত:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ (পিএমডি) সোমবার জানিয়েছে, ১০ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন এবং ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খবর জিও নিউজের

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, নতুন চাঁদের জন্ম ৮ এপ্রিল রাত ১১টা ২১ মিনিটে হবে এবং তার বয়স পরের দিন (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ১৯ থেকে ২০ ঘণ্টার মধ্যে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, সূর্যাস্তের পর ৫০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চাঁদ দেখা যাবে।

পিএমডি জানিয়েছে, ৯ এপ্রিল দেশের বেশিরভাগ অংশের আকাশ পরিষ্কার থাকবে। তবে উত্তরাঞ্চলে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

সাধারণত সৌদি আরবের পরের দিনই বাংলাদেশ ও ভারতে ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। এই হিসেবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে ১০ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল-ফিতর উদযাপিত হতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পর পর ৩ মাস ২৯ দিনে হয় না। এবার রমজান ৩০ দিন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এর ফলে ঈদুল ফিতর হতে পারে ১১ এপ্রিল। ১১ এপ্রিলকে ঈদুল ফিতরের দিন ঠিক করে ছুটির তালিকা করেছে সরকার।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রমজান মাসের আগের ২ মাস ২৯ দিনে শেষ হয়েছিল। তাই এ মাস ২৯ দিনে হবার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই ৯ এপ্রিল ছুটির প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে।

এর আগে ১১ মার্চ পাকিস্তানে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছিল এবং পরের দিন পবিত্র মাসের প্রথম দিন বা প্রথম রোজা পালিত হয়। সুতরাং পাকিস্তানিরা ২৯ দিন রোজা পালন করবে যদি পিএমডির পূর্বাভাস সত্য হয়।

রমজান শেষ হলে এবং শাওয়াল শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ঈদুর ফিতর উদযাপন করেন। ধর্মীয় মাস রমজান ধৈর্য এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করতে শেখায়, পাশাপাশি দাতব্য ও কল্যাণমূলক কাজে উৎসাহিত করে।


আরও খবর



কাতারের আমির শেখ তামিম ঢাকায় আসছেন আজ

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

Image

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন-হামাদ আল থানিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। দুদিনের সফরে আজ তিনি বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা আসছেন। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকায় একটি সড়ক এবং একটি পার্কের নামাকরণ কাতারের আমিরের নামে করা হবে।

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে বাংলাদেশ গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে থাকে। তবে এবার ডলার সংকটের কারণে গ্যাসের দাম এক বছর পর্যন্ত বাকি রাখতে চায় বাংলাদেশ। এই প্রস্তাব কাতারের আমিরের সফরকালে দেওয়া হবে। তার সঙ্গে মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করবেন। এটি কাতারের আমিরের এশিয়া সফরের অংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ মেয়াদের নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতার সফরটি রাজনৈতিকভাবেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

সফরকালে যে ছয়টি চুক্তি সই হবে সেগুলো হলো-১. দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত ২. আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা ৩. সাগরপথে পরিবহণ ৪. উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত ৫. দুই দেশের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বদলি এবং ৬. যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি।

এ ছাড়া যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হবে সেগুলো হলো-১. শ্রমশক্তি বিষয়ক ২. বন্দর পরিচালনা সংক্রান্ত ৩. উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা ৪. যুব ক্রীড়াক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক এবং ৫. কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।

এদিকে, ঢাকায় কালশি এলাকায় বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক এবং ইসিবি চত্বর থেকে কালশি উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন-হামাদ আল থানির নামে নামকারণ করা হবে। ২৩ এপ্রিল বিকালে কাতারের আমির নিজে উভয় স্থাপনার উদ্বোধন করবেন।

রাষ্টপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২২ ও ২৩ এপ্রিল ২০২৪ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন-হামাদ আল থানি এই সফর করছেন। তিনি একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ হতে এটি প্রথম উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর।

কাতারের আমিরের সফর উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী। কাতার বঙ্গবন্ধুর সময়কালীন সময়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র। গ্যাস আমদানির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব থেকে বাকিতে গ্যাস আমদানি করে বাংলাদেশ। কাতারের কাছ থেকেও বাকিতে গ্যাস আমদানির প্রস্তাব করা হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের মার্চ ও মে মাসে দুইবার কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করছেন।

সাম্প্রতিককালে কাতারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি, বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে।

কাতারের আমির আজ বিকালে বিশেষ বিমানে ঢাকায় আগমন করবেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন। এ সময় তাকে গার্ড অব অনার জানানো হবে।

আগামী ২৩ এপ্রিল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ কাতারের আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তারপর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রথমে একান্ত বৈঠক এবং পরে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। রাষ্ট্রপতি সাহাবউদ্দিন বঙ্গভবনে কাতারের আমিরের সৌজন্যে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন। ওই দিন সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

কাতারের আমিরের এই সফর তার এশিয়া সফরের অংশ। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ কাতার সর্বোচ্চ গড় মাথাপিছু আয়ের দেশ। দেশটির শক্তিশালী অর্থনীতি, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও কূটনৈতিক তৎপরতা ও মধ্যস্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসাবে বিবেচিত।

কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার, যেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সার্বভৌম তহবিলের অধিকারী কাতার বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হিসাবে বিবেচিত। তদুপরি কাতার বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কাতারের আমিরের আসন্ন সফর তাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্যে এক বিরাট মাইলফলক।


আরও খবর