দেশে বছরে ৪
লাখ ৩ হাজার মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর মধ্যে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
সাপের কামড় এবং মৃত্যুর হার বেশি হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয়ভাবে কোনো অ্যান্টিভেনম তৈরি
হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৬৪ জেলায় হাসপাতালে সেবা নেওয়া রোগীর ওপরে এ জরিপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি বাড়ার ঘোষণা আসতে পারে আজ
সরকারি সমীক্ষায়
দেখা গেছে, সমস্ত সাপের কামড়ের ঘটনার মধ্যে এক-চতুর্থাংশ বিষাক্ত, যার ১০ দশমিক ৬
শতাংশ শারীরিক এবং ১ দশমিক ৯ শতাংশ মানসিক পক্ষাঘাত হয়ে যায়।
সমীক্ষায় আরও
দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রতি লাখে ২৪৪ জন মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন এবং প্রতি
লাখে ৪ থেকে ৫ জন মানুষ মারা যান, যার ৯৫ ভাগ ঘটনা গ্রামে।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ মানুষ সর্পদংশনের শিকার হন এবং দুর্ভাগ্যক্রমে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ মারা যান। সর্পদংশন বেশি ঘটে খুলনা এবং বরিশাল বিভাগে। ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী পুরুষরা বাড়ির আশপাশে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের ভেতরে সবচেয়ে বেশি সর্পদংশনের শিকার হন।
আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
শতকরা ৮০ ভাগ
মানুষ দংশনের পর দংশিত অঙ্গে গিঁট দেন এবং ৬৫ ভাগ মানুষ প্রথমেই ‘ওঝা’ বা প্রচলিত চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা
নেন। সর্পদংশনের পর প্রতি হাজারে দুজন মানুষের অঙ্গহানি ঘটে এবং ২ থেকে ২৩ ভাগ মানুষ
বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা ভোগ করেন।
সর্পদংশনের
পর শতকরা ১০ ভাগ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হন। প্রতিটি সর্পদংশনের
কারণে চিকিৎসার জন্য দংশিত ব্যক্তির প্রায় ২ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
এই জরিপে আরও
জানা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ১৯ হাজার গৃহপালিত পশু সর্পদংশনে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে
২ হাজার ৫০০ গৃহপালিত পশু মারা যায়, ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়।
অনুষ্ঠানে অংশ
নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডি) তথা অসংক্রামক
রোগ প্রতিরোধে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মহামারির পর সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের মৃত্যু
ও অসুস্থতার প্রধান কারণ হয়ে উঠছে অসংক্রামক রোগ।
দেশে শতকরা
৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগের কারণে হয়। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশের সব উপজেলার
এনসিডি কর্নার স্থাপন করা হচ্ছে। সংক্রমক রোগ যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্ষম
হয়েছি। কলেরা, ডায়রিয়া এগুলো আগে অনেক বেশি ছিল, তবে তা এখন খুবই কম। আর এর সব থেকে
বড় প্রমাণ হলো কভিড নিয়ন্ত্রণ।
খাদ্যে ভেজাল,
ব্যালেন্সড ফুড না খাওয়া ও তামাকজনিত কারণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি
অসংক্রামক রোগী বাড়ছে। দেশে পাঁচ থেকে দশটির বেশি সংক্রামক রোগ নেই। তবে ক্যান্সার,
কিডনি ও হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন অসংক্রামক রোগ বাড়ছে, তাই বর্তমানে লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো
জটিল রোগগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া।
তিনি বলেন, প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ দেশে সাপের কামড়ে মারা যান। সাপের কামড়ের প্রতিষেধক তৈরি করা হবে। আমরা নিজেরাই এ বিষয়ে কাজ করছি এবং এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান। সাপের কামড়ে মৃত্যু নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ (ছোঁয়াচে নয় এমন রোগ)। এমনিতেই এমন নন কমিউনিকেবল ডিজিজে অনেক মৃত্যু হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিমানে প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে ‘অভিভূত’ যাত্রীরা
সাপের কামড়ে যেন প্রাণহানি
না হয়, সেজন্য উপজেলা পর্যায়সহ সবখানে অ্যান্টিভেনম ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে
হবে। শুধু অ্যান্টিভেনম নিশ্চিত করলেই হবে না, পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল থাকতে হবে।
মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আজিজুর
রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা মহাপরিচালক ড. টিটু মিয়াসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।