মদপানের কোনো
নিরাপদ মাত্রা নেই। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে মদপানের
প্রচলন যত বাড়ছে ততই মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
একদল গবেষকের পরিচালিত এই গবেষণার প্রতিবেদন গত ১২ মে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে জানানো
হয়, গবেষণার জন্য তারা ব্রিটেনের ২৫ হাজার মদ পানকারী ব্যক্তির মস্তিস্কের মেডিক্যাল
স্ক্যান পর্যালোচনা করেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
সিনিয়র ক্লিনিকাল রিসার্চার আনিয়া টোপিওয়ালার মতে, গবেষকরা দেখেন যে মদপান করার ফলে
মস্তিষ্কের ধূসর অংশের ক্ষতি হয়। মস্তিষ্কের এই অঞ্চল একটি অতি গুরত্বপূর্ণ অংশ, এখানে
সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রস্তুত হয়।
আনিয়া টোপিওয়ালা বলেন, মানুষ যত মদপান করে ততই তাদের মস্তিষ্কের ধূসর অংশের পরিমান কমে যায়।
তিনি আরো বলেন,
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসে এবং আরো মারাত্মক অবস্থায় ব্যক্তির
স্মৃতিভ্রংশ দেখা দেয়। মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে গেলে স্মৃতির পরীক্ষায় তার কর্মক্ষমতা
দুর্বল হয়।
টোপিওয়ালা বলেন,
‘যদিও এতে অ্যালকোহলের
প্রভাব সীমিত (শূণ্য দশমিক আট ভাগ), তথাপি অন্য পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি থেকে এর প্রভাব
বেশি।’
বয়সের বাড়ার বিপরীতে
অন্য কোনো কারণে মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসা ও স্মৃতিভ্রংশ তৈরি হওয়াকে পরিবর্তনযোগ্য
ঝুঁকিহিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
গবেষকরা পরীক্ষা
করে দেখেছেন, যে কোনো ধরনের মদপান মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন প্রকার মদ, পান
করার ধরন ও অন্য স্বাস্থ্যগত অবস্থা মদপানে মস্তিষ্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
স্বাস্থ্যের জন্য
নিরাপদ কোনো ‘মদ’ গবেষকরা খুঁজে
পাননি। ওয়াইন, স্পিরিট বা বিয়ার, সব ধরনের মদই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
অপরদিকে অল্প
মদপানেও পানকারী মস্তিষ্কের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন না।
চিকিৎসা সাময়িকী
দ্যা ল্যানসেটে ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যে মদপানের কারণে
প্রতি দশজনের মধ্যে একজন মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন। মদ বিভিন্ন রোগের সূচনা করে।
এর ফলে পানকারীর অকাল মৃত্যুর বিপুল ঝুঁকি থাকে।
গবেষকরা দেখিয়েছেন,
৫০ বছর বয়সী কোনো পুরুষ বা নারী যদি দিনে গড়ে একটি বিয়ার বোতলের অর্ধেক (যাকে এক ইউনিট
অ্যালকোহল সেবন বলা হয়) বা পুরোটা খান অথবা এক গ্লাস করে ওয়াইন খান—তাহলে তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কম
করে দুই বছর বুড়িয়ে যায়। তার মানে, দুই বছর বয়স বাড়লে মস্তিষ্কের এসব অংশের আকার
যেমন বদলে যেত ও কাজকর্মের গতি যতটা শ্লথ হয়ে পড়ত, তেমনটাই হয়।
আর ৫০ বছর বয়সী
কেউ যদি দিনে গড়ে দুই বা তিন ইউনিট অ্যালকোহল সেবন করেন, তাহলে তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন
অংশের ক্ষয়ক্ষতি হয় আরও দ্রুত হারে। তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ তিন থেকে সাড়ে তিন
বছর বেশি বুড়িয়ে যায়।