যুক্তরাষ্ট্রের
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা নানা সময় মহাকাশে খেয়াযান প্রেরণ করে। এবার নাসার লক্ষ্য
‘সাইকি’ নামে একটি গ্রহাণুর দিকে। সাইকির
গতি-প্রকৃতি জানতে নাসা অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের
মধ্যবর্তী অঞ্চলের গ্রহাণুটিতে পাঠানো হবে খেয়াযান। ধাতব গ্রহাণুটি প্রধানত নিকেল ও
লোহা দিয়ে তৈরি- যার কেন্দ্রে অন্য আরও ধাতব উপাদান থাকতে পারে। ইন্টারনেট থেকে তথ্য
নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন-আজহারুল ইসলাম অভি
পাথুরে ও বরফাচ্ছাদিত
ছাড়া এই প্রথম নাসা বহির্বিশ্বের একটি গ্রহ বা গ্রহাণু অনুসন্ধান করতে যাচ্ছে। সবকিছু
ঠিক থাকলে আগামী ৫ অক্টোবর যাত্রা করবে মহাকাশযানটি। যুক্তরাষ্ট্রের কেপ ক্যানাভেরালে
চলছে শেষ সময়ের কাজকর্ম। আর ১০০ দিনের মতো সময় আছে। তার পর এই যান চার কোটি কিলোমিটার
দূরে যাবে গ্রহাণুর কাছে। ২০২২ সালে যাত্রার কথা থাকলেও সফটওয়্যার জটিলতায় যাত্রা পিছিয়েছিল
তখন।
সাইকি স্পেসএক্স
ফ্যালকন হেভি রকেটে চড়ে যাত্রা করবে। স্পেসএক্স ফ্যালকন হেভি রকেট এবারই প্রথম ভিনগ্রহের
কোনো যান উৎক্ষেপণে অংশ নিচ্ছে। ২০২০ সালে স্পেসএক্স নাসার কাছ থেকে উৎক্ষেপণের জন্য
১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের চুক্তি করে। পৃথিবীর অভিকর্ষের সীমানা পেরিয়ে সাইকি
সৌরচালিত ডানায় ভর করে ছয় বছরের জন্য গ্রহাণুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
কী এই সাইকি
গ্রহাণু
সাইকি গ্রহাণুর
পুরো নাম ‘১৬ সাইকি’। এটি একটি এমটাইপ বা লোহাভিত্তিক গ্রহাণু। ১৮৫২ সালে ইতালির জ্যোতির্বিদ
অ্যানিবেল দ্য গ্যাসপারিজ এই গ্রহাণুর প্রথম সন্ধান পান। এর নামকরণ করা হয় গ্রিক দেবী
সাইকির নামে। এই গ্রহাণুর নামে ১৬ বা সিক্সটিন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কারণ এর আগে
আরও ১৫টি গ্রহাণু আবিষ্কার করা হয়েছে। গ্রহাণুটি প্রায় ২৭৯ কিলোমিটার লম্বা। এই সিক্সটিন
সাইকি অন্য গ্রহাণুর চেয়ে আলাদা। বেশিরভাগ গ্রহাণু পাথুরে হলেও এটি স্বর্ণ, লোহা ও
নিকেলে ভর্তি। এ গ্রহাণুটিতে এত পরিমাণ মূল্যবান ধাতু আছে যে, বিজ্ঞানীদের ধারণা সেসবের
মোট মূল্য বিশ্ব অর্থনীতির চেয়েও অনেক বেশি হবে। এখন পর্যন্ত যত ‘এম ক্লাস’ গ্রহাণু (উচ্চমেটাল বা ধাতব পদার্থযুক্ত)
পাওয়া গেছে, সিক্সটিন সাইকি সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর
মাঝামাঝিতে মঙ্গল আর বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যে যেখানে গ্রহাণুমণ্ডল বা অ্যাস্টেরয়েড
বেল্ট, সেখানে সিক্সটিন সাইকির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতি ৫ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ
করে এটি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রহাণুটির ২০ শতাংশ বা এরও বেশিই ধাতব।
কী আছে এতে?
বিজ্ঞানীরা
সাধারণত এটিকে ‘স্বর্ণের খনি’ নামে ডাকেন। কারণ এ গ্রহাণুটিতে যেসব ধাতব পদার্থ আছে, সেগুলো দাম অনেক।
বিজ্ঞানীরা এ গ্রহাণুটিতে বিশাল স্বর্ণের সন্ধান পেয়েছেন। এর বাইরেও প্লাটিনাম, লোহা
ও নিকেলের মতো ধাতুও প্রচুর পরিমাণে আছে এ গ্রহাণুতে। ধারণা করা হয়, গ্রহাণুটিতে থাকা
সব ধাতব পদার্থের মূল্য হতে পারে ১৫ দশমিক ৮ কোয়াড্রিলিয়ন ডলার (১৫.৮-এর পরে ১৭টি শূন্য)।
কেউ কেউ বলছেন,
গ্রহাণুটি থেকে যদি এসব মূল্যবান সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হয়, তা হলে ওই অর্থ দিয়ে পৃথিবীর
সবাইকে হাজার কোটি টাকার মালিক করা সম্ভব। কিন্তু নাসার পরিকল্পিত স্পেসশিপটি যদি সিক্সটিন
সাইকিতে পৌঁছে, তা হলেও সেখান থেকে আপাতত খনিজ আহরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই
প্রযুক্তি কারও হাতে নেই এখনো এবং কী প্রক্রিয়ায় গ্রহাণু থেকে আহরিত খনিজ পৃথিবীতে
নিয়ে আসা সম্ভব, সেটি এখনো কারও জানা নেই।