
প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনের বিকল্প হিসেবে সম্প্রতি বাজারে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর চ্যাটজিপিটি। পূর্বনির্ধারিত ও প্রশিক্ষিত ভাষাভিত্তিক এই চ্যাটবটকে মুক্তিপণ আদায়ের নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন সাইবার অপরাধীরা।
ক্যামব্রিজভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ডার্করেস এক প্রতিবেদনে জানায়, চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার আগ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সাইবার অপরাধীদের বড় অস্ত্র ছিল ই-মেইল।
ফাঁদে ফেলার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল আইডিতে একটি ভাইরাসসমৃদ্ধ লিংক পাঠাতো সাইবার অপরাধীরা। লিংকটিতে ক্লিক করলেই ব্যস, ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য হাতিয়ে নিতে পারত তারা। এরপর সেগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীদের কাছে বিপুল অর্থ দাবি করা হতো। কিন্তু চ্যাটজিপিটির কারণে এখন আর সে ধরনের লিংক পাঠানোর দরকার নেই। কারণ এখন চ্যাটজিপিটিকে কাজে লাগিয়ে অন্যভাবে যে কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব বলে মনে করে ডার্করেস।
ডার্করেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর আমাদের কাস্টমারদের আইডিতে আক্রমণ স্থিতিশীল রয়েছে। এর একটা অর্থ হলো, অপরাধীরা চ্যাটজিপিটি নির্ভর হয়ে পড়েছেন। কারণ এআইসম্পন্ন ভাষাভিত্তিক জটিল চ্যাটবটটি দিয়ে অন্যভাবে অন্যের সাইটে ঢুঁ মারা যায়। এ অবস্থায় ভাইরাসযুক্ত লিংক পাঠানো পুরনো মডেলে পরিণত হয়েছে। কারণ চ্যাটজিপিটি অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও জটিল কাজ করতে পারে। মুক্তিপণ আদায়ের ক্ষেত্রে সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে।
গত বছরের নভেম্বরে মাইক্রোসফটের অর্থায়নে তৈরি করা চ্যাটজিপিটি বাজারে আনে ওপেন এআই নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এটি মানুষের তথ্য সংগ্রহের ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। শুধু তথ্য নয়, কোনো বিষয়ে সংক্ষেপে জানতে এই চ্যাটবটের কোনো তুলনা নেই। তবে অপরাধীরা এখনও পুরোদস্তুর চ্যাটজিপিটি ব্যবহার শুরু করতে পারেনি বলে মনে করে ডার্করেস। তারা এটাকে রপ্ত করতে সার্বিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে।
ডার্করেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধীদের তৎপরতা নিয়ে চ্যাটজিপিটিকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাই তাদের উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ বাড়ার বিষয়টি সহজে অনুমেয়। এদিকে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ডার্করেসের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে। তবে নিজেদের ব্যবসা কিছুটা খারাপ গেলেও গ্রাহক ধরে রাখতে এবং নতুন গ্রাহক আকর্ষণ করতে নিজেরা কাজ করছেন বলে জানান ডার্করেসের প্রধান নির্বাহী ক্যাথি গ্রাহাম ও অর্থ বিভাগের প্রধান পপি গুস্তাফসন।
এক বিবৃতিতে এই দুই কর্মকর্তা বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমাদের ব্যবসা কিছুটা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। সম্প্রতি আমাদের আয়ও কমেছে। কিন্তু বছরওয়ারি হিসাবে ২০২২ সালে আমাদের আয় ও মুনাফা উভয়ই বেড়েছে।