বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
(এমডি) ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টাকারী
সাইফুল ইসলাম সাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন খোদ তার মা-বাবা এবং এলাকাবাসী। ধীরে ধীরে
বখাটে ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় লাগাম টানতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ছেলেকে
ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেছিলেন মা-বাবা। সাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার
দোহাজারী পৌরসভার হাছনদন্ডী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত রবিবার দুপুরে ওই এলাকায় গেলে তার বাবা
সুজন দত্ত বলেন, ‘বখাটে ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির হওয়ায় অতিষ্ঠ
হয়ে ছেলেকে ২০১৭ সালে ত্যাজ্য ঘোষণা করি। পরে সে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে। অবশ্য পরে
আবার হিন্দু ধর্মে ফেরার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ঘরে জায়গা দেওয়া হয়নি। শুনেছি ঢাকায়
গিয়ে অপরাধে জড়িয়েছে।’ এই বখাটে যদি কোনো অপরাধে জড়ায় তাহলে
তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার বলেও মনে করেন সুজন দত্ত।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে সাদকে ত্যাজ্য
ঘোষণা করেছিলেন তা মা-বাবা। জন্ম চন্দনাইশে হলেও তার বেড়ে ওঠা পটিয়ায়। দশম শ্রেণিতে
পড়ার সময় পরিচয় হয় পটিয়ার সাংসদ হুইপ সামশুল হক ও তার ছেলে নাজমুল করিম ওরফে শারুন
চৌধুরীর সঙ্গে। সাদকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে হত্যা পরিকল্পনায়
যুক্ত করেন তারা। তারই অংশ হিসেবে কৌশলে দিনমজুরের ছদ্মবেশ নিয়ে বসুন্ধরার এমডি হাউসে
প্রবেশ করেন সাদ। এরপর একাধিকবার চালান হত্যাচেষ্টা।
গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাউতুল কোরআন মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে সাদকে আটক করে পুলিশ।
বসুন্ধরার এমডিকে হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত সন্দেহে তাঁকে শুক্রবার ৫৪ ধারায় আদালতে
সোপর্দ করা হয়। গত রবিবার আদালত তাঁকে তিন দিনের রিমান্ডে দেন। তাঁকে রিমান্ডে এনে
জিজ্ঞাসাবাদ করছে ভাটারা থানা পুলিশ।
চন্দনাইশে সরেজমিনে গেলে কথা হয় সাদের
মা-বাবা, বন্ধু ও এলাকাবাসীর সঙ্গে। সাদের সঙ্গে হুইপ শামসুল হক কিংবা শারুন চৌধুরীর
সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তার বাবা সুজন দত্ত বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি
জানি না। সর্বশেষ যখন গ্রামে ফিরেছিল তখন তাকে ঘরে জায়গা না দেওয়ায় আমার সঙ্গে ঝগড়া
করে। তবে তার ফেসবুকে কিছু ছবি দেখা গেছে, সেখানে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তার ছবি
দেখা গেছে।’
তার মা রীনা বালা দে বলেন, ‘ত্যাজ্য ঘোষণার
পরও মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসতো জয় (সাদের পূর্বের নাম)। সর্বশেষ পূজার সময় এসেছিল।
হাতে দামি মোবাইল ফোন ও ঘড়ি দেখেছি। পোশাকও ছিল দামী। এসব দামি জিনিসপত্র কোথায় পেয়েছে
তা জানতে প্রশ্ন করা হলেও জয় উত্তর দেয়নি।’ তিনি বলেন, জয়ের
আচরণে মনে হয়েছে সে কোনো অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। ছেলেকে যারা ভুল পথে নিয়ে
গেছে তাদের বিচার দাবি করেন রীনা।
সাদের প্রতিবেশী হাছনদন্ডী ব্রাইট স্টার
সোসাইটির সভাপতি সুমন চন্দ্র দে বলেন, জয় মুসলমান ধর্ম গ্রহণের পর পুনরায় হিন্দু ধর্মে
ফিরেছে। কিন্তু এখন শুনছি সে মুলমান হিসেবে মাদ্রাসায় পড়ছে। সর্বশেষ পূজার সময় গ্রামে
এসেছিল। এই সময় ঘরে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বাবা ঘরে জায়গা দেননি। এই কারণে আমাদের
কাছে নালিশ দিয়েছিল। আমরা এই বিষয়ে সুজন দত্তের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা ত্যাজ্য ঘোষণার
কাগজ দেখানোর পর তাকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলি। তার স্বভাব চরিত্র ভালো ছিল না। মারধর
ও ঝগড়া বিবাদ করা তার স্বভাব।
একই বিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা নূর নবী বলেন,
‘শুরুতে শুনেছিলাম
সে মুসলমান হয়েছে। পরে তার মা তাকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। সব পাঞ্জাবিসহ
অন্য কাপড় খুলে ধুতি পরে এবং মাথার চুল ফেলে দিয়ে পুনরায় হিন্দু রীতি অনুযায়ী চালচলন
শুরু করে। গত মাসে পূজাও করে গেছে।’
সাদের বন্ধু জনি দে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমিও
ঢাকায় ছিলাম। পরে গ্রামে ফিরে এসেছি। ঢাকায় থাকতে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো। এই সময়
তার আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করি এবং সে যেন ভিন্ন জগতের বাসিন্দা হয়ে গেছে এমন ভাব ধরে
আমার সঙ্গে। পরে রাগ করে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দিই।’
প্রতিবেশী সুবল চন্দ্র দে বলেন, জয় দত্ত ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তাকে পুনরায় তার মা হিন্দু ধর্মে নিয়ে আসে। সে গ্রামে এসে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝগড়া ফ্যাসাদ করে। ছেলে হিসেবে ভালো না। এখন শুনছি যে নাকি হত্যাচেষ্টা মিশনে যুক্ত হয়েছিল।’