সিঙ্গাপুর নারী ফুটবল দলের মরোক্কান কোচ
করিম বেনশেরিফা নিজের লক্ষ্যটা লুকাননি। তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক
প্রীতি ম্যাচকেই নিয়েছেন আগামীর প্রস্তুতি হিসেবে। সিঙ্গাপুর নিজেদের মেয়েদের দলটিকে
নতুন করে গড়ে তুলতে চাইছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ সেই প্রস্তুতিরই অংশ। আজ
বিকেল চারটায় কমলাপুরের শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাবিনা–সানজিদা–তহুরা–মাসরুরাদের বিপক্ষে
মাঠে নেমে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে চান সিঙ্গাপুর কোচ বেনশেরিফা।
মেয়েদের ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গাপুরের
অবস্থান ১৩০। বাংলাদেশের ১৪২। সিঙ্গাপুরের কোচ অবশ্য নিজেদের বাংলাদেশের চেয়ে খুব এগিয়ে
রাখতে চান না, ‘ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে আমরা এগিয়ে। তবে
আমি মনে করি না, আমরা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশ খুব ভালো দল। ম্যাচটা যথেষ্ট
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই হবে বলে মনে করি আমি।’
সিঙ্গাপুর দলটি আসলে কেমন? বাংলাদেশের
কোচ সাইফুল বারী টিটু মনে করেন, শারীরিক দিক দিয়ে দলটি বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে
থাকলেও মাঠে লড়াইটা হবে সমানে–সমান, ‘ওদের দলটিকে যা
দেখেছি, মনে হলো শারীরিক দিক দিয়ে ওদের মেয়েরা এগিয়ে। ওদের লম্বা খেলোয়াড় কয়েকজন আছে।
লম্বা খেলোয়াড়েরা বাতাসে সুবিধা পাবে। কিন্তু আমরাও পিছিয়ে নেই। আমার দলে কুশলী খেলোয়াড়
আছে। আমার দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। মাঠের লড়াইটা বেশ সমানে–সমানই হবে বলে
আমি মনে করি।’
সাবিনা খাতুনদের কাছে সিঙ্গাপুর খুব একটা
অপরিচিত প্রতিপক্ষ নয়। সিঙ্গাপুরের খেলোয়াড়দের মুখগুলো ভালোই চেনা বাংলাদেশের মেয়েদের।
গত সেপ্টেম্বরে চীনের হাংজু এশিয়ান গেমসে গেমস ভিলেজে সিঙ্গাপুর দলের সঙ্গেই ছিল বাংলাদেশের
মেয়েরা। প্রতিদিনই সকালের নাশতার টেবিলে দেখা হতো দুই দলের খেলোয়াড়দের। সেই সিঙ্গাপুর
আবার মাঠের প্রতিপক্ষ হিসেবে কিছুটা ‘অপরিচিত’ই। এ দলটার সঙ্গে
একটাই ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ৬ বছর আগে ৩-০ গোলে হারা সেই ম্যাচটিতে খেলেছিলেন অধিনায়ক
সাবিনা খাতুন।
বাংলাদেশ হাংজু এশিয়ান গেমস থেকে একটা
পয়েন্ট অন্তত নিয়ে ফিরতে পেরেছে। সিঙ্গাপুরের এশিয়াড–অভিজ্ঞতা মোটেও
ভালো নয়, বাংলাদেশের তুলনায় তো বটেই। দুই দলই এশিয়াডে মেয়েদের ফুটবলের দুই ফাইনালিস্টকে
পেয়েছিল নিজেদের গ্রুপে। বাংলাদেশ জাপানের কাছে ৮-০ গোলে হেরেছিল। উত্তর কোরিয়ার কাছে
সিঙ্গাপুর হেরেছিল ১০-০ গোলে। সিঙ্গাপুর যে গ্রুপে খেলেছিল, তাতে দল ছিল দুটিই। সে
কারণে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও আরেকটি ম্যাচ খেলেছিল তারা। সেটিতে হার ৭-০ গোলে। সিঙ্গাপুরের
সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোর ফলে চোখ বোলালেও সাবিনারা সাহস পেতেই পারেন। সর্বশেষ আট ম্যাচে
তাদের জয় দুটি। পাকিস্তান ও লাওসের বিপক্ষে।
তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচের অনভ্যাস সিঙ্গাপুরের
বিপক্ষে ভোগাতে পারে সাবিনাদের। গত বছর সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের
মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর থেকেই বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলটা একটু যেন এলোমেলো।
সাফ জেতার পর ১০ মাস আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলারই সুযোগ মেলেনি বাংলাদেশের মেয়েদের। ‘বসে থাকার’ এই সময়টা অনেক
ওলট–পালটও দেখেছে
বাংলাদেশের মেয়েরা। কয়েকজন নিয়মিত খেলোয়াড় অভিমান করে কিংবা পারিবারিক কারণেই অবসরে
গেছেন। দীর্ঘদিনের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন দায়িত্ব ছেড়েছেন। গত জুলাই মাসে নেপালের
বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ম্যাচ–অনুশীলনের অভাবটা
ভালোই বোঝা গিয়েছিল। শুধু অনুশীলনকে পুঁজি করে সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে বিশ্বমানের
প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে হয়েছে মেয়েদের। ফল যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। সাবেক
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জাপানের কাছে ৮–০ গোলে উড়ে যাওয়ার পর ভিয়েতনামের বিপক্ষে
৬–১ গোলের হার।
নেপালের বিপক্ষে যে ম্যাচটিকে জয়ের লক্ষ্য বানিয়ে খেলতে যাওয়া হয়েছিল, জেতা হয়নি সেটিও
(১–১ ড্র)। সব মিলিয়ে
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ম্যাচ না খেলতে পারার ব্যাপারটি ভোগাচ্ছে দলকে। এর
ওপর দলের সবচেয়ে কুশলী ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকারের অনুপস্থিতি চিন্তায় ফেলছে সবাইকে।
সিঙ্গাপুরের মান যা–ই হোক, পেশাদার
কাঠামোর মধ্যেই তাদের বিচরণ। দেশটিতে মেয়েদের ফুটবল লিগ নিয়মিত। ২০২৩ সালেই সিঙ্গাপুর
আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ৮টি। সামনেও যে প্রতিটি ফিফা উইন্ডো ব্যবহার করার পরিকল্পনা
তাদের, সেটি কোচ বেনশেরিফা নিজেই বলেছেন, ‘নিজেদের দলকে
আমরা নতুন করে তৈরি করছি। সামনে ফিফা উইন্ডোতে যে ম্যাচগুলো আছে, সেগুলো খেলব। এর আগে
বাংলাদেশে এসেছি নিজেদের ঝালিয়ে নিতে। আমাদের প্রস্তুতি কতটা হয়েছে, আরও কতটা লাগবে,
সেটা বুঝতে পারব বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে। এশিয়াডে আমরা বাংলাদেশ দলকে দেখেছি। দলটা
যথেষ্ট ভালো। আমরা এ ম্যাচটিকে প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছি।’
সিঙ্গাপুরের কোচ বেনশেরিফা এমন কথা বলতে
পারছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী জানেন না, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এ দুটি আন্তর্জাতিক
ম্যাচ খেলার পর আবার কবে জাতীয় দল মাঠে ফিরবে। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে
ম্যাচের আগে নিজেদের দাবিটা জানিয়ে রেখেছেন, ‘আমরা সারা বছর
ট্রেনিংয়ের মধ্যেই থাকি। কিন্তু ম্যাচ খেললেই আসলে বোঝা যাবে, এই ট্রেনিং কতটা কাজে
এসেছে। আমরা এমন ম্যাচ বেশি করেই খেলতে চাই। নিয়মিতই খেলতে চাই।’
নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ঘাটতি
নিয়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধানটা বাংলাদেশের মেয়েরা অতিক্রম করতে পারবে কি না, সেটি
আজ কমলাপুরের শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামেই দেখা যাবে।