রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধ:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন। দ্বিতীয় ধাপে জেলায় ১৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন হলেও সর্বাধিক ঝুকিপূর্ণ হিসেবে কায়েতপাড়া ইউনিয়নকে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে ইউনিয়নে মোতায়েন করা হয়েছে র্যাব, পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্য। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রতিনিয়ত চলছে দাঙ্গা হাঙ্গামা লুটপাট অগ্নিসংযোগ আর সংঘর্ষ। কায়েতপাড়ার একটি ওয়ার্ডেই পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রয়েছে ৫ হাজারের অধিক। এছাড়া বেড়েছে বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা। মন্ত্রী গাজী আর তার ছেলে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। এসব কারণে কোনঠাসা হয়ে পরেছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীরা। মন্ত্রীপুত্রের উস্কানীমূলক বক্তব্য আরও উত্তপ্ত হচ্ছে ইউনিয়ন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতিদিনই চলছে সরকারি দলের মিছিল আর মোটরসাইকেল মহড়া। এসব কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ স্থানীয় ভোটারদের।
জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সারাদেশের অন্যান্য ইউনিয়নের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নে চলছে নির্বাচন। এর মাঝে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সেটিকে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছেন স্থানীয় প্রশাসন। এ ইউনিয়নে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে আছে ভাসমান লক্ষাধিক মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছে ২২ হাজার ভোটার। সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত চনপাড়া বস্তিতে পুলিশের তালিকাভুক্ত অপরাধী রয়েছে ৫ হাজার। এখানে অস্ত্র ব্যবসা থেকে সকল ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ড চলে নির্বিগ্নে। নিবার্চনকে কেন্দ্র করে চনপাড়ার সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হয়েছে উঠেছে। সরকারি দলের প্রার্থীকে জেতাতে এই ইউনিয়নে রূপগঞ্জের এমপি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) ও লোকজন কোনঠাসা করে রেখেছেন প্রতিদ্বন্ধী সকল প্রার্থীদের। এছাড়া মন্ত্রীর ছেলে গাজী গোলাম মর্তূজা পাপ্পা কায়েতপাড়ার বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন মন্ত্রীর স্ত্রী তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজীসহ উপজেলার সর্বপ্রান্তের হাজার হাজার মানুষ। শত শত মোটর সাইকেলে শোভা যাত্রা করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন তারা। গত ২৭ অক্টোবর প্রতিক বরাদ্দের পর থেকে প্রতিদিন কায়েতপাড়ার বিভিন্ন গ্রামে সংঘর্ষ হামলা লুটপাট ভাংচুর আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে কায়েতপাড়া এখন আতংকের জনপদ। তাই শান্তিপূর্ন ভোট গ্রহণ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ভোটারদের মাঝে। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন বলছে যে কোন কিছুর বিনিময়ে কায়েতপাড়ায় একটি অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবেন তারা। এর মাঝে ইউনিয়নে ৩ প্লাটুন বিজিবিসহ মোতায়েন রয়েছে র্যাব পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশসহ বেশ কয়েক প্লাটুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
এসব ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ূর রহমান বলেন, যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা কায়েতপাড়ায় একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সেখানকার মানুষকে উপকার দিবো। ইতিমধ্যে সে এলাকার সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোঃ জায়েদুল আলম বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য আমরা কায়েতপাড়ায় সর্বোচ্চ শক্তির প্রয়োগ শুরু করেছি। কায়েতপাড়ায় হয় সন্ত্রাসী থাকবে না হলে আমরা থাকবো। বহিরাগতদেও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা সেখানে চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশী শুরু করেছি। এছাড়া অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের আটকের জন্য আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, কায়েতপাড়াকে সর্বাধিক গুরুত্ব নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য কাজ করছি আমরা। এই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান করছেন। যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা কায়েতপাড়াবাসীকে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিবো।