রাশিয়ায় চলছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া এই ভোট চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দারাও এ ভোটে অংশ নিচ্ছেন। রাশিয়ার একটি স্বাধীন ভোট পর্যবেক্ষক গ্রুপ বলছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর এবারই রুশ ইতিহাসের সবচেয়ে গোপন ভোট হচ্ছে।
রুশ সংস্থা গোলোসের সহকারী চেয়ারম্যান স্ট্যানিস্লাভ আন্দ্রেচুক টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, রাশিয়ায় এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক মেশিনে ভোট হচ্ছে। তিন দিন ধরে এই ভোট হবে, যা বিষয়টিকে আরও অস্বচ্ছ করে তুলছে।
তিনি বলেন, ‘এটি রাশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে গোপন নির্বাচন।’
ক্রেমলিন দাবি করছে, সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শুক্রবার থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলছে। তাদের পূর্বাভাস বলছে, এবারও পুতিন রাশিয়ায় ভূমিধস জয় পাবেন।
নির্বাচন কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, ৭০৬ জন বিদেশী পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এরমধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি রুশ পর্যবেক্ষকই প্রার্থী, রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠন দ্বারা মনোনীত।
নির্বাচনের প্রথম দিনে বেশি ভোটারের উপস্থিতির বিষয়ে আন্দ্রেচুক মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে বসদের চাপে ভোটাররা ভোট দিতে এসেছেন। মানুষজন সকালে এসেই ভোট দিচ্ছেন কারণ বসরা তাদের এমনটি করতে চাপ দিচ্ছেন। কাজের দিনে ভোট হওয়ায় এটি করা খুব সহজ।
ছয়টি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এবং সংস্থার পরিচালকরা ভোট দেওয়ার জন্য কর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারজন জানান, তাঁদেরকে ভোট দেওয়ার প্রমাণ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক কর্মী বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরিতে সবাইকে ভোট দেওয়ার পর সেলফি পাঠাতে বলা হয়েছে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে জয়ী হলে পঞ্চমবারের মতো রুশ প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি এবং সেক্ষেত্রে তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়বে।
ভোট শুরুর আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝতে পারছেন যে আমাদের দেশ কী কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রায় সব ক্ষেত্রেই কী জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’
এবারের নির্বাচনে পুতিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বেশ কয়েজন প্রার্থী। তাঁরা হচ্ছেন- ডানপন্থী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপিআর) প্রধান লিওনিড স্লুটস্কি, কমিউনিস্ট প্রার্থী নিকোলে খারিতোনভ এবং উদার মধ্যপন্থী নিউ পিপলের প্রতিনিধিত্বকারী ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ।
রাশিয়ার নির্বাচন কমিশনে তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখণ্ড এবং ইউক্রেনের রুশ ভূখণ্ড দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া, খেরসন এবং ক্রিমিয়া মিলে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ২৩ লাখ। সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী রুশ নাগরিকদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ১৯ লাখ।