
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন কাচা রাস্তায় অবৈধ ট্রাক্টর (কাঁকড়া) গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তা গুলো যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
গ্রামীণ বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য অবৈধ ছয় চাকার বালুভর্তি ট্রাক্টর (কাঁকড়া) ব্যাপক হারে দাপিয়ে বেড়ার ফলে একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এসকল রাস্তাগুলো। ভেঙ্গে পড়ছে এসব রাস্তার অবকাঠামো। চরম ভোগান্তিতে পড়ছে এখানকার মানুষজন। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জান ও মাল।
নিত্যদিনই বালুভর্তি ট্রাক্টরগুলোর চাপে রাস্তাগুলোতে ঠিকমত যাতায়াত করতে পারছে না অন্যান্য যানবাহন। এতে করে চলাচলের দুর্ভোগে পড়েছে এ এলাকার বাসিন্দারা।
এমনি চিত্র দেখা গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ দারা বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন কাচা রাস্তায়। বিশেষ করে উপজেলার ডিসি রাস্তা হতে আমবাড়ি, তেলির মোড়, কাজাইকাটা, কাউনিয়ার চর, চর গয়টা পাড়াসহ উত্তর কাউনিয়ার চর গ্রামের রাস্তাগুলোর কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বেহাল দশা। এ সড়কগুলোর সঙ্গে রৌমারী উপজেলা শহর এবং হাসপাতালে যাওয়ার মূল সড়ক যুক্ত থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাতায়াতকারীদের।
অতিরিক্ত হারে বালুবাহী ট্রাক্টর চলাচলের ফলে রাস্তায় উড়ছে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালি। এই সড়কগুলো দিয়ে একটি গাড়ি চলে গেলে পেছনে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত ধুলাবালিতে অন্ধকার থাকছে। বাতাসে ধুলাবালি উড়ার কারনে শাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। রাস্তাগুলো দিয়ে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও সাইকেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখানকার মানুষদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। আবার অনেকে কোন উপায়ন্ত না পেয়ে বাধ্য হয়ে চলাচল করছেন পায়ে হেঁটে।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর ও তেলিরমোড় এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল হাই ও নুরুল ইসলাম, রাকিব হাছান বলেন, 'আমরা অতি কষ্টে জীবন যাপন করছি। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একাধারে এই রাস্তাগুলো দিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের কারণে শতশত জায়গায় খানাখন্দে ভরে গেছে। অতিরিক্ত কাঁকড়া গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তার মুল মাটি উঠে গেছে। যার কারণে প্রচুর পরিমাণে ধুলা উড়ছে।'
মমিনুল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, 'কী আর করমু ভাই! আগে তো নিজের জীবন বাঁচাতে হবে। ধুলার কারণে নিজেরাই থাকতে পারি না। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা স্কুলে গেলে তাদের জন্য চিন্তায় থাকতে হয়। কখন যে কোন দুর্ঘটনা ঘটে। কেননা ধুলার কারণে তো সামনে কিছুই দেখা যায় না।'
রাস্তার দু-পাশে থাকা বাড়ি ঘরের মানুষজন এবং দোকানিরা বলেন, 'শুকনো মৌসুমে ধুলা আর বর্ষায় কাদা। অনেক সমস্যার মধ্যে আছি আমরা। দুই-এক ঘণ্টা পরপর রাস্তায় পানি দেওয়ার দরকার। অনেকবার কাঁকড়া গাড়ির মালিকদেরকে পানি দিতে বলা হলেও তারা আমাদের কথায় কোনো কান দেয়না।'
দাঁতভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সাথী আকতার, আলপনা খাতুন, লিপি পারভিন বলেন, 'সকালে বাড়ি থেকে যে জামাকাপড় পড়ে স্কুলে আসি, তা ধূলার কারনে নষ্ট হয়ে যায়। সেই জামা কাপড় পড়ে পরের দিন আর স্কুলে আসা যায় না। এক সেট কাপর একবার ছাড়া দুইবার পড়া যায় না। রাস্তায় অতিরিক্ত কাঁকড়া গাড়ি চলাচল করায় সবসময় ধুলা উড়ছে সামনে কিছুই দেখা যায় না।'
একই কথা বলেন দাঁতভাঙ্গা হাইস্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ রনি হাছান, আরিফুল ইসলাম, বাবুল মিয়া। তারা বলেন, 'রাস্তায় অতিরিক্ত ধুলার কারণে আমাদের সব সময় সর্দিকাশিসহ শাসকষ্ট লেগেই থাকে অতিরিক্ত কাঁকড়া গাড়ি চলাচলের কারণে আমাদের স্কুলে যাতায়াত করা খুবি অসুবিধা হয়ে পরেছে।'
১নং দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবু সাঈদ মিয়া বলেন আমার ওয়ার্ডের রাস্তা গুলোর 'খুবি বেহাল দশা! কিছু রাস্তায় অতিরিক্ত বালু বোঝাই কাঁকড়া গাড়ি চলার কারনে এই রাস্তা গুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে।'
এবিষয়ে রৌমারী উপজেলার ১নং দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম (রিয়াজুর) বলেন, ‘কাঁচা রাস্তা দিয়ে তো ট্রাক্টর চললে রাস্তা খারাপ হবে এটা স্বাভাবিক। এসব গাড়ি চালকদের বলা হয়েছে রাস্তায় পানি দিয়ে গাড়ি চালাতে। যাতে মানুষজনের অসুবিধা না হয়। আমার ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর (কাঁকড়া) রয়েছে। এসব গাড়ি বেশি পরিমাণে চলাচল করার ফলে রাস্তাগুলোর সমস্যা হয়েছে। অন্যন্য বাহনগুলো এবং মানুষ জন চলতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।’