চট্টগ্রামের
কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ ও পূর্বপাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী ও দখলদারদের তালিকা জমা
দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সিএস ও আরএস অনুযায়ী উভয় পাশের জরিপ করে
প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া নদীর
দক্ষিণ ও পূর্বপাশের জায়গা দখল করে মাটি ভরাট বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ
ও বে-আইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের
মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের
সচিব, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা
হয়েছে।
এ সংক্রান্ত
বিষয়ে শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম
ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি
করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি
জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
গত ১২ নভেম্বর
প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করে মানবাধিকার
সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। রিটকারীরা হলেন অ্যাডভোকেট
মো. ছরওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভূইয়া এবং অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আজ শুনানিতে
মনজিল মোরসেদ বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ ও পূর্বপাশে
অবৈধ দখল হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ কাজের জন্য নদীর মূল প্রশস্ততা অনেক কমিয়ে অবৈধ দখলকারীদের
সুযোগ করে দিয়েছে যা আইন ও সরকারি নিয়মকানুন পরিপন্থি। পরিবেশ আইন, ১৯৯৫ ও জলাধার সংরক্ষণ
আইন-২০০০ এর বিধান রয়েছে জলাধার ভরাট/দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কিন্তু বিবাদীরা
চোখ বুঝে সব সহ্য করছে।
তিনি বলেন,
এমনকি নদী কমিশনের চেয়ারম্যান সরেজমিনে এলাকা ভ্রমণ করে ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে দেখতে
পেয়েছেন কর্ণফুলী ড্রাইডক নদীর জায়গা দখল করছে এবং ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের দখল কর্মকাণ্ড বর্তমানেও চলছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত
প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়, কর্ণফুলী নদী দখল করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় তৈরি হচ্ছে
ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘ড্রাই ডক’। এতে
নদী সংকুচিত হচ্ছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বলছে, নদীসংক্রান্ত আইন ও হাইকোর্টের রায়
লঙ্ঘন করে এই স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এখনই সব ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ করা দরকার।
ড্রাই ডক হচ্ছে
বড় বড় জাহাজ বা নৌযান তৈরি, সংস্কার বা রং করার জন্য শুকনো কোনো স্থান। কর্ণফুলী ড্রাই
ডক লিমিটেডের মালিক আবদুর রশিদ। ইঞ্জিনিয়ার রশিদ নামে ব্যবসায়ী মহলে তিনি পরিচিত।
কর্ণফুলী নদীর
বাম তীরে আনোয়ারা উপজেলার বদলপুরা মৌজায়, সাগরের মোহনা থেকে দুই কিলোমিটার উজানে এই
ড্রাই ডক তৈরি হচ্ছে। যেখানে এই নির্মাণকাজ চলছে, নদীর ঠিক অন্য পাড়ে একইভাবে নদী দখল
করে আরও স্থাপনা তৈরি হয়েছে, কিছু স্থাপনা তৈরির প্রস্তুতি চলছে। নদীটি এখানে সংকুচিত
হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এই স্থানে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৪৫০ মিটারের কিছু বেশি, দুই দশক আগেও
প্রস্থ ছিল প্রায় এক হাজার মিটার।