
রোজায় স্বাভাবিকভাবেই
খাদ্যাভ্যাসে আসে বড় পরিবর্তন। সাধারণত আমরা দিনে তিনবেলা খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু
রোজার সময়ে খাবারের এই পরিচিত নিয়ম পাল্টে যায়। ভোররাতে সেহরি খেয়ে রোজা শুরু হয়, শেষ
হয় মাগরিবের আজান শুনে ইফতার করার মাধ্যমে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে
রোজা পালন করেন মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা। বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে আলাদা খাদ্যাভ্যাস
বলেই এসময় খাবারের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হতে হবে। এমন সব খাবার খেতে হবে, যেগুলো
শরীরের জন্য বেশি উপকারী। সেহরি, ইফতার ও রাতের খাবারে খেতে হবে স্বাস্থ্যকর সব খাবার।
রমজানে কোন
কোন খাবার খাবেন আর কী কী খাবেন না, সে বিষয়ে আজকের পরামর্শ।
অতিরিক্ত লবণ: অতিরিক্ত
লবণ বা কাচা লবণ খাবেন না। কারণ লবণ পানির তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। রোজায় বেশিরভাগ মানুষের
ক্ষুধার চেয়ে পানির তৃষ্ণায় বেশি কষ্ট পেতে দেখা গেছে।
ফ্রাইড ফুডস: ভাজা
পোড়া একদমই না। ভাজা পোড়া খাবার এ তেলের অধিক্য থাকে এবং অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকার
পরে ভাজাপোড়া পেটে গ্যাসের সমস্যা করে। তাছাড়া
ওজন আধিক্যের ব্যপার তো আছেই।
সাদা বা রিফাইন্ড খাদ্যদ্রব্য: ভাত, সাদা আটা, চিনি এবং চিনি জাতীয় খাবার। এই খাবারগুলো তে প্রচুর
পরিমাণে সুগার থাকলেও পুষ্টির পরিমাণ খুব কম। এই খাবারগুলো সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি দিলেও
বেশিক্ষণ থাকে না।
চা বা কফি: চা
বা কফি খাবার অভ্যাস যাদের আছে, তারা চেষ্টা করবেন শুধুমাত্র ইফতারের পর পরই পান করতে।
কারণ চা/কফি ডায়ারিউটিক, অর্থাৎ ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ তৈরি করে ফলে দেহে পানি শূন্যতা
দেখা দিতে পারে।
সবশেষে সেহরি
বা ইফতার এ একদমই বেশি বেশি খাওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন এবং
রমজানে সুস্থ থাকুন।
কী কী খাবেন
* প্রচুর পানি।
ইফতার থেকে সেহেরির মাঝের সময় তাতে কমপক্ষে ৩ লিটার পানি গ্রহণ করুন। মানে ৮-১০ গ্লাস
পানি প্রতিদিন।
* জটিল শর্করা
গ্রহণ করুন সেহেরিতে। কারণ তা অনেক্ষণ সময় লাগে হজম হতে। ফলে সারাদিন ক্ষুধা অনুভব
হতে দেয় না। জটিল শর্করার মধ্যে আছে বিভিন্ন শাক-সবজি, সিম, বাদামি চাল, গমের আটা,
বীজ জাতীয় খাবার ইত্যাদি।
* ইফতারের শুরুটা
খেজুর দিয়ে করতে পারেন। খেজুর এ আছে প্রাকৃতিক চিনি যা আপনাকে তৎক্ষণাৎ শক্তি দিবে।
তা ছাড়াও এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এবং মিনারেলস।
* ডাবের পানি
রাখতে পারেন ইফতার এ। ডাবের পানি শরীরের ইলেক্ট্রলাইট ব্যলেন্স ঠিক রাখে এবং শরীরকে
পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে।
* ইফতারে একটি
সুষম খাবার প্লেট সাজানোর চেষ্টা করুন যে প্লেটে থাকবে রমজানের মিষ্টি (খেঁজুর), ফল,
১টি ভারী খাবার, সালাদ, স্যুপ ইত্যাদি। ফল ও সবজিতে আছে জটিল শর্করা যা পেট ভরপুর রাখবে।
কিন্তু ক্যলোরি কম এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য থেকেও রক্ষা করবে।
* সেহেরিতে
আমরা অনেকেই ক্ষুধা লাগবে ভেবে অতিরিক্ত ভাত খেয়ে ফেলি। আসলে এই অতিরিক্ত খাবার আমাদের
কোনো কাজেই আসে না বরং ওজন বাড়ায়। তাই সেহেরিতে শাকসবজি বেশি খান কারণ ফাইবার অনেকক্ষণ
পর্যন্ত পেটে থাকে এবং ক্ষুধা অনুভব কম হয়।
* যারা ওজন
কমাতে চাচ্ছেন তারা ইফতারের আগে ব্যয়াম করুন। কারণ এসময় শক্তির জন্য অন্য কোনো খাবারের
সোর্স না পেয়ে দেহ ফ্যট ভাংতে থাকে।
রমজান মাসে
একটু ভেবে চিনতে খাওয়া দাওয়া করলে কোনো কষ্ট ছাড়াই সিয়াম পালন করা যাবে। তাই একটু
সচেতন হই এবং সুস্থ ও সুন্দরভাবে সিয়াম পালন করি। শুভ হোক মাহে রমজান।