শুভ্র শুশ্রুষা
মণ্ডিত চেহারা, ধবধবে সাদা রঙের পাঞ্জাবি এমন আধ্যাত্মিক চেহারার এই ব্যক্তিকে সন্দেহের
চোখে দেখবে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শুধু উনার বাহ্যিক লেবাস অথবা চেহারা দেখেই
নয় তার নানান ভেল্কিবাজিতে যে কোনো সাধারণ মানুষের মধ্যে সাধু বাবার 'অলৌকিক ক্ষমতা'
সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি হতেই পারে।
চোখের পলকে মাটি
তুলে হাতের জাদুতে স্যাকারিন মিশিয়ে মিষ্টি মাটি তৈরি করে মানুষকে খাওয়ানো কিংবা কাগজে
ফু দিয়ে আগুন ধরানো কি না পারেন তিনি!
এর পর আপনার সমস্যা
সমাধানে বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন পূজা-অর্চনা করে আপনাকে আস্থায় আনবেন এই সাধু। তার
পর সময় সুযোগমতো খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সব রোগমুক্তির 'মহাপ্রসাদ' খাওয়াবে
বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে!
এভাবেই মানিকগঞ্জে
রাতের আঁধারে এক পরিবারের সব সদস্যকে অচেতন করে শরীরের স্বর্ণালংকার, টাকা ও মোবাইল
সেটসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে চম্পট দেন প্রতারক ওই 'সাধু বাবা' বাচ্চু প্রধান (৭৩)।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায় এমনই এক
নাটকীয় ঘটনা ঘটে। একই পরিবারের ছয় সদস্যকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত 'প্রসাদ' খাইয়ে রাতের
আঁধারে এই প্রতারক লুটে নেয়- নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন।
ঘটনার দিন অনেক
বেলা হয়ে গেলেও অচেতন ৬ ব্যক্তির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা খবর দেন স্থানীয়
কাউন্সিলর আবু মোহাম্মদ নাহিদকে। তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে একই বাড়ির তিনটি ঘরে
ওই ছয় সদস্যকে অচেতন ও মুমূর্ষু অবস্থায় পান।
একই পরিবারের
ছয় সদস্যের এই রহস্যজনকভাবে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন শুনে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার (সদর সার্কেল) ভাস্কর সাহা পিপিএম ও সদর থানার ওসি আকবর আলী খান মানিকগঞ্জ থানা
পুলিশের টহলদলসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের সহয়াতায় অজ্ঞান ওই ছয় সদস্যকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা
করেন।
পরবর্তীতে প্রায়
২৪-৩৬ ঘন্টা পর তাদের জ্ঞান ফিরলে তাদের অজ্ঞান হওয়ার কারণ সম্পর্কে পুলিশ জানতে পারে।
এই বিষয়ে প্রাথমিকভাবে
পুলিশের পক্ষ থেকে একটি জিডি করে রাখা হয়। পরিবারের অভিভাবক পঙ্কজ কুমার মণ্ডল সুস্থ
হয়ে থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ভাস্কর
সাহা গোয়েন্দা তথ্য ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক ওই সাধুবাবাকে শনাক্ত করে
তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
গত ১৮/সেপ্টেম্বর
মানিকগঞ্জ থানার এসআই টুটুল উদ্দিন ও এসআই মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি চৌকশ পুলিশ
দল প্রতারক ও চোরকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানায় অভিযান চালান।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির পাশের পুকুরে ঝাঁপিয়ে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্ত
সাধুবাবার বেশধরা প্রতারক বাচ্চু প্রধান (৭৩)।
তার বাড়ী মতলবের
দক্ষিণের নারায়নপুর গ্রামে। ৬ সন্তানের জনক বাচ্চু প্রধান পুলিশের কাছে জানিয়েছেন,
তিনি ৭/৮ বছর ধরে এধরনের প্রতারণার কাজ চালিয়ে আসছেন।
এসআই মনিরুজ্জামান
পুকুরে ঝাঁপিয়ে পরে তাকে পানি থেকে উদ্ধার করে গ্রেফতার করেন। এইসময় বাচ্চু প্রধানের
স্বীকারোক্তি মতে তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় লুন্ঠিত মোবাইল, স্বর্ণালংকার ও নগদ
অর্থ ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত প্রতারক একই কায়দায় ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষকে
অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। তাকে মানিকগঞ্জ থানায় রুজুকৃত মামলায় গ্রেফতার করেছে।
পরে রবিবার আসামি আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে,
প্রতারক বাচ্চু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার তার ব্যাপারে কোনো রিমাণ্ড আবেদন
চাওয়া হয়নি।