জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ট্রান্সফিউশন
মেডিসিন বিভাগের উদ্বোধনের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টায় (৮ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন
হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ।
আলোচনা সভায়
প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি,এমপি উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক
ড. মুহাম্মদ আলমগীর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ।
প্রধান অতিথির
বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের আরও মমত্ববোধ
থাকা উচিত। যে কারণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, 'আপনাদের মানবতাবোধ থাকা দরকার, মনুষ্যত্ব
থাকা দরকার, সততা থাকা দরকার। না হলে কোন জাতি কোনদিন বড় হতে পারে না।' এমনকি জাতির
পিতা এটাও বলেছিলেন যে, 'শেখ মুজিবকে বেঁটে খাওয়ালেও সোনার বাংলা হবে না, যদি আমরা
সোনার মানুষ করতে না পারি।' বঙ্গবন্ধু একজন দূরদর্শী বিশ্বনেতা ছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত
দেশকে এগিয়ে নিতে যে গবেষণার প্রয়োজন তা তিনি অনুধাবন করেছিলেন এবং প্রয়োজনী উদ্যোগ
নিয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে আমাদের দেশে চিকিৎসকরা আসছে, তাদের সাথে
আমরা কোলাবোরেশন করছি। তাদের সাথে আমাদের টেকনোলজি ট্রান্সফারেও অনেক কাজ হচ্ছে। আমাদের
চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ যারা বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন, তারা যখন আমাদের দেশে এসে টেকনোলজি
ট্রান্সফার করছেন, একইভাবে বিদেশি চিকিৎসকরাও আসছেন। এসব ক্ষেত্রে আমরাই যে তাদের থেকে
শিখছি, তা কিন্তু নয়। অনেক দেশ আছে, যারা সারা বছরেও যা রোগী না দেখেন, আমাদের চিকিৎসকরা
এক সপ্তাহেই তা দেখছেন। আমাদের এই অভিজ্ঞতারও অনেক দাম আছে। তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য
ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে, আমাদের দেশে অনেক গবেষণা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা এই সুযোগটা করে দিচ্ছেন। তিনি নতুন করে অনেকগুলো ৫০০ বেডের হাসপাতাল করে দিয়েছেন,
জেলায় জেলায় মেডিকেল কলেজ করে দিচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা তৃণমূল
পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। এসবের পিছনে অবশ্যই চিকিৎসক, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদেরও
অবদান রয়েছে। ডা. দীপু মনি, এমপি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের
আমলে দেশে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে
ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় জনগণ নৌকায় ভোট দেবেন।
বিশেষ অতিথির
বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড.
মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতে গবেষণার কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করতে
দেশের ওষুধ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। যা ওষুধ শিল্পের সামাজিক দায়বদ্ধতা
সঠিকভাবে পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি
ফুটিয়েছিলেন। এদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জীবন দিয়ে গেছেন। আমরা
যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে দেশকে আরো এগিয়ে
নিতে পারি সেটাই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন।
সভাপতির বক্তব্যে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন
আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু রক্তদানের কথাই বলেন নি, রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার
কথাও বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই এ দেশে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের গোড়াপত্তনের শুরু
হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে
দেশের মানুষের আশা ভরসার প্রতীক। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট,
ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট, কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন, সার্জারির মাধ্যমে জোড়া শিশু আলাদা
করা ইত্যাদি ব্যয়বহুল ও জটিল চিকিৎসা সেবা স্বল্পব্যয়ে দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্বের
সাথে তাল মিলিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেডিক্যাল
শিক্ষায় উচ্চতর কোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আরও দক্ষ করার
লক্ষ্যে এক বছরের ফেলোশিপ ডিগ্রি চালু করা হয়েছে। গবেষণা ও শিক্ষাকার্যক্রমে জোরদার করতে দুই দফায় ৫৪ জন শিক্ষক
চিকিৎসককে পিএইচডি প্রোগ্রাম এনরোলমেন্ট করা হয়েছে।
আলোচনা সভায়
অন্যানদের মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক)
অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক
ডা. মোঃ আসাদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক
ডা. শেখ সাইফুল ইসলাম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা.
ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সার্জারি
অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার
রিজভী, বেসিক সাইন্স এন্ড প্যারা ক্লিনিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক,
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পাল, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক
ডা. মানিক কুমার তালুকদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কাউন্সিলর
সুব্রত বিশ্বাস প্রমুখসহ ট্রান্সফিউশন মেডিসিন
বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সকাল
১০টায় এ-ব্লকে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ডা.
মোঃ শারদ্দিন আহমেদ পিআরপি সেন্টারের শুভ উদ্বোধন করেছেন। এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্বোধনের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।