নরসিংদী প্রতিনিধি
রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের এলাকা বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি ও পাঁড়াতলীর চর। এই দুই চরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে শুধু চোখে পড়ে কাঁচা পাকা বাঙ্গি। যেদিকে তাকায় ফসলের মাঠের সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দেয় লোভনীয় বাঙ্গি। এবছর হয়েছেও বাঙ্গির বাম্পার ফলন। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় রায়পুরার দুই চরের বাঙ্গি চাষীদের চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি। বেশি লাভ হওয়ায় গেল বছরের তুলনায় এই বছর ৭ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতেও বাঙ্গি আবাদ করেছে কৃষকরা।
পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে প্রতি বছরই এই দুই চরে চাষ করা হয় এঁটেল ও বেলে নামে দুই প্রকারের বাঙ্গি। রোজাদারদের ইফতারে এই বাঙ্গি অনেকটাই তৃপ্তি এনে দেয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রায়পুরার বাঙ্গি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। এ অঞ্চলের বাঙ্গির আলাদা একটা কদর থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা বাঙ্গি কিনতে ছুটে আসে বাঁশগাড়িতে।
জানা গেছে, বাঙ্গি এক রকমের শঁশা জাতীয় ফল। ফলের বাইরের দিকটা দেখতে অনেকটা কুমড়ার মত হালকা ডোরা কাটা খাঁজযুক্ত। খেতে তেমন মিষ্টি না হলেও বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ,বিভিন্ন ভিটামিন এবং ফলিক এসিড সমৃদ্ধ বাঙ্গি খুবই উপকারী পুষ্টিগুন সম্পূর্ণ। বাঙ্গি বয়স ধরে রাখার পাশাপাশি দূর করে ব্রণ,একজিমা,চুল পড়া কমায়,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,রক্ত তৈরী করে,ওজন কমাতে সাহায্য করে, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ও ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্যও অনেক উপকারী এই বাঙ্গি।
সরেজমিনে রায়পুরার এই দুই চর ঘুরে দেখা গেছে,রায়পুরার চর অঞ্চল হিসাবে খ্যাত বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেঁকান্দি ও পাঁড়াতলীর চরের বাসিন্দারা বেশ কয়েক যুগ ধরে বাঙ্গি চাষ করে আসছেন। এরই ধারাবাহিতকায় চলতি মৌসুমেও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাঙ্গি চাষ করেছেন তারা। কৃষকরা জমি পরিচর্যায় ও নারীরা জমি থেকে পাঁকা বাঙ্গি তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করেন প্রতিদিন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যারয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এই উপজেলায় ২৮ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বাঙ্গি। এরমধ্যে বাঁশগাড়িতে ২০ হেক্টর ও বাকি ১৫ হেক্টর পাড়াতলীর মধ্যনগর,চাঁনপুর ও মির্জারচরে আবাদ হয়েছে।
বাঙ্গি চাষী আবেদ আলী জানান, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। এতে তার খরচ পড়েছে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা। এ বছর ফলন ভাল হওয়ায় তিনি তিন লাখ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
আরেক বাঙ্গি চাষী আবুল খায়েস। তিনি এ বছর দুই বিঘা জমিতে বেলে জাতের বাঙ্গি আবাদ করেছেন। বর্তমানে তিনি একশ বাঙ্গি সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। এভাবে বিক্রি করতে পারলে তার লাভ হবে প্রায় এক লক্ষ টাকা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,চরের দোঁআশ মাটিতে বেলে ও এঁটেল এই দুই জাতের বাঙ্গি আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় বেলে বাঙ্গি। এ জাতের বাঙ্গির খোসা থাকে পাতলা,শাঁস নরম ও মিষ্টি কিছুটা কম। অপরদিকে এঁটেল বাঙ্গির শাঁস শক্ত তবে বেশ মিষ্টি। কৃষকরা জানান,জমি থেকে প্রতিপিচ বাঙ্গি পাইকারী বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নরসিংদী,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও কিশোরগঞ্জের পাইকারদের মাধ্যমে সুস্বাধু এই ফলটি পৌঁছে যায় রাজধানীসহ সারা দেশে।
রায়পুরা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অনুকুল আবহাওয়ার কারনে এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজান মাস চলমান থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। এ বছর ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি আবাদ হয়েছে। প্রতি বছরই আবাদকৃত জমির পরিমাণ বাড়ছে।