চট্টগ্রামের রাউজানের কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে (১৯) হত্যার পর আলামত নষ্ট করতে তার মরদেহ কেটে টুকরো করে খুনিরা। এরপর তার মরদেহের টুকরো থেকে মাংস ছাড়িয়ে হাড়গুলো পাহাড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
রোববার (১ অক্টোবর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব। এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া যুবক উচিং থোয়াই মারমা ও তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে শনিবার গ্রেপ্তারের পর তারা র্যাবকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।
চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব আলম বলেন, ’হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উচিং থোয়াই মারমাকে শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক বলেন, ’গ্রেপ্তার উচিং থোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, হৃদয়কে অপহরণের এক দিন পর ২৯ আগস্ট বিকালে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে হত্যা করা হয়। উচিং থোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটেন। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরেন। হত্যায় তিনটি পার্ট ছিল—অপহরণ গ্রুপ, কিলিং গ্রুপ ও লাশ গুম গ্রুপ। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল যারা শুধু খামারে কাজ করত। এর মধ্যে উমংচিং মারমা ও অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করেন।’
হৃদয়কে হত্যার পর উচিং থোয়াই মারমার মোবাইল ফোন থেকে হৃদয়ের বাবাকে ২৯ আগস্ট ফোন করে মুক্তিপণের টাকা বান্দরবানে নিয়ে আসতে বলে। ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে হৃদয়ের পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আসে। এর মধ্যে উচিং থোয়াই মারমা নিজেই দেড় লাখ টাকা রেখে দেন। বাকিদের ৫০ হাজার টাকা দেন।
র্যাবকে লাশ গুমের বিষয়ে গ্রেপ্তার দুজন জানান, পাহাড়ে হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে কলাপাতা দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়। পরে লাশটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে, এজন্য টুকরো করা হয় এবং শরীরের মাংস আলাদা করা হয়। এ কাজে সব মিলিয়ে ৯-১০ জন অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে র্যাব দুজন এবং রাউজান থানা-পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটি সত্য। তবে মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড় থেকে হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উমংচিং মারমা নামে গ্রেপ্তার এক আসামির তথ্যমতে পাহাড়ি এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নেয় উত্তেজিত গ্রামবাসী। গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।