রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ধানখেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে আলোক ফাঁদ পেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা হচ্ছে। আমনের খেত সুরক্ষায় আলোক ফাঁদ প্রযুক্তির ব্যবহারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাঙ্গুনিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কৃষকেরা আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছেন। এতে পোকা দমনসহ ধানখেতে ক্ষতিকর কী ধরনের পোকা রয়েছে, তা শনাক্ত করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তা দমন করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। একসপ্তাহ ধরেই উপজেলার গ্রাম-অঞ্চলসহ পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ব্লকে এই আলোক ফাঁদ বসানোর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা সনাক্তকরণ করা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ফাঁদ তৈরি করতে সন্ধ্যার পর ধান ক্ষেত থেকে পঞ্চাশ-একশ’ মিটার দূরে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিকোণাকার করে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হবে। এরপর মাটি থেকে আড়াই থেকে তিন ফুট উপরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে খুঁটির মাথার রশির সাহায্য ঝুলিয়ে দিতে হয়। নিচে একটি বড় আকারের প্লাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রাখাতে হবে। মাঠ জুড়ে যখন অন্ধকার নেমে আসতে থাকে তখন ফাঁদের আলোর ঝলকে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় পাত্রের পানিতে পড়ে মারা যায়।
উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের কৃষক আবু জাফর জানান, আলোক ফাঁদ অন্ধকার রাতে দেখতে দৃষ্টি নন্দনও বটে। এতে খরচ কম হয় এবং পরিবেশবান্ধব। তাই ধান ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি শনাক্তকরণ ও দমনে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি আমাদের এলাকায় সাড়া ফেলেছে। এতে সহযোগিতা করছেন উপজেলা কৃষি অফিস ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ। আলোক ফাঁদে উপকারী পোকার মধ্যে ড্যামসেল ফ্লাই, বোলতা, মাকড়সা, ক্যারাবিড বিটল, লেডি বিটল এবং ক্ষতিকর পোকার মধ্যে মাজরা পোকা, সবুজ পাতা ফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা ও বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা), সাদা পিঠ গাছ ফড়িং ও গান্ধি পোকার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায় বলেও জানান এই কৃষক।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ক্ষতিকর পোকামাকড় বিশেষ করে বিপিএইচ বা কারেন্ট পোকা যাতে রোপা আমন ধানের ক্ষতি সাধন করতে না পারে এবং কৃষকরা সঠিক সময়ে যেন পোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সেজন্যই একযোগে আলোক ফাঁদ স্থাপনের এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং ধান পাকা পর্যন্ত তা চলতে থাকবে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই আলোক ফাঁদ গ্রামের কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এতে কৃষকেরাও খুশি, খরচও কমিয়েছে কৃষকদের। এই ফাঁদের ব্যবহার আরো বেশি আকারে হওয়া দরকার। এ জন্য এলাকার কৃষকদের উদ্যোগী হতে হবে।