ডলার সংকট, মূল্যবৃদ্ধি ও ঋণপত্র বা এলসিতে কড়াকড়ি আরোপের ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয় কমেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের নয় মাস ঘাটতি থাকা রাজস্বের অর্ধেকেরও বেশি আমদানি পর্যায়ের (কাস্টমস)। এ খাতে ঘাটতির পরিমাণ ১৫ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যেখানে মোট ঘাটতি ২৯ হাজার ৮ কোটি টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে যদিও তা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কাস্টমস থেকে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১১ হাজার কোটি, স্থানীয় পর্যায়ে মূসক (ভ্যাট) থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম নয় মাস অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত কাস্টমস থেকে ৮৩ হাজার ১৮৭ কোটি, ভ্যাট থেকে ৯৫ হাজার ১৪৫ কোটি এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৭৬ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যদিও এর সবক’টি খাতেই এ সময়ে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এনবিআর। সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি কাস্টমসে। এর পরই ভ্যাট খাতে ঘাটতি ৮ হাজার ২৪৪ কোটি এবং আয়কর ও ভ্রমণ করে ৪ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ঘাটতি।
আরও পড়ুন >> বাংলাদেশকে আরও ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও রাজস্ব আয়ে ঘাটতি অব্যাহত থাকবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। বরং বছর শেষে কাস্টমস খাতে বড় ঘাটতি তৈরি হবে, যার প্রভাব পড়তে পারে বাজেটের অন্যান্য খাতেও। বিশেষ করে নতুন শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্যে তৈরি হবে ধীরগতি। ফলে ভ্যাট ও আয়করের ওপরেও তার প্রভাব পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এদিকে আমদানি শুল্ক কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে দেশে ডলারের সংকট থাকায় আমদানি নীতিতে কড়াকড়ি, ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়া, ঋণপত্র খুলতে না পারা, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বিলাসী দ্রব্যের আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয় কমে গেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে সরকার অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিকে নিরুৎসাহিতের একটা চেষ্টা করেছে। সেজন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানা রকম কড়াকড়ি এসেছে, সেটলমেন্টও কমেছে। আমদানি ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ায় এ খাত থেকে শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে আমদানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক রয়েছে এবং শেষেও এটা নেতিবাচকই থাকবে বলে ধারণা করছি।’
এনবিআরের কাঁধে চলতি অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য চাপালে অর্থনীতিবিদরা সেটিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছিলেন। বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় বিশাল এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে অসম্ভব বলেই তাদের মত। অবশ্য ‘আশাবাদী’ এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, শিগগিরই ডলার সংকট কেটে যাবে। অর্থবছরের শেষ সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে আবারো গতি ফিরবে, রাজস্ব আয়ও বাড়বে।