রাজশাহী প্রতিনিধি:
আমন ধানের ভরা মৌসুমে রাজশাহীতে চলছে তীব্র সার সংকট। বিশেষত এমওপির (মিউরেট অব পটাশ) পাশাপাশি ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ও টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সারের সংকটে কৃষকের মধ্যে চলছে হাহাকার। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আমন ধানসহ অন্যান্য কৃষি আবাদ।
রাজশাহী জেলায় চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম, মোকাম থেকে বা সরকারি বরাদ্দের বাইরে আমদানি বন্ধ, ডিলার পর্যায়ে বরাদ্দে বৈষম্য এবং সরকারিভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) গুদাম থেকে বরাদ্দকৃত সার সরবরাহে অব্যবস্থাপনা সহ নানাবিধ সমস্যায় কৃষক পর্যায়ে ভরা আমন মৌসুমে সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সামনে আলুর মৌসুমেও এর প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসে রাজশাহী জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে এমওপি ৮০০ মেট্রিক টন, টিএসপি ৬৬৩ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ১৫৩১ মেট্রিক টন সরকারি বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু জেলায় মোট আবাদি জমি এমনকি শুধুমাত্র আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্যও এ বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
রাজশাহী জেলায় মোট আবাদি জমি ১ লক্ষ ৮১ হাজার ৮১৫ হেক্টর। এরমধ্যে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। গতবারের অর্জন ৭৮ হাজার হেক্টর জমি। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে প্রতি হেক্টর জমিতে এমওপি ৮২.৫০ কেজি, ডিএপি ৬০ কেজি, টিএসপি ৫২.৫০ কেজি এবং ইউরিয়া সার ১৫০ কেজি'র প্রয়োজন। সেই হিসেবে রাজশাহী জেলায় আমন মৌসুমে ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। সেখানে মে থেকে আগস্ট এই চার মাসে ৩ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সারের বরাদ্দ রয়েছে। আগস্ট মাসে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৮০০ মেট্রিক টন এমওপি।
জেলার একাধিক সার ডিলার জানান, বিগত বছর গুলোতেও সারের বরাদ্দ প্রায় এরকমই ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা "কোন আবাদযোগ্য জমি ফেলে না রাখা যাবে না", এতে করে আবাদের পরিমানও বেড়েছে। ফলে বরাবরের মত বরাদ্দ সার চাহিদা মেটাতে পারছে না। এছাড়াও গত বছর পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন মোকাম থেকে (সরকারি বরাদ্দের বাইরে বেসরকারি উৎস) অতিরিক্ত চাহিদার সার আমদানি করে চাহিদা মেটাতে পেরেছি। কিন্তু এবছর বহির্বিশ্বে সারের বেশী দাম, মোকাম থেকে আনার খরচ, লোড ও আনলোড খরচ বেশী হওয়ার কারনে আমদানি করতে না পারায় এ সংকট আরো বেশী হয়েছে।
তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, এত কম বরাদ্দের ভিতরেও আবার ডিলার পর্যায়ে সার বরাদ্দে রয়েছে বৈষম্য। কোন কোন ইউনিয়নে স্বভাবিক বরাদ্দের চেয়ে বেশী আবার কোথাও একেবারেই কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তানোর ও পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নে এমওপি বরাদ্দ রয়েছে ২১ মেট্রিকটন,তালন্দ ইউনিয়নে ১৬ মেট্রিক টন ; পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নে ৭.২০ টন এবং দর্শন পাড়া ইউনিয়নে ২.৯০ মেট্রিক টন এমওপি'র বরাদ্দ রয়েছে। আবাদী জমি বা আমন ধানের লক্ষমাত্রার সাথে যা পরিস্কার বৈষম্যপূর্ণ।
এদিকে আগস্ট মাসের জন্য বরাদ্দ ৮০০ মেট্রিকটন এমওপি'র পুরোটাই দায়িত্বে থাকা বিএডিসি'র রাজশাহী আঞ্চলিক সার গুদামে গিয়েও ডিলাররা ফিরে আসছেন। তারা বরাদ্দকৃত সার নিয়ে করছেন নয় ছয়। আঞ্চলিক খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত উপ-পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, আমি তথ্য দেব, না নিজের কাজ করবো ? এর আগেও কয়েকজন এসে তথ্য নিয়ে গেলেন। আপনি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগ্ম পরিচালক জুলফিকার আলীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বৃহস্পতিবার সকালে যুগ্ম পরিচালক জুলফিকার আলী'র অফিসে তাকে না পেয়ে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমি বাহিরে আছি বিকাল ৪ টার পর ফোন দিলে এবিষয়ে কথা বলবো। বিকাল ৪ টার পর একাধিক নাম্বার থেকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সংকট বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সংকট নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসক (জেলা সার ও বীজ কমিটির সভাপতি) বরাবর গত ২০ জুলাই অতিরিক্ত এমওপি ৫ হাজার, ইউরিয়া ৩ হাজার এবং টিএসপি ২ হাজার মেট্রিক টন বরাদ্দের জন্য আবেদন পত্র দিয়েছি।
জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে যে আবেদন আমার কাছে এসেছে, সেটি সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমি পাঠিয়েছি, অতিরিক্ত বরাদ্দ পেলে এই সংকট নিরসন হবে তবে এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট বলছেন, যতটা সংকট শোনা যাচ্ছে, ততটা সংকট আসলে নেই।