নৈতিক স্খলনের কারণে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমিকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। একই সঙ্গে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানাকে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো। তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়নি।
আর নৈতিক স্খলনজনিত কারণে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমিকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। পাশাপাশি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, ‘তদন্তাধীন অবস্থায় রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ স্বাক্ষরিত বাগমারা উপজেলা ছাত্রলীগের যে কমিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। রাজশাহী জেলা শাখার সব নেতাকর্মীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হলো।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদ্য বিলুপ্ত ছাত্রলীগের রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক পদ না ছেড়েই ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র থেকে ঘোষিত রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ কমিটিতে সভাপতি হন। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে বহিষ্কার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বকালীন সংগঠনের এক নারী কর্মীর সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ান রানা। রানার এ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফাঁস হলে রাজশাহীতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। ফোনালাপে শোনা যায়, রানা ওই নারী কর্মীকে তার কাছে দ্রুত সময়ে একটি মেয়ে পাঠাতে বারবার তাগিদ দিচ্ছেন।
এ ছাড়া চাঁদাবাজি, পদ দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়াসহ টাকার বিনিময়ে কমিটি বিক্রি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল রানার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাদক সেবন, নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন ও টাকা আদায় এবং টাকার বিনিময়ে কমিটি দেওয়াসহ গুরুতর সব অভিযোগ উঠে।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এসব অপকর্মের ফিরিস্তি দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারিত হয়। এই দুই নেতার অপকর্মের সহযোগী হিসেবে বিলুপ্ত কমিটি সহ-সভাপতি রাসেল আহমেদ ও যুগ্ম সম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্তর বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ উঠে।
ফলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক শেখ শামীম তুর্যের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে অবস্থান করে সরেজমিনে তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন। ভুক্তভোগী নেতাকর্মীদের বক্তব্য নেন।
এদিকে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি সভাপতি রানা ও সাধারণ সম্পাদক অমিসহ জেলা ছাত্রলীগের চার নেতাকে স্থায়ীভাবে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন। সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণের বিবরণ দেন তদন্ত প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর বুধবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।