রাজধানীর মালিবাগের
জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেক আপ সেন্টারে খতনা করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় আহনাফ
তাহমিন আয়মান (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে খবর পেয়েই
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মঈনুল আহসানকে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে
দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। পরিচালক
জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উপস্থিত হয়ে হাসপাতালটির যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে
এক বিশেষ বিবৃতিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত।
কিছুদিন আগেও এমন একটি ঘটনা আমরা লক্ষ্য করেছি। সে ঘটনায় আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিয়েছি।
তবে সেই ঘটনার পরও যারা সতর্ক হতে পারে নি, এ রকম আর কারও কোনোরকম দায়িত্বে অবহেলা
বা গাফিলতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। দোষী প্রমাণিত হলে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বিরুদ্ধে
শুধু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াই হবে না, ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাকারী দোষীদেরও কঠোর শাস্তি
নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে পরবর্তীতে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এ রকম
গুরুদায়িত্বে অবহেলা করতে সাহস না পায়। চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিন রাজধানীর
ল্যাব এইড হাসপাতালে ঘটে যাওয়া অন্য আরেকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেও একটি বিবৃতি দিয়েছেন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিবৃতিতে তিনি জানান, রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে এনডস্কোপি করাতে
গিয়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিদর্শন করা হয়েছে।
প্রতিবেদন আগামীকাল বৃহস্পতিবার হাতে আসবে। প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া
হবে।
এদিকে এ ঘটনায়
শিশু আহনাফের বাবার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার এস হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক
এস এম মুক্তাদির ও চিকিৎসক মাহাবুব মোরশেদকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন
আদালত।
এর আগে মঙ্গলবার
(২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালের অপারেশন রুমে
সুন্নাতে খতনার জন্য অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয় শিশুটিকে। যাতে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় আয়হাম।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকলে আরেকটি হাসপাতাল থেকে আনা হয় চিকিৎসক। কিন্তু পরীক্ষা
করে দেখা যায়, চিরঘুমে চলে গেছে শিশুটি।
স্বজনদের অভিযোগ,
লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার কথা থাকলেও তারা ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছে। যে কারণে
আয়হামের আর জ্ঞান ফেরেনি। এর আগে, মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় আয়হামের সুন্নতে
খতনা করাতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে,
মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন
ডা. এস এম মুক্তাদিরের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার রাতে সন্তানকে সুন্নতে খতনা করাতে আসেন
শিশু আয়হামের বাবা ফখরুল আলম ও মা খায়কুন নাহার চুমকি। রাত ৮টার দিকে খতনা করানোর জন্য
অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আর ঘুম ভাঙেনি আয়হামের। এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ
থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে আয়হামের
বাবা ফখরুল আলম বলেন, আমরা চিকিৎসককে বলেছিলাম যেন ফুল অ্যানেস্থেসিয়া না দেওয়া হয়।
তারপরও আমার ছেলের শরীরে সেটি পুশ করেন ডা. মুক্তাদির। আমি তাদের পা পর্যন্ত ধরেছি।
বলেছি, কিছু একটা ব্যবস্থা করেন। তারা বলে ঠিক হয়ে যাবে, এই যে দেখেন নিশ্বাস নিচ্ছে।
কিন্তু এর আগেই ডেট।
তিনি বলেন,
আমার সন্তানকে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় মুক্তাদিরসহ হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ সবারই। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত চিকিৎসক
মুক্তাদির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিক বিভাগের
জয়েন্ট ব্যথা, বাত ব্যথা, প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দিতেন বলে
জানা গেছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য
জানতে জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ
করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
গত ৮ জানুয়ারি
রাজধানীর বাড্ডা সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে
লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ান মারা যায়। টানা সাত দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল আয়ান।