ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নগরকে ছিনতাইকারীমুক্ত করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু
করেছে। এজন্য ৫০টি থানায় বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। থানাগুলোতে গঠন করা হয়েছে ছিনতাই
প্রতিরোধী বিশেষ টিম। অনেক থানায় আবার কুইক রেসপন্স টিমকে ছিনতাইবিরোধী অভিযানে যুক্ত
করা হয়েছে।
অতীতে যারা ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে তাদের তালিকা
ধরে চলছে অনুসন্ধান। বৃদ্ধি করা হয়েছে টহল ডিউটি। ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে
বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গত ছয় দিনের অভিযানে ৩৫০ জনের মতো
ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অধিকাংশ ছিনতাইয়ের দায়ে অতীতেও গ্রেফতার হয়েছেন।
জামিনে বের হয়ে জড়িয়েছেন পুরোনো অপরাধে। ডিএমপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
আরও পড়ুন<< ডা. সংযুক্তা সাহার বিরুদ্ধে ৫'শ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত
কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বলেন, প্রতিটি থানায় ছিনতাইকারীদের
নিয়ে কাজ করার জন্য টিম করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ছিনতাইকারীদের ডাটাবেজ আছে। সেখানে
দেখা গেছে, যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই আগেও এই অপরাধের দায়ে গ্রেফতার
হয়েছিল। ছিনতাইকারীদের ধরতে থানার ‘ডেডিকেটেড টিম’কে ফোর্স, অস্ত্র
ও লজিস্টিকস দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে সব থানায় সার্বক্ষণিক
মনিটরিং করা হচ্ছে।
রাজধানীর থানাগুলোর বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের
মামলা না নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ছিনতাইয়ের মামলা করতে গেলে হারানোর জিডি নেওয়ার
অভিযোগ আছে অনেক থানার বিরুদ্ধে। থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে
বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র। ছিনতাইয়ের অভিযোগগুলো নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে
কাজ করতে বলা হয়েছে ডিএমপি সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে। কারণ একটি গ্রুপ বা এর সদস্যদের
কাউকে ধরা গেলে তাদের মাধ্যমে অন্য ছিনতাইকারীদের সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া সহজ হয়। মূলত
ডিএমপি সদর দপ্তরের এমন কঠোর অবস্থানের কারণেই গত চার দিনে এত সংখ্যক ছিনতাইকারী গ্রেফতার
হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন<< সম্রাটের জামিনের মেয়াদ বাড়ল
ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ
বলেন, ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো টার্গেট করে আমরা কাজ করছি। কুইক রেসপন্স টিমকে ছিনতাইবিরোধী
অভিযানে কাজে লাগানো হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের পুরোনো তালিকা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি নতুন
নেটওয়ার্ক দেখা যাচ্ছে কিনা-এ বিষয়গুলো উদঘাটনে কাজ চলছে। ছিনতাইয়ের মামলাগুলো গুরুত্বের
সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। আমাদের প্রতি নির্দেশনা হলো ছিনতাইয়ের উৎপাত থেকে জনগণকে মুক্ত
করার জন্য যতদিন প্রয়োজন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে জামিনে বের হয়ে ছিনতাইকারীদের বারবার
একই অপরাধে জড়ানো নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারাও বিরক্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত
কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার
করতে পারে। তাদের যে অবস্থায় পাওয়া যায় সেই অনুযায়ী মামলা দিয়ে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন
করতে পারে। এর বাইরে কিছু করার এখতিয়ার তো নেই। জামিনে বের হয়ে পুরোনো অপরাধে ফেরার
বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবুর
সঙ্গে।
আরও পড়ুন<< প্রশ্ন ফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ত্রিশ জনের নামে চার্জশিট
তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ছিনতাইয়ের আসামিরা
যেন জামিন না পায় এজন্য কঠোর হতে হবে। এক্ষেত্রে আইনজীবীদেরও ভূমিকা আছে। আমরা প্রসিকিউশন
থেকে যারা আছি তাদেরও শক্তভাবে জামিনের বিরোধিতা করতে হবে। তবে অনেক সময় ছিনতাইয়ের
মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ না হওয়ায় আসামিরা জামিন পেয়ে যায়। এজন্য পুলিশকে এই মামলাগুলোর
তদন্ত দ্রুত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।b