আজঃ বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪
শিরোনাম

রাবানের সুস্বাদু আনারসের খ্যাতি দেশজুড়ে

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৫ মে ২০২৩ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ মে ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
নাসিম আজাদ, পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি

Image

স্বাদ ও গুণগত মানের দিক থেকে সারাদেশে খ্যাতি কুড়াচ্ছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের রাবানের আনারস। নরসিংদীতে একটি প্রবাদ আছে, 'রাবানের আনারস রসে টস টস'। আনারস উৎপাদনের দিক থেকে পলাশের রাবান বাংলাদেশের প্রসিদ্ধতম স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।

উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায় আনারসের আবাদ করা হয়। আবহাওয়ার দিক থেকে এই এলাকার মাটি আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় বাড়ির আঙ্গিনাসহ অনাবাদি জমি বা টেক-টেঙ্গর গুলোতেও আনারসের চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। এ এলাকার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে আনারস। আনারস অন্যতম প্রধান রসালো, সুস্বাদু ও সুমিষ্ট ফল। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহ ও অর্থকরী ফসল হচ্ছে একমাত্র আনারস চাষ। প্রায় ১৫০ বছর আগে ঘোড়াশালে দেশীয় জাতের আনারসের চাষ হত। যার ইতিমধ্যে বিলুপ্তি ঘটেছে।

বর্তমানে যে আনারসের চাষাবাদ করা হচ্ছে তাও প্রায় ৫০ বছর আগে সিলেট থেকেই পলাশের রাবানে আসে। উপজেলার ঘোড়াশাল ও রাবান আনারস চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৫০ বছরে এ জাতটি এখানে ব্যাপক সফলতা লাভ করে এবং এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। ঘোড়াশাল ও রাবানে চাষকৃত সিলেটের এ প্রজাতির আনারসের জাতটি জলডুগি আনারস নামে সর্বমহলে পরিচিতি লাভ করে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল 'হ্যানিকুইন'। আর এ জাতের আনারসের ফলন টেঙ্গর এলাকার জমিততে ভালো হয়। জৈষ্ঠ্যমাসের শুরুতেই কিছু কিছু বাগানে পাকতে শুরু করে যা ভরপুর পাকে জৈষ্ঠ্যমাসের শেষের দিকে। বাজারে এর চাহিদা খুবই বেশি। আবার কিছু কিছু বাগানে সবেমাত্র আনারসের ফলন এসেছে, যা আরও দুমাস পর পাকতে শুরু করবে।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাবান, কুড়াইতলী, বিলপাড়, কাটাবের, বরিবাড়ি, সানের বাড়ি, দড়িহাওলা পাড়া, উত্তরচন্দন, বরাব, ধলাদিয়া, গোবরিয়াপাড়া, লেবুপাড়া, সাতটিকা ও টেঙ্গর পাড়া। অপরদিকে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ভাগদী, রাজাব, খাওগাইর, চামড়াবসহ কয়েকটি স্থানে আনারসের চাষ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৪৫ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ করা হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০০ মেঃটন।

রাবানের আনারস চাষী সমিরন রায় ১০ বিঘা জমিতে ও মধু ভৌমিক ১২ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন। তাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তারা প্রায় ৩২ বছর যাবৎ আনারসের চাষ করে আসছে। তারা জানায়, প্রতি বিঘা জমিতে আনারস চাষে ২০ হাজার টাকা খরচ হলে আনারসের ফলন ভাল হলে প্রতি বিঘার আনারস বিক্রি হয় প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকা। এতে দেখা যায় লাভ হয় বহু গুণ। বেশির ভাগ আনারস চাষি আনারস চাষ করে বহু সম্পদের মালিক হয়েছেন।

রাবানের আনারস চাষ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। আনারসের ফলন ভাল হলে প্রতি বছর আনারসে পলাশ উপজেলায় আয় হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। প্রতি একর জমিতে প্রায় ১৮ হাজার আনারসের চারা রোপণ করা হয়। উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে রাবানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আনারস উৎপন্ন হয়।

কৃষকরা জানায়, আনারস পচনশীল ফল হিসেবে এর সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকা দরকার। আনারস সংরক্ষণের জন্য পলাশে কোন হিমাগার আজও পর্যন্ত তৈরি হয়নি। কৃষকরা আনারস সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার স্থাপনের জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। রাবানে আনারস চাষে চাষীদের মনোবল রয়েছে পর্যাপ্ত। আধুনিক সভ্যতার যুগে এখনও পলাশের এলাকায় সনাতন পদ্ধতির মাধ্যমেই আনারসের চাষ হচ্ছে।

আনারস চাষীরা জানায়, আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আনারস চাষ করলে আরও অধিক ফলন হত এবং দেশও অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হত।

এব্যাপারে পলাশ উপজেলা কৃষি অফিসার আয়েশা বক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এবছর সেচ ও বৃষ্টির অভাবে আনারস একটু দেরিতে হয়েছে। মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে আনারস চাষিদের আনারস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষনিক পরিদর্শন করে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বসত বাড়ির আঙ্গিনা ও অনাবাদি জমিতে আনারস চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি।

নিউজ ট্যাগ: রাবানের আনারস

আরও খবর



স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৬ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৬ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এ সময় ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকও বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) প্রথম প্রহরে ভোর ৫টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা।

প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও ভুটানের রাজা জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আরও একবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন ভুটানের রাজা ও তার স্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।


আরও খবর



বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে উত্তাল গাজীপুর

প্রকাশিত:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
গাজীপুর প্রতিনিধি

Image

বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বার্ষিক ছুটির টাকার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী জরুন এলাকায় কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছে। সোমবার (০১ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেডের আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, ফেব্রুয়ারির বকেয়া বেতন, ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস দিতে চেয়েও দেয়নি। এ কারখানায় প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক আছে। বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বার্ষিক ছুটির টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানায় শ্রমিকরা।

সাইফুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, আর কয়েক দিন পর ঈদ। এখনও বেতন-বোনাস পাচ্ছি না। ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে ঈদ করব? কয়েক দিন পর ছুটি হয়ে যাবে, টাকা না দিলে বাড়ি যাব কীভাবে? আজকের মধ্যেই আমাদের টাকা পরিশোধ করতে হবে।’

তবে এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, একটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে সকাল থেকে বিক্ষোভ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। মালিক-শ্রমিক দুই পক্ষের সঙ্গেই আলাপ-আলোচনা চলছে৷’


আরও খবর



সাবমেরিন ক্যাবলে ত্রুটি, সারাদেশে ইন্টারনেটে ধীরগতি

প্রকাশিত:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 | হালনাগাদ:শনিবার ২০ এপ্রিল ২০24 | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

কুয়াকাটায় স্থাপিত দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল (সিমিউই-৫) সংযোগ সরবরাহ বন্ধের কারণে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবায় ধীরগতি দেখা দিয়েছি। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে এ সমস্যা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে ফাইবার ক্যাবল ব্রেক করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহমেদ বলেন, সিমিউই-৫ দিয়ে দেশে ১ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ হয়। এর পুরোটাই এখন বন্ধ আছে। আমরা চেষ্টা করছি সিমিউই-৪ (প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল) দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে। সিঙ্গাপুরে ফাইবার ক্যাবল ব্রেক করায় বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশে একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। আজ শনিবার বিকালের মধ্যে জানা যাবে, এটা কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে।

দেশের মোট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় এখন ৫ হাজার জিবিপিএস। দুই সাবমেরিন ক্যাবলের বাইরে প্রায় ২ হাজার ৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) মাধ্যমে স্থল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই ৬ থেকে আরও ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ যুক্ত হবে।


আরও খবর



কক্সবাজারে নারীর গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশিত:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
মোহাম্মদ ফারুক, কক্সবাজার

Image

কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়া চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় রিনা আক্তার (৪০) নামে এক নারীর গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাতে তার নিজ বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহতের স্বামী আবু নাছের ওসমানি বলেন, তিনি তারাবি নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে ছিলেন। পরে বাড়িতে এসে দেখেন স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ খাটের উপর পড়ে আছে। এসময় বাড়িতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বজনরা।

এদিকে, এ ঘটনায় নিহতের স্বামী আবু নাছের ওসমানিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও বাড়ির কেয়ারটেকার এবং দোতলার আরেকটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকা এক রোহিঙ্গা নারীকেও হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

পরে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, যে দা দিয়ে জবাই করা হয়েছে, সেটি জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।


আরও খবর



আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস

প্রকাশিত:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এইদিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।

এই অভিযানের নির্দেশ নামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনও লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়।

অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সেই আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহন করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি। পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তাঁর কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। এরপর সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।

ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ রাত ১১ থেকে ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ব্ল্যাক আউট পালন করা হবে। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দেবেন। এদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। এছাড়াও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময় দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।


আরও খবর