জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া অবরুদ্ধ
গাজা উপত্যকার হাসপাতালের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের সেবা বন্ধ
হয়ে গেছে। আর জাতিসংঘ জানিয়েছে, নতুন করে জ্বালানি না পেলে বুধবার রাতের মধ্যে তাদের
কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে বলে
দাবি করেছে গাজার মন্ত্রণালয়।
এদিকে ইসরাইল গাজায় নতুন জ্বালানি প্রবেশে
বাধা দেওয়ার পাশাপাশি অভিযোগ করেছে হামাস হাজার হাজার লিটার জ্বালানি মজুত করে রেখেছে।
এরই মধ্যে গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বিমানবাহিনী। মঙ্গলবার রাতের হামলায়
গাজায় কমপক্ষে ৮০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে হামলা শুরুর পর থেকে নিহতের সংখ্যা
সাড়ে ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, এপি, রয়টার্সের।
অবরুদ্ধ গাজায় বুধবার রাতেই জ্বালানি শেষ
হয়ে যাবে বলে সতর্কতা জারি করেছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক ত্রাণ ও কর্মসংস্থান
সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে ইসরাইলি হামলায় মানবিক বিরতির আহ্বান
জানিয়ে ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। ইসরাইলি সেনাবাহিনী
অভিযোগ করে বলেছে, হামাস জ্বালানি মজুত করে রেখেছে। ইসরাইলের প্রকাশ করা উপগ্রহের ছবিতে
দেখা গেছে, গাজার ভেতরে এক ডজন জ্বালানি ট্যাংক রয়েছে। তারা বলছে, সেখানে পাঁচ লাখ
লিটার জ্বালানি রয়েছে।
এর আগে রোববার এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড ন্যাশনস
রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ইন দ্য নিয়ার ইস্ট (আনরোয়া)
জ্বালানি শেষ হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। সংস্থার প্রধান নির্বাহী ও জাতিসংঘের কমিশনার
জেনারেল ফিলিপ ল্যাজারিনির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তিন দিনের মধ্যে গাজায় জ্বালানির
মজুত শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে জাতিসংঘ বলেছে ইসরাইলের
হামলা এবং জ্বালানি সংকটের কারণে গাজার এক-তৃতীয়াংশ হাসপাতাল এবং দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক
স্বাস্থ্যসেবার ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে হাসপাতালের
কার্যক্রম একেবারেই সীমিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। সেখানে শুধু জটিল সমস্যার সেবা
চালু রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. রিচার্ড পেপারকন বিবিসি রেডিও ফোরকে বলেছেন,
আমাদের অধীনে যে হাসপাতাল কাজ করছে সেগুলো জেনারেটর দিয়ে কোনোক্রমে সচল রাখা হয়েছে।
সেখানে শুধু জীবন রক্ষায় অস্ত্রোপচারের কাজ ছাড়া অন্য কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে
না।
সর্বশেষ ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল কুদরা বলেছেন, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি অকেজো হয়ে
যাওয়ায় সেটা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থার মধ্যেও ইসরাইলি বিমানবাহিনী গাজার বিভিন্ন
এলাকায় বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু ও বাড়িঘরে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে ইসরাইলি বিমান
হামলায় মঙ্গলবার রাতে আল-শাতি শিবিরে কয়েক ডজন নিহত ও আহত হয়েছেন। আল-মাগাজি ক্যাম্পে
ইসরাইলি বিমান হামলায় কয়েক ডজন শিশু নিহত হয়েছে, খান ইউনিসের একটি খামারেও বিমান হামলায়
ছয়জন নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা
৬৫৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ২৭০৪টি শিশুও রয়েছে। ওদিকে সিরিয়ার আলেপ্পো বিমানবন্দরে
হামলা চালিয়ে সেটি অকেজো করে দিয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে,
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ইসরাইলের বিমান হামলার কারণে সেটি এখন অকেজো হয়ে
পড়েছে।
এদিকে ইরাকে হামলার পর মার্কিন সেনারা
যেভাবে রক্তক্ষয়ী শহুরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল-ফিলিস্তিনের গাজায় সেভাবে যুদ্ধে না জড়াতে
ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। হামাসকে হারাতে
ইসরাইলের মাটিতে অবস্থান করছেন মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা। তারা ইসরাইলকে বলেছেন, ২০০৪
সালে ইরাকে ফাল্লজাহ শহরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন মার্কিন সেনারা। ওই যুদ্ধটি বেশ রক্তক্ষয়ী
ছিল। আর সেই যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন ইসরাইলকে তারা সরাসরি গাজায় স্থল অভিযান না
চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের গাজা হামাসের মধ্যকার
যুদ্ধের প্রসার ঠেকাতে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই ঘোষণা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
ব্লিংকেন বলেন, ‘এই পরিষদের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের,
বিশেষ করে স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের বিশেষ দায়িত্ব হলো কোনো এলাকায় সংঘাত দেখা দিলে তা
আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়া রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে যে
যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে যুগপৎভাবে কাজ করবে।’
ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক করতে বৃহস্পতিবার
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তার এই সফরের কয়েক দিন পর
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করতে আগামী মাসে ওয়াশিংটন সফরে যাবেন চীনের
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
বাইরের দেশগুলো ‘আগুনে ঘি ঢালছে’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
বলেছেন, মুসলি বিশ্ব একসঙ্গে কাজ করলে সেটা শান্তি এবং যুদ্ধ বিরতিতে সহায়ক ভূমিকা
পালন করবে। সেই সঙ্গে তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে গাজায় ইসরাইলের বোমাবর্ষণ বন্ধে আরও চাপ
দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেছেন, ওই অঞ্চলের বাইরের দেশগুলো ইসরাইলকে সমর্থনের নামে
‘আগুনে ঘি ঢালছে।’ তুরস্কের পার্লামেন্টে
এক জ্বালাময়ী বক্তব্যে হামাসকে স্বাধীনতাকামী বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা নিজের
ভূমি রক্ষা করতেই লড়াই করছে। তিনি জানান, ইসরাইল সফরের পরিকল্পনা তিনি বাতিল করেছেন।
এরদোগান বলেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে তিনি ‘হ্যান্ডশেক’ করেছেন। তবে
নেতানিয়াহু তুরস্কের সেই সদিচ্ছার অপব্যবহার করেছেন।
হামাসের শীর্ষ নেতার সঙ্গে হিজবুল্লাহ
প্রধানের বৈঠক
লেবাননভিত্তিক শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী
হামাস ও ইসলামিক জিহাদের দুই শীর্ষ নেতা। বুধবার এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে,
হাসান নাসরুল্লাহ হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরি এবং ইসলামিক জিহাদের মহাসচিব জিয়াদ
আল নাখলার সঙ্গে ‘গাজায় ইসরাইলের হামলা ও নিজেদের করণীয়’ নিয়ে আলোচনা
করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘গাজা ও ফিলিস্তিনে
জয় পাওয়ার জন্য এরকম স্পর্শকাতর মুহূর্তে প্রতিরোধ বাহিনীর কি করা উচিত সে বিষয়টি ধার্য
করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের নাগরিকদের ওপর ইসরাইলের নৃশংস হামলা বন্ধ করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে।’