জনসংখ্যার বৃদ্ধির বিপরীতে কমছে আবাদি জমি। কমছে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে চাহিদা। এর উপর যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন র্ঊর্ধ্বগতি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মাথার ঘাম পায়ে ফসল উৎপাদনকারী কৃষকের নাকাল অবস্থা। অর্থনৈতিক সঙ্কট মধ্য ও নিম্নস্তরের মানুষদের নিষ্পেষিত করে তুলেছে। দু-বেলা খেয়ে পড়ে চলার লক্ষ্যে খেটে খাওয়া মানুষেরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত করুন। অর্থনৈতিক সঙ্কট দূর করতে কৃষকদের সামনে অল্প জমিতে অধিক উৎপাদন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। যে ভাবে শহরাঞ্চলে ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও কৃষি কাজে যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাই গ্রামাঞ্চলেও ছাদ বাগানের পাশাপাশি অব্যবহৃত ও পতিত জমিতে বিকল্প পদ্ধতিতে করছে বিভিন্ন সবজিসহ মশলা চাষে। আর এই বিকল্প পদ্ধতিতে গাছ বাগানের ভিতরের ফাঁকা জায়গায় ও বাড়ির আশেপাশে পতিত জমিতে বস্তায় ও বাঁশে জাংলা দিয়ে সবজি চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বস্তায় আদা ও জাংলা সবজি চাষ করে সফলতা মুখ দেখছে উপজেলা উত্তর মরুয়াদহ গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম। ইতি মধ্যেই বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। মসলার অন্যতম উপদান আদা অনেক মূল্যবান। মাঝে মাঝে পরিচর্যা আর বেশী রৌদ্রতাপ হলে একটু পানি দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। ফলে খরচ নাই বললেই চলে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি। প্রতিটি বস্তায় তিনি এক থেকে দেড় কেজি করে আদা ফলন হবে বলে আশা করেন। যেখানে মাটিতে একটি গাছ থেকে এক পোয়া আদা পাওয়া যায়। তেমনি বাড়ির আশেপাশে, পতিত জমিতে এমনকি রাস্তার ধারেও বস্তায় আদা চাষ করা যায়। এর জন্য আলাদা কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি গ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীর আলমের বস্তায় আদা চাষ দেখে উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এখন বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত কৃষকরা। বাড়ির আশেপাশে ও পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করছে অনেকেই। জাহাঙ্গীর আলম উপজেলার উত্তর মরুয়াদহ গ্রামের নওয়াব উদ্দিনের পুত্র।
কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জনান, ইউটিউবে বস্তায় পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখে তিনিও বস্তায় আদা চাষের পরিকল্পনা করেন। তবে আগে থেকে আদা চাষের পদ্ধতি জানা থাকা একটু হিমশিম করছিলেন। হঠাৎ একদিন উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অফিসের কৃষি উপ-সহকারি মিজানুর রহমান ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো আমি তার কাছে বস্তায় আদা চাষে পদ্ধতি জানতে চাইলে তিনি আমাকে আরও উৎসাহ দেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারপর আমি বাড়ির পাশে ২৪ শতাংশ পতিত জমিতে ২ হাজার বস্তায় আদা ও ওপরে বাঁসের জাংলা দিয়ে লাউ, সীম, শসা, ধুন্দুল ও চাল কুমড়া চাষে কয়েক লক্ষ টাকা লাভের আশা করছেন। তবে মিজানুর ভাইয়ে পরামর্শে বস্তায় ফসল উপযোগী মাটি ভরে আদা চাষ করি এবং আদা চাষের ওপরে লম্বায় কয়েকটি বাঁশের জাংলা দেই এবং একেক জাংলায় ভিন্ন ভিন্ন সবজি বীজ রোপন করি যেমন, লাই, সীম, শসা , ধুন্দুল ও চাল কুমড়া। ২৪ শতাংশ জমিতে এই চাষে ব্যায় বস্তায় ক্রয়সহ ৫৫ হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, জাংলার সবজি প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ লাই (২৫-৩৫) টাকা, ৬ মণ সীম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, ৩ মণ শসা ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, ৩ মণ ধুন্দুল ৬০০ থেকে ৭০০ এবং ১০০ চাল কুমড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে প্রায় ৩২ হাজার টাকা বিক্রয় করেন। এছাড়া আদার ফলন ভালো হওয়ায় ২ হাজার বস্তায় ৫০ মণ আদা ফলন আশা করছেন। যার বাজার দরে ৮ হাজার টাকা প্রতি মণ বিক্রয় হলে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার আদা বিক্রয় হবে আশা করেন।
এক জমিতে বস্তায় আদা ও জাংলায় সবজি চাষের বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের কৃষি উপ-সহকারি কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান মন্ডল বলেন, আমি কৃষি জমিতে কৃষকদের চাষাবাদের পরামর্শ দিতে জাহাঙ্গীর আলম আমার কাছে বস্তায় আদা চাষের পরামর্শ চায়। পরে আমি তাকে পরামর্শ দেই সে সঠিক সময় বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা বীজ রোপণ করেন। আমি কয়েকদিন পর গিয়ে সবজি চাষের পরামর্শ দেই এবং কয়েকদিন পরপর রোগ প্রতিরোধের পরামর্শ দিয়ে আসি।
উপজেলা কৃষি আফিসার কৃষিবিদ রাশিদুল কবির জানান, সংবেদনশীল ফসল হওয়ায় আদা মূলত ছায়া ও দোআঁশ জাতীয় মাটিতে আবাদ করতে হয়। বস্তায় দোআঁশ মাটি ভর্তি করে আবাদ করলে দেখা যাচ্ছে এর ফলন ভাল হচ্ছে। মাটিতে একটি বীজ থেকে ১ পোয়া আর বস্তায় ১টি বীজ থেকে এক কেজি আদা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া পরিচর্যা খরচ নাই বললেই চলে। তিনি বলেন, শুধু আদা নয় মসলা জাতীয় ফসল ও সবজি চাষে উৎপাদন ভাল হবে।