চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌপথ এবং টার্মিনাল নির্মাণ করতে ২০১৬ সালে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১ হাতে নেয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রকল্পটিতে ৩৬ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক।
তবে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে প্রকল্পের গতি কমে যাওয়ায় অর্থ তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকেই। কথা ছিল পরবর্তীতে একই প্রকল্পে প্রত্যাহার করা টাকা সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সেটি করেনি বিশ্বব্যাংক। ফলে কাজের কম্পোনেন্ট বা অঙ্গ বাদ দিয়েই প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্প সংশোধন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন শ্লথ হয়ে পড়ে। সরকারের অনুরোধে বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প থেকে ২০২০ সালের এপ্রিলে ১২ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রত্যাহার করে নেয়। এজন্য প্রকল্পের মোট প্রকল্প সাহায্য দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রত্যাহার করা অর্থ পরবর্তীতে প্রকল্পে সমন্বয় করার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই হয়তো প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধনী প্রস্তাবটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি না হলে প্রকল্পের পরবর্তী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নদীমাতৃক বাংলাদেশে অনেক নৌরুট রয়েছে। নৌপরিবহন হলো তুলনামূলকভাবে সহজ ও পরিবেশবান্ধব এবং দেশের দূরবর্তী অংশের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌ করিডোর এবং নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালের বর্ধিতাংশকে অভ্যন্তরীণ এবং ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ নৌযান ও করিডোরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। দৈনিক প্রায় দুই লাখ যাত্রী এসব জলপথ ব্যবহার করে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করার ক্ষেত্রে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশাল অভ্যন্তরীণ নদী টার্মিনালগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কপথের ওপর পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিন আলোচনা হয়। প্রাথমিকভাবে বিআইডব্লিউটিএ বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ফান্ডের সহায়তায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত আর্থিক চুক্তি অনুসরণ করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক দলিল তথা প্রজেক্ট অ্যাগ্রিমেন্ট, প্রজেক্ট আপারসেল ডকুমেন্ট (পিএডি) ইত্যাদি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে মূল অনুমোদিত ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কিছু সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এজন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ করিডোরের উন্নয়ন এবং বিআইডব্লিউটিএর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার। ফলে ৩ হাজার ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রথম সংশোধন করা হয়।