ইউক্রেনে রুশ
সেনাদের আগ্রাসন শুরুর পর দেশটির কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে
আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এসব শরণার্থীর প্রায় অর্ধেকই শিশু। মঙ্গলবার জাতিসংঘের
শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ লাখ শিশু ইউরোপের দেশগুলোতে
আশ্রয় নিয়েছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে প্রতি সেকেন্ডে ইউক্রেনের একটি শিশু শরণার্থী
হয়েছে।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের
জেনেভায় জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেন
যুদ্ধ শুরুর পর গত ২০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজারের বেশি শিশু শরণার্থী হয়েছে। প্রতি
মিনিটে ৫৫টি শিশু বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১টি শিশু
শরণার্থী হচ্ছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যে গতিতে মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছে
এবং যে হারে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, এটা নজিরবিহীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত অল্প
সময়ের ব্যবধানে এত শরণার্থীর ঢল এর আগে দেখেনি ইউরোপ।
জেমস এলডার
আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যুদ্ধ এবং সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া শিশুদের মতো সীমান্তবর্তী
দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনীয় শিশুরা পারিবারিক বিচ্ছেদ, সহিংসতা, যৌন নির্যাতন
এবং পাচারের উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব শিশুকে জরুরিভাবে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা
এবং শিশু সুরক্ষা পরিষেবাগুলো প্রয়োজন।
জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক
সংস্থার (আইওএম) প্রধান অ্যান্তোনিও ভিতোরিনো এক টুইট বার্তায় বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার
তিন সপ্তাহ হয়নি এখনো। এর মধ্যেই প্রায় ৩০ লাখ মানুষের শিকড় উপড়ে ফেলা হয়েছে। ৩০ লাখ
নারী, শিশু ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষ তাদের ভালোবাসার প্রিয় মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যত দ্রুত সম্ভব এ যুদ্ধের সমাপ্তি করতে হবে।’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক
সংস্থা ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার জানিয়েছে, তাদের হিসাবমতে, এখন পর্যন্ত ২৯ লাখ ৭০ হাজার
মানুষ প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁদের অর্ধেকের বেশি (১৮ লাখ) পোল্যান্ডে
আশ্রয় নিয়েছেন।
জেমস এলডার
গত দুই সপ্তাহ এসব শরণার্থীর সঙ্গে কাটিয়েছেন। তিনি সেখানে আশ্রয় নেওয়া শিশুদের সঙ্গে
কথা বলেন। শিশুরা তাঁকে জানায়, ওদের বাবা ওদের বুঝিয়েছেন, তিনি ওদের পেছনেই রয়েছেন।
জেমস এলডার
আরও বলেন, তিনি অনেক শিশুকে দেখেছেন যারা কান্না করছে না। যা মোটেও স্বাভাবিক বিষয়
নয়। কারণ, কান্না না করা এসব শিশু ট্রমার মধ্যে চলে গেছে।
এলডার জানান,
তাঁর কাছে ইউক্রেনের প্রবীণ শিশু বিশেষজ্ঞরা হৃদয়বিদারক দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। এসব
চিকিৎসক যুদ্ধাহত বিপুলসংখ্যক শিশুকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন
রঙের স্টিকারের ব্যবহার করছেন এসব শিশুকে চিকিৎসা দিতে। একটি শিশুর শরীরে সবুজ রঙের
স্টিকার লাগানো মানে শিশুটি আহত কিন্তু তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া যাবে।
চিকিৎসকেরা
এলডারকে বলেন, ‘কোনো শিশুর শরীরে কালো রঙের স্টিকার লাগানো মানে শিশুটি বেঁচে আছে। কিন্তু
সাড়া দিচ্ছে না। কারণ, শিশুটিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম আমাদের
কাছে নেই এবং এই শিশু মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়বে।’