দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে শুরু হলো
ক্যানসার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম। সোমবার দুপুরে ১১ জন শিক্ষার্থীকে এই
টিকা দেওয়া হয়। ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কোটির বেশি শিশুকে এই টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ৯৫ ভাগ কিশোরীকে এই টিকা দিতে চায় সরকার।
টিকা নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজধানীর
আজিমপুর গার্লস স্কুলের সাতজন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন, ডিপিএস
স্কুলের দুজন এবং নারায়ণগঞ্জ সরকারি স্কুলের একজন রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ
মন্ত্রী জাহিদ মালেক রাজধানীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম)
‘সারভারিক্স’ নামের হিউম্যান
পাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। মন্ত্রী বলেন, আজ
থেকে সীমিত আকারে এবং ১৫ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
নারী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। এর বাইরেও যারা আছেন তাদের জন্যও থাকবে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা
বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব
করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম।
টিকাদান ক্যাম্পেইনের প্রতিপাদ্য হলো ‘এক ডোজ এইচটিভি
টিকা নিন, জরায়ুমুখ ক্যানসার রুখে দিন।’
এ সময় সারভারিক্স ভ্যাকসিন নিয়ে প্রবন্ধ
উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) ব্যবস্থাপক
এসএম আবদুল্লাহ আল মুরাদ। তিনি বলেন, জরায়ুমুখের ক্যানসারে তিন বছরে ১৫ হাজার মা-বোন
মারা গেছে। এতদিন আমরা এই জায়গাটিতে গুরুত্ব দিতে পারিনি। তবে আজকের দিনটি আমাদের
জন্য আনন্দের, কারণ দীর্ঘদিন পর হলেও এই জরায়ু মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন
নিয়ে আসতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ‘সারভারিক্স’ ভ্যাকসিনটি ১০
থেকে ১৪ বছর বয়সী ৯০ শতাংশ কিশোরীকে নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা হলো ৯৫ শতাংশ
কিশোরীকে এই ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। আমরা তিনটি ধাপে সারাদেশে এই কার্যক্রম পরিচালনা
করব। কারণ এই ভ্যাকসিনটির স্বল্পতা আছে। পর্যায়ক্রমে পাওয়া সাপেক্ষে আমরা টিকাদান
কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এসএম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, প্রতিটি
ভায়ালে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ থাকে যা দুজন কিশোরীকে দেওয়া হবে। এটি এক ডোজের টিকা
যা মাংসপেশিতে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ১৩১টি দেশে হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস টিকা দেওয়া
হয়েছে। আর সারভারিক্স টিকাটি ২৪টি দেশে হয়েছে।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন,
দেশে ইপিআইয়ের মাধ্যমে ১২-১৩টি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তাদের কার্যক্রমের কারণেই বাংলাদেশ
ভ্যাকসিন হিরো হয়েছে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের এই টিকাদান শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন
একটি মাইলফলকে পৌঁছাল। এইচপিভি ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকরী। এই ক্যানসারে দেশে প্রতিবছর
৫ থেকে ৬ হাজার এবং বিশ্বজুড়ে তিন লাখের মতো নারী মারা যায়। এই টিকা নিলে ৯৫ ভাগ
প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি হয়। এতে শুধু জীবন রক্ষা হবে না, নারীদের সক্ষমতা বাড়বে।
তারপরও স্ত্রিনিং চালিয়ে যেতে হবে।