পরিবেশের উপকারী পাখি ‘শকুন’ হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, অসুস্থ পশুকে সুস্থ করণের জন্য বিভিন্ন ধরনের এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করার পরও কোন পশুর মৃত্যু হলে উক্ত মৃত পশুর মাংস ভক্ষণ করায় উক্ত এলোপ্যাথিক ওষুধের বিষক্রিয়ার ফলে শকুনের মৃত্যু এবং বংশবিস্তার কমে আসছে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের বড় বড় গাছপালা নিধন হওয়ায় শকুনের আশ্রয়ের অভাবে শকুনের বিলুপ্ত হওয়ার বড় একটা কারণ হিসেবেও তারা দেখছেন।
শকুন নামটি বার বার নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আজকের প্রজন্ম শকুনের নাম শুনেছেন কিন্তু ‘শকুন’ দেখতে পেয়েছে কয়জন? ‘শকুন’ আকারে চিল পাখি অপেক্ষা বড়, শরীর কালচে বাদামী, চুল বিহীন মাথা ও গলা। বড় বড় কালো ঠোট এবং স্বাভাবিকের অপেক্ষা বড় পা এমনই হলো শকুনের শারীরিক গঠন বৈশিষ্ট। শকুন কেবল পরিবেশ বান্ধব পাখি নয়, অত্যন্ত তীক্ষ দূরদৃষ্টি ও ঘ্রাণ সম্পন্ন, আকাশময় উড়তে থাকাবস্থায় অসুস্থ পশুপাখি বা মৃত প্রাণির সন্ধান তারা জানতে পারে।
কোন অসুস্থ পশুপাখি বা মৃত প্রাণি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার মৃত্যু হলে শকুন তাদের খাদ্য হিসেবে দল বেধে তা ভক্ষণ করতে শুরু করে। কথায় বলে শকুন যতই উপরে উঠুক বা থাকুক না কেন তার চোখ থাকে নিচের দিকে। চিরাচারিত এই প্রবাদটি যথাযথ কারণ তার খাদ্য ও নিচেই থাকে বিধায় শকুন এর চোখ থাকে নিচের দিকে। অত্যন্ত বড় আকারের ডানা সম্পন্ন প্রাণি শকুন অতি দ্রুততার সাথে চলাচল করতে পারে। শকুন মৃত পশুপাখির মাংস খেয়ে থাকে আর তাই শকুনকে কেউ কেউ অস্বাভাবিক পাখি বা নোংড়া প্রাণি হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো শকুন মৃত পশুপাখি বা মৃত প্রাণি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে বলেই পরিবেশের জন্য তা সুফলদায়ক।
আমাদের দেশের বর্তমান চিত্র ভিন্ন, বিলুপ্তির পথে এই শকুন পাখি, প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে প্রকৃতিকে বিশেষ উপকারকারী এই পাখি কেবল মরা মৃত পশুপাখির মাংস খেয়ে থাকে তা নয়, সব ধরনের পঁচা দুর্গন্ধ যুক্ত মাংস এবং অস্বাস্থ্যকর জীবাণু সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকে। শকুনই একমাত্র যারা জনজীবনকে সুন্দর স্বাভাবিক পরিবেশের নিশ্চয়তা দেয় এবং মানুষকে সুস্থ রাখে, অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় শকুন হারিয়ে প্রকৃতি থেকে।
সাতক্ষীরায় গত কয়েক বছর পূর্বেও দেখা গেছে নদীর ধারে, ফাঁকা বিলে, জঙ্গলে মৃত পশুপাখি বা মৃত প্রাণি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার মাংস অবলিলায় খাচ্ছে শকুন। আবার ঝাকে ঝাকে পাখা মেলে উড়তে থাকতো, কিন্তু সেই দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
সাধারণত বড় বড় গাছপালা ও জঙ্গল নিধন হওয়ায় এলাকায় শকুনের বাসা বাধার সুযোগ নেই। এ কারণে শকুন প্রকৃতি থেকে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। কিন্তু কেন এই পরিবেশ রক্ষাকারী প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, অসুস্থ পশুকে সুস্থ করণের জন্য বিভিন্ন ধরনের এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করার পরও কোন পশুর মৃত্যু হলে উক্ত মৃত পশুর মাংস ভক্ষণ করায় উক্ত এলোপ্যাথিক ওষুধের বিষক্রিয়ার ফলে শকুনের মৃত্যু এবং বংশবিস্তার কমে আসছে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের বড় বড় গাছপালা নিধন হওয়ায় শকুনের আশ্রয়ের অভাবে শকুনের বিলুপ্ত হওয়ার বড় একটা কারণ হিসেবেও তারা দেখছেন।
জানাগেছে, দেশের দক্ষিণ পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে নদী খালের সমৃদ্ধ বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও সিলেট অঞ্চলে অসংখ্য শকুনের দল দেখা যেত। কিন্তু এখন এসব অঞ্চলে শকুন দেখা যায় না বলেই চলে। তবে নয়নাভিরাম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে শকুনের বিস্তার দেখা যায়। এছাড়া মৌলভীবাজার ও সিলেট এলাকায় শকুন দেখা যায়।
সাতক্ষীরার গ্রামাঞ্চলে এখন আর শকুন রেদখা যায় না। নদীর কিনারে, বিলে, খালধারে, ভাগাড়ে মরা পশুপাখি বা মৃত প্রাণি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার মৃত ফেলে আসলে শকুন আর আসে না। যে কারণে উক্ত মরা পশুপাখি বা মৃত প্রাণি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার মৃতদেহ হতে দুর্গন্ধ ছড়ায়, একারণে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে, নানান ধরনের জীবানু ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশবিদদের অভিমত, অতি উপকারি এই প্রাণির বিলুপ্ত রোধ করতে হবে। সরকারিভাবে শকুন প্রজনন ও আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শকুনের অস্তিত্ব এবং অবস্থান না থাকলে প্রকৃতির হিংস্রতায় পড়তে হবে।