পাবনার ঈশ্বরদীতে এক দিকে যেমন কৃষি জমি বিনষ্ট অন্যদিকে বৃক্ষ নিধন করে পরিবেশর ভারসাম্য নষ্ট করছে অবৈধ ইট ভাটা মালিকগণ।
সরকারীভাবে ইট উৎপাদনের জন্য জ্বালানী হিসেবে কয়লা ব্যবহারের নির্দেশ থাকলেও সরকারের অসাধু কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের যোগসাজোসে ইট ভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এই কাঠ সংগ্রহে প্রতিদিন শতাধিক কাঠবোঝাই গাড়ি যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটাগুলোতে এবং কৃষি জমি খনন করেও আনা হচ্ছে ইট তৈরীর মাটি। স্থানীয় অনেক ব্যক্তিরই অভিযোগ ইট ভাটায় মাটি ও কাঠ আনতে নষ্ট করা হচ্ছে রাস্তাঘাট এবং বিভিন্ন মানুষের ফসলী জমি। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় ঠিকভাবে চলতে পারেনা এই গাড়ি বহরের জন্য।
সূত্র মতে, ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট ইট ভাটার সংখ্যা ৬৮ টি। তবে এবছর এখন পর্যন্ত সচল করা হয়েছে মোট ৫২টি। বাকি ভাটাগুলো সচলের জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে মালিকপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা, বাবুলচারা, বিলকেদা, কামালপুরসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এসব ইট ভাটা। পদ্মা নদীর তীর ঘেষে গড়ে ওঠা এসমস্ত ইট ভাটাগুলোতো সরকারের বেধে দেয়া নিয়ম মানার কোন বালাই নাই। সরকারী নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে পাহাড়সম গাছের তাজা খড়ির স্তুপ সাজিয়ে রেখেছে ইট ভাটায়। সেখানে বড় এবং মোটা গাছগুলোকে ছেটে ব্যবহার উপযোগী করতে প্রায় প্রতিটি ইট ভাটার আঙ্গিনায় বসানো হয়েছে স’মিল। এমন অভিযোগও উঠেছে ইট ভাটা মালিক সমিতি কর্তৃক প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই চলছে এসব ইটভাটা।
ইট তৈরীর কারিগর মোঃ মিনারুল বলেন, আমাদের কাজ শুধু ইট তৈরী করা। সেটা কি দিয়ে পোড়ানো হবে সেটা আমরা কিভাবে বলব? বাকিটা তো আপনারাই দেখছেন।
ইট পোড়ানো কারিগর (মিস্ত্রি) মোঃ মজিবার হোসেন বলেন, কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে প্রতিটি ইটের দাম হবে দ্বিগুণ তাই কয়লার পাশাপাশি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কেননা ইট যদি মানুষের ক্রয় সাধ্যের মধ্যে না থাকে তাহালে মানুষ ইট কেনা বন্ধ করে দিবে। সেই সাথে ভাটাগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।
বিলকেদা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ হজিবর আলী অভিযোগ করে বলেন, বছরের এই দিনগুলো আসলে আমরা এলাকাবাসী চরম দূর্ভোগে পরি। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা গাড়ি চলার কারণে রাস্তায় সারাদিনই ধুলা/বালি উড়তে থাকে। এতে আমাদের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হয়ে পরে। সাথে কৃষি জমিও বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কর্তনকৃত গাছ বহনকারী কুত্তা গাড়ীর ড্রাইভার মোঃ ইমরান বলেন, আমরা ভাটা থেকে ইট বোঝাই করে দিনে যথাস্থানে পৌঁছায় সেখানে আগে থেকে জমিয়ে রাখা গাছ দিনভর গাড়িতে লোড করে রাতে আবার ভাটার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এতে প্রসাশনসহ সাধারণ মানুষের নজর এড়িয়ে সহজেই ইট ভাটায় গাছ গুলোকে পৌঁছে দিতে পারি।
তবে ইটভাটাগুলোর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের একটাই কথা, এই সময় প্রসাশন আসেন দু একটি ভাটার চিমনি ভাঙচুর করে চলে যান। সাংবাদিকরা আসে ছবি তোলে, আবার চলে যায়। আর ভাটার মালিকরা বস্তাভর্তি টাকা দিয়ে প্রসাশনের মুখে কুলুপ মেরে পরিবেশ ধ্বংশের লাইসেন্স নিয়ে কৃষি জমিতে মাটি কেটে, গ্রাম গঞ্জের গাছপালা কেটে পরিবেশের বারোটা বাজাতে ব্যস্ত থাকে। তবে সবাই আসার পরেও পরিবেশ ধ্বংশের এই মহাযজ্ঞ বন্ধ হয়না কেন সে উত্তর তারা জানতে চান স্থানীয় প্রসাশনের কাছে। তবে অনেকেই মনে করেন জেলা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই চলে এ অবৈধ ভাটা।
এ ব্যাপারে ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয় হোসেনের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে বার বার কল দেওয়া হলেও কল ধরেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হক এর মুঠোফেনে বার বার কল দিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, শুনেছি ঈশ্বরদীর ইট ভাটাগুলোতে তাজা গাছ পোড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবগত করেছি। তিনি বলেন উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ বা টাকা দেয়া কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা অচিরেই পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করবো।