নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেওয়া এক সন্তানের মা রোকসানা বেগমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রেমিক প্রধান আসামি মো. মনির হোসেনসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।
শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট তানভির মাহমুদ পাশা সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে এতথ্য জানান। এর আগে শুক্রবার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার ভবেরচর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-১১ অধিনায়ক জানান, সোনারগাঁয়ের রোকসানা বেগম (৩২) তার স্বামীর সাথে ৭/৮ বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে তিনি একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছোট ভাই মো. এনামুল হকের (২৫) বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। জীবিকার জন্য সাদিপুর ইউনিয়নের বাইশটেকী গ্রামের দেওয়ান বাড়িতে জামদানী শাড়ি তৈরির কাজ করতেন রোকসানা। সেই সুবাদে ওই বাড়ির মৃত রাজু মিয়ার ছেলে বিবাহিত মনির হোসেনের (৪৫) সঙ্গে রোকসানা বেগমের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে রোকসানা বিয়ের ব্যাপারে মনির হোসেনকে চাপ দিলে মনির তার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দেন। গত ১৫ জুলাই মনিরের মেয়ের বিয়ে হলে রোকসানা তিন দিন পর বিয়ের দাবিতে মনিরের বাড়িতে অবস্থান নেন।
এসময় মনিরের বাড়ির লোকজন তাকে একাধিকবার বাড়ির বাইরে টেনে হিঁচড়ে বের করে দেয়। রোকসানা তার অবস্থানে অনড় থাকায় মনির হোসেন, তার ভাই গোলজার, খোকন ওরফে খোকা, ছেলে রানা, মনিরের স্ত্রীসহ অন্যান্য আসামিরা তাকে লোহার পাইপ, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে মনির হোসেন ও তার সহযোগীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রোকসানাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর সংবাদ জানার পর মনির ও তার সহযোগীরা লাশ রেখেই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
অধিনায়ক আরও জানান, এই ঘটনায় রোকসানার ছোট ভাই মো. এনামুল হক বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়, যা এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুলাই রাত আনুমানিক ১০ টায় অভিযানে মামলার প্রধান আসামি মো. মনির হোসেন এবং হত্যায় জড়িত আসামি মো. আমির হোসেনকে (৪০) মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার ভবেরচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এ হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য আসামিদের তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।