কোনও অভিনেতার
চরিত্র যদি তাঁর স্টারডমের চেয়ে বড় হয়ে যায়, তবে তা বিড়ম্বনার কারণ। তবে এটা শুধু
দক্ষিণী সুপারস্টার প্রভাসের একার সমস্যা নয়। যে প্রযোজকেরা প্রভাসের স্টারডমের উপরে
বাজি ধরছেন, তাঁদের মতে ‘লার্জার-দ্যান-লাইফ’ চরিত্রে প্রভাসকে না দেখালে, ছবি চলবে
না। ‘কনটেন্ট ইজ় দ্য
কিং’-এর বদলে তাঁদের কাছে ‘প্রভাস ইজ় দ্য
কিং!
রাধাকৃষ্ণ কুমার
পরিচালিত, প্রভাস এবং পূজা হেগড়ে অভিনীত ‘রাধে শ্যাম’ ছবির ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত সব ক’টি কথা মিলে যায়। প্রভাসের স্টারডমের সঙ্গে
ছবিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ক্যানভাস, অসামান্য ভিএফএক্সের কাজ এবং অযৌক্তিক একটি গল্প।
ছবির গল্প বলার ধাঁচ এবং প্রেক্ষাপটে দক্ষিণী ছবির ধারা ভীষণ ভাবে স্পষ্ট।
সত্তরের দশকের
ইটালিতে থাকে বিক্রমাদিত্য (প্রভাস) যে, এক ডাকসাইটে হস্তরেখা বিশারদ। তার গণনা কখনও
ভুল হয়নি, এক বারেই হাত দেখে সে যা বলার বলে দেয়! ভারত তাকে ছাড়তে হয়েছে, কারণ দেশের
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাত দেখে সে ইমার্জেন্সির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল!
ইটালিতে বিক্রমের আলাপ হয় প্রেরণার (পূজা হেগড়ে) সঙ্গে। পেশায় সে চিকিৎসক। সম্পর্কে
বিক্রম সিরিয়াস হতে চায় না, কারণ তার হাতে প্রেমের রেখা নাকি নেই। এর পরেও কি লাভ স্টোরির
ভবিষ্যৎ বদলাতে পারবে বিক্রমাদিত্য এবং প্রেরণা?
প্রশ্নটির উত্তর
প্রভাসের অনুরাগী না হয়েও দেওয়া যায়। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে কনটেন্টধর্মী ছবি চলছে।
কিন্তু মসালা ছবিরও বাজার রয়েছে। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে নিখাদ প্রেমের ছবি এখন এমনিতেই
কম হয়। সেখানে প্রভাসের টানে এই গল্প দেখতে কত জন উৎসাহী হবেন, সংশয় রয়েছে।
তবে সিনেমা হলে
দর্শক টানার জন্য প্রযোজকেরা আয়োজনের কমতি রাখেননি! অমিতাভ বচ্চনের ভয়েসওভার দিয়ে ছবি
শুরু হয়। প্রভাসের এন্ট্রি দৃশ্যের কিছুক্ষণ পরেই তাঁকে দেখা যায় গোটা ইউরোপ ঘুরে বেড়াতে।
অনেকটা ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায়
দিওয়ানি’ ছবির রণবীর কপূরের মতো। পুরো ছবিতে পূজা
সুন্দর সুন্দর স্কার্ট, ড্রেস পরেছেন। তার সঙ্গে পারফেক্ট উইঙ্গড আইলাইনার! ছবির কিছু
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন ভাগ্যশ্রী (বিক্রমাদিত্যের মা), কুণাল রায় কপূর (বিক্রমাদিত্যের
বন্ধু), শচীন খেড়েকর (প্রেরণার কাকা), প্রবীণ অভিনেত্রী বীণা বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রেরণার
ঠাকুমা)। তবে পরিচিত মুখেদের পর্দায় উপস্থিতি ছবিতে বাড়তি কিছু যোগ করেনি।
চরিত্রায়নের দিক
থেকে শুধু নয়, অভিনয়েও প্রভাস ‘বাহুবলী’র গ্র্যাঞ্জার কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কয়েকটি
দৃশ্যে তাঁর অভিনয়ে অমরেন্দ্র বাহুবলীর ছায়া ফুটে ওঠে। আবেগের দৃশ্যে পূজা এখনও দড়
নন। জুটিটা দেখতে সুন্দর, কিন্তু ছাপ ফেলতে পারল কি? রবিন্দরের প্রোডাকশন ডিজ়াইনিং
অবশ্য প্রশংসার দাবি রাখে।
এই ছবির ভবিষ্যৎ যেমনই হোক, প্রভাসের জন্য তা স্বস্তির কারণ হবে না। কারণ তাঁর সব ছবিতেই বাহুবলী প্রসঙ্গ উঠবে, যদি না তিনি সেই ছায়া থেকে বেরোতে পারেন!